উম্মেহানী: বিকালে নীলক্ষেতের মোড়ে এক ছোট বোনের সঙ্গে দেখা। সেদিন ছিল শনিবার। আমাকে দেখেই ও সালাম দিল । দেখি ওর হাতে বিবিএস বই । পরোক্ষণেই আমি জিজ্ঞেস করলাম বইগুলো কার জন্য কিনেছ? ও বলল, আপু আমার জন্য। তুমি না মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে! এখনি বিসিএস বই! কথা শেষ করে হলে চলে আসলাম। আর ভাবতে লাগলাম।
ইস! সরকার যদি নিশ্চিত করত যে, পড়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে জব হবেই। তাহলে সবাই MP3, প্রফেসর‘স ও ওরাকলে সময় না দিয়ে সময় দিত নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টওয়েজ গবেষণালব্ধ কোন বিষয়ে। জবের তাকীদে আমাদের চাই শুধু কোন রকম একটা সার্টিফিকেট। আমরা ডিপার্টমেন্টের কোর্স নাম্বার জানি না আবার কোর্সের নামতো দূরের কথা । উচ্চশিক্ষা থেকে আমরা সরে এসেছি যোজন যোজন দুরে। কি হবে এত কষ্ট করে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, আয়তন, রাজধানী মুখস্ত করে? জব নিশ্চিত থাকলে উচ্চশিক্ষিত সবাই যে কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা করত, আবিষ্কার করত বিভিন্ন তত্ত্ব। ছাত্র-ছাত্রীর হাতে থাকত না ওরাকল, পড়ত না MP3 ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। পড়বেই না বা কেন! পেটে ভাত যেতে হবে তো। পেট শান্তি তো, সব শান্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে শীট পড়ে পড়ে। প্রথম সারির দুই একজন শিক্ষার্থী কিছু বই দেখে শীট তৈরি করে। আর বাকিরা সেই শীট ফটোকপি করে পরীক্ষায় অংশ নেয়। এভাবেই শেষ হয়ে যায় তাদের পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবন। কখনো খুঁজেও দেখেনা কোন বই থেকে শীট তৈরি করা হয়েছে। আসলে তার রেফারেন্সগুলো ঠিক আছে কিনা। আবার শীট ফটোকপি করতে করতে এমন অবস্থা হয় যে, তাতে কিছু অক্ষরতো দূরের কথা অনেক শব্দের অস্তিত্বও পাওয়া দুষ্কর।
লাইব্রেরীগুলোতে ঢুকলেই দেখা যায় চাকরির পড়া নিয়ে সবাই ব্যস্ত। সবার সামনে জব রিলেটেড বই। অথচ যে লাইব্রেরী থেকে বের হওয়ার কথা গবেষক, দার্শনিক, উদ্যোক্তা। যারা জাতিকে নিয়ে যাওয়ার কথা অনেক উপরে অথচ তারাই এখন পরিণত হচ্ছে অন্যের দাসে।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। মেরুদন্ড না থাকলে যেমন একজন মানুষ চলতে পারে না ঠিক তেমনি মৌলিক শিক্ষা না থাকলেও কোন জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারেনা। চাকরির পড়া দিয়ে শুধু নিজেকে ভালো জায়গায় সেটেল্ড করা যায় কিন্তু মৌলিক শিক্ষা ও আদর্শিক শিক্ষা না থাকলে নিজের মহত্ব ধরে রাখা যায় না। আবার দূর্নীতি করতেও পিছপা হয় না তারা ।
আমরা তো স্বপ্ন দেখি আকাশটাকে ধরতে, অসাধ্যকে সাধন করতে, আগামীর পৃথিবীকে নিজের হাতে গড়তে। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার যদি এমন বেহাল দশাই হয় তাহলে সফলতার স্বপ্ন নিছক কল্পনাই থেকে যাবে।
লেখক,
উম্মেহানী
আবরী বিভাগ, মাস্টার্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: