Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

পাবলিক-প্রাইভেট-ন্যাশনালের বিবেচনায় সম্মান!

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০১৭, ১৮:৩১


ফারহান আকাশ : গ্রামের স্কুল থেকে পাশ, তারপর মফস্বলের কোন এক কলেজে আসা, এসে নিজেকে হিরো ভাবা। সেখান থেকে শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন, অত:পর নিজেকে দেশের রাজা ভাবা। এই হল এক শ্রেণি।

আরেক শ্রেণির শহরেই স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়।
আজ কথাগুলা লিখছি খুব কাছের কিছু মানুষের হাহাকার থেকে, যাদের হাহাকারের কোন যুক্তিই নেই, অথচ তারা হাহাকার করতে বাধ্য।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। খুব প্রতিযোগিতার একটি জায়গা, এখানে জীবনের চেয়ে একটা সিটের মূল্য অনেক বেশি! অথচ, কিছু মানুষের আচারণ দেখলে অবাক লাগে, এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া মানে যেন নিজে একজন মানুষ, আর যারা পায়না তারা যেন মানুষ নয়, ভিন্ন কোন গ্রহ থেকে এসেছে। একটা কথা আছে, এই ছোট্ট জীবনে অনেককে দেখলাম, অনেক কিছু দেখলাম। আচ্ছা, ৫০ সিটের বিপরীতে ২০ হাজার পরীক্ষা দিয়েছে, বাকি যে ১৯ হাজার ৯শত ৫০ জন টিকলনা, এরা সবাই কি খারাপ? মেধাশূন্য?

পাবলিকে পড়া কিছু মানুষের চিন্তাধারণা কতটা নিচের, তা তাদের আচারণে দেখা যায়। আমার এক বন্ধু এডমিশনের সময় এক ভার্সিটির এক ইউনিটে ৭০০তম হয়েছিল, সিট ছিল ২৫০ মত, তার পর্যন্ত ডাক আসেনি। কিন্তু সে এটা জানতে পেরে খুব দু:খিত হয়েছিল, যখন জানল ১২০০ সিরিয়াল একজন প্রথম দিকের সাব্জেক্ট পেয়েছে, কিভাবে? ওই যে, কোটা। আরে, ওর দাদা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। আর তার সূত্র ধরে একজনের যোগ্য সিট অপর জন নিয়ে নিল।

আপনাদেরই ভাষ্যমতে, যোগ্য। ঠিক না? যার পজিশন আগে, সেই যোগ্য না, বলুন? আর আমার সেই বন্ধু আজ ন্যাশনালে পড়ছে আর সেই কোটার ছেলে যে সিরিয়ালে (আপনাদের ভাষ্যে যোগ্যতায়) কত পিছিয়ে ছিল, সে বুক ফুলিয়ে আমার বন্ধুকে ন্যাশনালের স্টুডেন্ট বলে গালি দেয়। হ্যাঁ, আমাদের দেশে ন্যাশনালের মানুষদের এভাবেই ট্রিট করা হয়। আরও উদাহরণ চান? তবে শুনুন।

পাবলিক ভার্সিটির গ্রুপে এক ছেলে একবার পোস্ট দিয়েছিল, "ওমুক ভার্সিটির এডমিশন কবে, সিট কয়টা, প্রশ্ন কেমন হয়, কেউ জানেন ভাইয়া, জানলে হেল্প করবেন"। তো, আমি কমেন্ট করতে ঢুকে অবাক। একজন কমেন্টে তাকে সঠিক তথ্যই দিয়েছে, তার কমেন্টের রিপ্লায়ে এক সুনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রিপ্লাই দিয়েছে, যা জানো না, তা নিয়ে তথ্য না দেয়াই ভাল, ন্যাশনালের স্টুডেন্ট হয়ে পাবলিকের বিষয়ে নাক না গলানোই ভাল"।

আমি যখন এডমিশন দিয়েছিলাম, সেবার ঢাকা ভার্সিটির এক্সামে ৭৫০০ খাতা বাতিল হয়ে গিয়েছিল, কিছু কেন্দ্রে শিক্ষদের ভুলের কারণে। বড় ভাইদের জানালে তারা ভার্সিটি কতৃপক্ষকে জানায়, তারা বলে যা হবার হইসে, এখানে কিছু করার নাই, সেই ৭৫০০ এ আমিও ছিলাম, ওই ৭৫০০ এর সবাই ছিল মেধাশূন্য! অযোগ্য! অনেকেই ন্যাশনালে পড়ছে, মাথাটা নিচু করে!!! সবচেয়ে অবাক করা বিষয় প্রশ্ন ব্যবসার এ যুগে প্রশ্ন কিনে চান্স নিয়ে গলায় কত জোর? হা হা!!!

যদি মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম থাকত, তবে ৭০ শতাংশ মানুষই চান্স পেতনা। আমার এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক একবার বলেছিলেন, এই যে একটা পাবলিক ভার্সিটি, এই ভার্সিটির প্রতিটি ইট খেটে খাওয়া মানুষের টাকায় করা, আর তোমরা, তাদেরকে কি দাও? এই সুযোগ বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বে আর কোন দেশে দেয়া হয়না।

ভার্সিটিতে আস, শো অফ, ক্ষমতা, ক্ষমতার জোরে সবাইকে শাসানো ইত্যাদি। স্যার সেদিন ভুল কিছু বলেননি।

আজ দেখি খুব আন্দোলন চলছে গার্হস্থ কলেজ নিয়ে, কি অকথ্য কথা শোনাচ্ছে সবাই, কিন্তু কেউ কি জানে, ওই কলেজের মেয়েদেরই দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সেমিনারে, মন্ত্রালয় থেকে ইনস্টিউট করার আশ্বাস দেয়া হচ্ছিল।

দোষ তো এই মেয়েদের একার নয়। ফেসবুকে ঢোকা যায় না কি পরিমাণ অকথ্য ভাষায় হেও করা হচ্ছে মেয়েদের, মোস্ট জুনিয়র শিক্ষার্থীও নিজেদের বড় বড় বোনেদের নামে কত কি ব্যঙ্গমূলক লেখনি লিখছে।

এরাও ছিটকে পড়া কতজনের মধ্যে, নিয়ম-পরিহাস তাদের হয়ত উঠতে দেয়নি, তবে তারাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা 'গার্হস্থ অর্থনীতি' নামে এক ইউনিটের পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী।

আজ আমার ন্যাশনাল, বিভিন্ন ইন্সটিটিউট, আধিভুক্ত কলেজ/প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া শিক্ষার্থী বন্ধু/ছোট/বড়দের হাহাকার শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। অনেক বড়ভাই/বোনকে দেখেছি, খুব বড় প্রতিষ্ঠানে না পড়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন মানুষের কাছে, অথচ এমন এক সময় এসেছিল খুব স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে পড়া সেই বন্ধুটি জরে জন্য সেই লাঞ্ছিত বন্ধুর কোম্পানিতে সিভি জমা দিয়েছে।

নিজে মানুষ, সবাইকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে শেখ, পাবলিক-প্রাইভেট-ন্যাশনাল এর বিবেচনায় সম্মান দিতে নয়। সৃষ্টিকর্তা কাকে কোথায় নেবেন, কে জানে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাকি ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন, তাইলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন তাকে ভিসি হিসেবে মেনে নিলেন? তিনিতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিলেন না!!!

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সকলে নিশ্চয় মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ জেনেছেন। আর কিছু বলার নাই।


ফারহান আকাশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


ঢাকা, ২৩ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ