আবদুল্লাহ আল মামুন: সম্প্রতি ৪৩তম প্রিলির রেজাল্ট হয়ে গেলো। এই রেজাল্টটা একদিক থেকে আমার জন্য আনন্দের ছিলো। কারণ আমার কলেজের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিডিয়েট সিনিয়র এক ভাই (২০১৬-১৭ সেশন) প্রিলিতে উত্তীর্ন হয়েছে।
এই রেজাল্টটা অন্যদিক থেকে আমার মধ্যে এক বেদনার সৃষ্টি করেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা যখন তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বিসিএস এবং চাকরির জন্য পুরাদমে প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক একই সময়ে আমার পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই-একটা বিভাগ ছাড়া ২০১৬-১৭ সেশনের ভাইয়েরা কেবল মাত্র তাদের ৩য় বর্ষের ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করলো। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সেশনের মাত্র দুই-একটা বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগগুলো অতি সম্প্রতি মাত্র তাদের ৪র্থ বর্ষের ২য় সেমিস্টার শেষ করছে, শিক্ষার্থীরা তাদের রেজাল্টের অপেক্ষায় আছে।
গত দুইদিন আগে ফাইনাল ইয়ারের এক ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম। ভাই আক্ষেপের সুরে বলছিলেন- এখনো ফাইনাল ইয়ারের ল্যাবই শেষ হয়নি, রেজাল্ট হবে কখন আর চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিবো কখন!
একই সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যসব সেশনেরও। কেউ তিন বছর পার করে কেবল ১/২ এর পরীক্ষা শেষ করেছে, কারও কারও ২/১ এর পরীক্ষা কেবল শুরু হলো। কেউ চার বছর শেষ করে ৩/১ এর পরীক্ষা দিচ্ছে হয়তো না হয় ৩/১ এর পরীক্ষা দেওয়ার অপেক্ষা করছে। দুই-একটা বিভাগ ছাড়া প্রায় সবগুলো বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই দেড় থেকে দুই বছরের একটা জট ইতোমধ্যে তৈরী হয়ে গেছে।
কয়েকদিন আগে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলছিলেন- বন্ধু আমি তো ৪৪তম বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করছি, আশা করছি ভালো কিছু হবে। আমি মনে মনে ভাবছিলাম আমি এখনো অফিশিয়ালি ২য় বর্ষই শেষ করতে পারিনি, আর ওর ৪৪তম বিসিএসের গল্প!
পাবিপ্রবির সেশনগুলোতে এই যে বিশাল গ্যাপ, এই গ্যাপের দায়ভার কে নিবে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, অনুষদ, বিভাগগুলো এই সেশনজটের দায়ভার নিবে! আমাদের পরিবারগুলো যে পরিবারের হাল ধরার জন্য আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে তা কী তারা একবারও উপলব্ধি করে? বাড়ীতে গেলেই বাবা-মা যে আমাদের জিজ্ঞেস করে আর কতদিন লাগবে শেষ করতে? আমরা কী উত্তর দিতে পারি! না পারিনা, কারণ আমাদের কাছে এর কোন সঠিক উত্তর নেই। কবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবে তার কোন সঠিক সময় এখানে থেকে ভাবতে পারছিনা আমরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ সংকট, শিক্ষক সংকট, ল্যাবে সুযোগ সুবিধার সংকট। কোন কোন বিভাগ ৪-৫ টা ব্যাচ নিয়ে ৩ জন, ৪ জন শিক্ষক নিয়ে বিভাগ চালাচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগগুলো ক্লাশ নিতে পারছেনা ঠিক করে, পরীক্ষা নিতে পারছেনা ঠিক করে। কাকে দোষ দিবো!
আমাদের শিক্ষার্থীদের বয়স শেষ হচ্ছে, সময় শেষ হচ্ছে। আমরা যে ভীষণ সংকটে দিন রাত পার করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো কী আমাদের কথা চিন্তা করে! আমাদের পরিবারগুলোর কষ্ট যে আমাদের দিনরাত তাড়িয়ে বেড়ায় সেটা কী কেউ চিন্তা করছে! অনেকেই চিন্তা করছে হয়তো কিন্তু সে সংখ্যাটা খুবই অল্প। যদি বড় অংশ চিন্তা করতো তাহলে আমাদের এত গ্যাপ তৈরী হতোনা। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিভাগগুলোর বড় একটা অংশ আমাদের নিয়ে চিন্তা করতো তাহলে আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের ভাইদেরও ৪৩তম প্রিলিতে উত্তীর্ন হওয়ার খবর শুনতাম।
দিনশেষে আমাদের সময়ের এই বড় ক্ষতির মূল্য আমাদেরই দিতে হবে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের ব্যাচমেটরা যখন আমাদের দেড় বছর-দুই বছর আগে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে তখন আমরা সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা শিক্ষার্থী। কেউ কেউ হয়তো বড় কোন কোম্পানির চাকরি নিয়ে ঘুরবে তখন কেবল চাকরি খুঁজতে বের হবো।
পাবিপ্রবির সেশন জটের সমাপ্তি ঘটুক। যারা জটে আটকা আছে তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো তাদের জন্য কিছু করবে কিনা সেটা জানিনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, অনুষদগুলো, বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের সেশন জট থেকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসুক। একই সাথে যারা আসবে আমরা চাইনা তারাও এই জটের ভুক্তভুগী হোক। তারা তাদের পরিবারের জন্য বোঝা না হয়ে দাঁড়াক। তারা তাদের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাচমেটদের মত ঠিক সময়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকরির জন্য, উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করুক। ভুক্তভুগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের এতটুকুই কামনা থাকবে।
লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন
শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: