সুরাইয়া ইয়াসমিন: দিনটা ছিলো ৪ জুন,২০২২। আগের রাতে বান্ধবী শ্যামলী বললো, "চল ঘুরতে যাই"। কোথায় যাওয়া যায় এই প্লান করতে করতে শেষমেষ আমাদের যাওয়া হয় না কোথাও। তাই এবার কোনো প্লান ছাড়াই আমরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। শ্যামলী বললো "চল বের হই, বাসে উঠে ঠিক করবো কোথায় যাওয়া যায়।"
গন্তব্য ক্যাম্পাস, সেখান থেকে কুষ্টিয়া ;তারপর যেদিকে ইচ্ছে যাবো। যেই ভাবনা সেই কাজ। ভোরে রিকতার ফোনে ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলাম। বাসায় থাকার কারনে আমার পৌঁছাতে দেরি হলো। যথারীতি ক্যাম্পাস বাস মিস করলাম। শ্যামলী আর রিকতা ক্যাম্পাস বাসে আগেই পৌঁছে গিয়েছিলো চৌড়হাস মোড়,কুষ্টিয়া। পরে বন্যাও বাস মিস করাতে আলাদা বাসে চৌড়হাস এসেছিলো।
চৌড়হাস থেকে আমি, শ্যামলী, রিকতা, বন্যা আমরা ৪ জন একত্র হলাম। তারপর ৪টা টিকিট কেটে বাসে উঠে রওনা দিলাম কুমারখালির উদ্দেশ্যে। বাসস্ট্যান্ডে নেমে ভ্যান যোগে গেলাম 'সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ জাদুঘরে'। জায়গাটা বেশ সুন্দর ও মনোরম লেগেছিলো আমাদের কাছে।
ছাপার যন্ত্র সহ সেই সময়ের নানা যন্ত্রাদি ও ফলক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে;আছে কাঙ্গাল হরিনাথের লেখা কবিতা সহ আরো বেশ কিছু লেখনী। এছাড়াও জাদুঘরে লাইব্রেরি ছিলো, সেখানে অনেক বইয়ের কালেকশন লক্ষ্য করি আমরা।
বেলা ১ টার দিকে জাদুঘর থেকে বের হয়ে ভ্যানযোগে রওনা হই, গন্তব্য ছিলো পদ্মার পাড় ও শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। ভ্যানে ওঠার সময় শ্যামলী ভ্যানওয়ালা মামাকে বললো "মামা পথের মধ্যে সুন্দর জায়গা দেখলে একটু দাঁড়াবেন আমরা ছবি তুলবো" মামাও বেশ অমায়িক মানুষ মনে হলো। পথিমধ্যে দেখা মিললো কাঠপর বাড়ির। পাঁচতালা বিশিষ্ট কাঠের বাড়ি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে দশর্নার্থীরা এসে থাকেন। চারজনের ছবি তুলে দিলো ভ্যানওয়ালা মামা।
এবার পৌঁছালাম পদ্মার পাড়ে। প্রচন্ড রোদ। মনে হলো জগতে একমাত্র আমরা চারজন নদীপ্রেমী। নদীর পানিতে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে বসে থাকলাম। ইচ্ছা ছিলো নৌকায় ঘোরার, তবে হাতে সময় ছিলো কম। কম সময়ের মধ্যে আমাদের আরো কিছু স্পট দেখতে হবে। পরে সেই একই ভ্যানে চলে আসলাম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে। মনোরম পরিবেশ আর সবুজ গাছগাছালির সমারোহ।
টিকিট কাউন্টারে জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে প্রবেশ করলাম কুঠিবাড়ি। ইতোমধ্যে আমরা বেশ ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত এবং ক্ষুধার্ত। টিউবওয়েল থেকে মুখ হাত ধুয়ে, পানি খেয়ে, বসলাম রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত পুকুর পাড়ে। যে পুকুরের পাড়ে বসে তিনি রচনা করেছেন তার বিখ্যাত সব কবিতা, উপন্যাস।
পুকুর পাড়ে ঝিরিঝিরি বাতাসে মনে আলাদা প্রশান্তি জাগালো। আমি ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বের করতেই ওরা বলে উঠলো "বক্সে কি এনেছিস? এতক্ষণ কেনো বলিসনি?" আসলে বক্সে ছিলো নুডলস্, যেটা আমি ঘুম থেকে উঠেই রান্না করেছিলাম, যার জন্য আমার বাস মিস হয়ে যায়।
সবাই নুডলস খেয়ে কিছুটা ক্ষুধা নিবারন করে নিলাম। তারপর পুরো জায়গাটা ঘুরেঘুরে দেখে নিলাম। আর ছবি তুলতে ভুল হলো না কারো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত আম গাছ আছে বেশ কিছু, সেখান থেকে আমও কিনে খেলাম আমরা।
কুঠিবাড়িতে মূলত রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত নানা ধরনের জিনিস আমরা দেখতে পাই,সাথে রবীন্দ্রনাথের কিছু লেখা এবং ছবিও দেওয়ালে দেখতে পাই। রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত পালঙ্ক, নৌকা সহ বিভিন্ন জিনিস আছে সংরক্ষিত আছে কুঠিবাড়িতে।
দুপুর পর ইজিবাইক যোগে আমরা পৌঁছায় গড়াই ব্রিজে। গড়াই নদীর উপর অবস্থিত রেল ব্রিজে যাই আমরা। ব্রিজের উপর উঠার অনুভূতি ছিলো বেশ রোমাঞ্চকর,একটু একটু ভয়ও লাগছিলো। কেউ ই ব্রিজের উপর হাঁটতে পারিনি, শ্যামলী অনেকটা দুর হেঁটে গিয়েছিলো। বড় লাট লর্ড মেয়ো ছিলেন ব্রিটিশ শাসনামলের একজন সুযোগ্য শাসনকর্তা।তাঁর সময়ে নির্মিত হয় এই গড়াই রেলব্রিজ।ব্রিজটিতে লংগেজ এবং সর্টগেজ আছে,তবে শুধুমাত্র লংগেজ ট্রেনই চলাচল করে থাকে।
একইদিনে পদ্মা আর গড়াই দুইটা নদীর পাড়ে ঘুরলাম। রেলব্রিজ থেকে নেমে চলে আসি পাশের সাধারণ যানচলাচলের ব্রিজে, সেখান থেকে অটোযোগে কুষ্টিয়া শহরের দিকে। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। গেলাম একটি রেস্টুরেন্টে, সেখানে খেয়ে যেনো সারাদিনের ক্ষুধা মিটালাম 'পেট ঠান্ডা তো জগৎ ঠান্ডা '। তবে আরো ঘুরাঘুরি করার ইচ্ছা থাকলেও প্রচন্ড ক্লান্ত আর সময় স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। লেগুনাযোগে রওনা হই যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
চাইলে আপনারাও কাজে লাগাতে পারেন এই গরমের ছুটিটা। দূরে কোথাও না গিয়ে ধারেকাছে কোথাও ঘুরে আসুন না বন্ধুদের সাথে, বেশ ভালো সময় কাটবে আশা করি। এরকম পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া বের হওয়ার অনুভূতি আসলেই ভিন্ন।
লেখক: সুরাইয়া ইয়াসমিন
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও
সদস্য বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইবি শাখা।
ঢাকা, ১১ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: