Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

যবিপ্রবি ক্যাম্পাস থেকে বলছি...

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৫:০১

নিজস্ব ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে এক অঢেল আবেগ এবং ভালোবাসার স্থান। প্রতিটি ক্যাম্পাস জুড়ে থাকে কতো শত শত ভালোবাসা আর স্মৃতিকথা। পড়াশোনা, আড্ডা, গান-বাজনা, বন্ধুদের সাথে হাসি ঠাট্টা, বন্ধুরা মিলে দুষ্টামি আর খুনসুটি, এরকম কত শত স্মৃতি বিজড়িত মুহূর্তের সাক্ষী হয় প্রতিদিন এই ক্যাম্পাস। দিনের বেলা যেনো ব্যস্ততার এক জলজ্যান্ত প্রতীক।

সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হওয়া, ল্যাবে উপস্থিত হওয়া, লিফটের জন্য লাইন দিয়ে পরে সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে নয়তলা ভবনে ক্লাসে যাওয়া, দিনশেষে বাড়ি ফেরার জন্য যবিপ্রবির লাল-নীল বাসের পিছন ছোটাছুটি, সব মিলিয়ে খুবই ব্যস্ততার মধ্যে দিনকাটে এই প্রিয় ক্যাম্পাসে,সবার মুখেই থাকে তখন ক্লান্তির ছাপ।যেনো মনে হয় সারাদিনের এই ক্লান্তিই বুঝি আমার অর্জন। এই ব্যস্ততার মাঝেও সবার মাঝে থাকে এক বিশাল শান্তি, মুখে হাসি।

দিনশেষে যখন রাত্রি, যখন দিবস তার মুখোশ বদলে রাত্রি রূপে আগমন আনে তখন প্রিয় এই ক্যাম্পাস টাও যেন তার চিরচারিত রূপ বদলে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়। মূল ফটকের সামনে দাড়ানোর সাথে সাথেই যেনো মনে এক শিহরণ জাগে, সেই অনুভূতি ফিরে আসে যেটি প্রথম দিন ক্যাম্পাসের গেইট দিয়ে প্রবেশ করার সময় হয়েছিলো। প্রতিদিন নতুন করে প্রেমে পড়ি এই স্বপ্নের ক্যাম্পাসের। দিনের আলোতে প্রথমবার ক্যাম্পাস টি দেখে এর প্রেমে পড়েনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, তেমনি আমিও প্রথমবার তার প্রেমে পড়েছিলাম। তবে রাত্রিতে এই ক্যাম্পাস, তার সৌন্দর্য, তার নিরবতার প্রেমে পড়বে না এমন লোকও বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না।

যেন আর এক মোহময়তা, কেমন যেন এক অলৌকিক নীরবতা এই ক্যাম্পাসে, মনে হয় হুট করে এ যেন নতুন এক রুপ। এই নীরবতায় নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো হৈ-হুল্লোড়, নেই কোনো ব্যস্ততার হাতছানি, নেই কোনো আলোড়ন। শুধু আছে নীরবতা, এক অন্যরকম শান্তি ও সুখের মিশ্রণ সাথে মাঠভরা গন্ধরাজ'র মিষ্টি সুভাস, মাথার উপর ঘন কালো আকাশ আর চারিদিকে আকাশছোঁয়া স্থাপনা। এমন এক অনুভূতি সৃষ্টি হয় যেন সারাদিনের ক্লান্তি মুহূর্তে ডানা মেলে আকাশে উঠে যাবে। এই সৌন্দর্য যে দেখেনি, যে অনুভব করে নি।তাকে বলে বোঝানোর ভাষা আমার নেই। সারাদিনের ব্যস্ততা,পড়াশোনার চাপ এই অনুভূতি কয়েক মিনিটের ব্যাবধানে আপনার মনকে আবার ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করে।

সবশেষে যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে, অনুভূত অনুভূতি কেমন, তাহলে বলবো আমি যা চেয়েছিলাম, যা ভেবেছিলাম তার থেকে অনেক বেশিকিছু । সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে যখন রাতে ক্যাম্পাসে যাই,তার পরিবেশ,তার সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করতে একটুও সময় নেয় নি। বন্ধুদের সাথে মাত্র কিছুক্ষনের জন্য বসে থাকলেও যেন মনে হয়েছিলো আমি এক অন্য পৃথিবীতে বসে আছি যেই পৃথিবীতে নেই কোনো ব্যস্ততা, নেই কোনো অশান্তি, নেই কোনো কোলাহল, শুধু আছে প্রশান্তি আর আনন্দের হাতছানি।গন্ধরাজ এর মিষ্টি সুভাস ছিলো আমার চাওয়ার অনেক উপরে,যেন চারিপাশ স্বর্গের এক অনন্য উপস্থাপনা।এই কয়েক মুহুর্তেই আমি যবিপ্রবি ক্যাম্পাসের প্রেমে পড়েছি আবার প্রণয়ে পড়েছি তার সৌন্দর্যের।

একটি মুদ্রার যেমন এপিঠ ওপিঠ মিলে দুপিঠ, ঠিক এই পৃথিবীতে সব বস্তুরই ভালো এবং খারাপ দিক আছে। আমার কাছে এই প্রিয় ক্যাম্পাসের খারাপ বলে কিছুই নেই কিন্তু খারাপ লাগার বিষয় আছে। ক্যাম্পাসের ভেতর রাস্তার চারিপাশ, একাডেমিক ভবনের আশপাশে ছিলো ভয়ংকর অন্ধকার যেটাতে ভয় পেলেও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা দানকারী মামা'রা সর্বক্ষণ পাহারাতে থাকায় সেই ভয়টা কাটতে খুব বেশী একটা সময় লাগেনি। মাত্র একটি ল্যাম্পপোস্টের আলোতে শুয়ে ছিলো হয়তো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার টি, যেনে অনেক চেয়েও পারেনি তার শহীদ দের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে। রাস্তার পাশের গাছগুলোও ছিল যেন অসহায়, মনে হচ্ছিলো তারা ব্যর্থ, তারা ব্যর্থ রাতে ক্যাম্পাসকে তার সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিতে, হয়তো মন ধরেছিলো উজ্জ্বলতার অপেক্ষায়।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে থাকা রাস্তার পাশের ফুলগুলোকে যেনো মৃত, সমগ্রদিনের ব্যস্ততার পর ফুলগুলো যেন ভীষণ ক্লান্ত হয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। অভাব ছিলো হয়তো কিছু লাল-নীল আলোর, হয়তো এই ফুলগুলোকে পারতো রাত্রিতেও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশের অধিকার দিতে। রাতের অদম্য'৭১ যেন নিস্তব্ধ, যেন সেও ক্লান্তিভর এই দিনের পর একটু বিরতি চায় এই অন্ধকারের মধ্যে, মনে মনে হয়তো সেও ভাবে যে একটু উজ্জ্বলতা পেলে হয়তো এখনি আবার উঠে দাঁড়াতে পারতাম।আবার উঠে দাঁড়াতো তার গল্প বলতে, পারতো তাঁর চেতনা সবার মধ্যে জাগ্রত করতে।

সবমিলিয়ে ক্যাম্পাসের নতুন দিনগুলির অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতি বলার মতো ভাষা আমার নেই। হয়তো একদিন আবার আসবো কাঁধভরা ক্লান্তি নিয়ে একটু প্রশান্তির খোজে, সেদিন হয়তো এই ক্যাম্পাস হবে অন্যরকম, হয়তো সেদিন অল্প আলোতে হাসোজ্জ্বল থাকবে সেই ফুলগুলো, হয়তো সেদিন উজ্জ্বল অন্ধকারের মধ্যেও অদম্য-৭১ এর গল্প শুনতে পাবো, হয়তো সেদিন ক্যাম্পাসের চারিপাশের অন্ধকারটাও ভয় পাবে। যখন দিনটি আসবে তখন হয়তো এই প্রাণের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরোও কয়েক গুন বেড়ে যাবে, সেদিন নতুন রঙে ধরা দিবে এই প্রিয় ক্যাম্পাস, নতুন করে আবার ভালোবেসে ফেলবো প্রাণপ্রিয় যবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে।বারে বারে ফিরে যাবো এই সৌন্দর্যের টানে,মুগ্ধতার ঘ্রাণে। আমি সেদিনের অপেক্ষায় থাকবো...।

লেখক: বাঁধন পাল
১ম বর্ষ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
শিক্ষার্থী, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা, ১৭ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এটিএম//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ