Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

রূপাকে বাঁচাতে পারলাম না, এটি আত্মহত্যা নয় হত্যা!

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০১৭, ১৭:৩৩

সেদিন একটা মেসেজ এলো ফোনে
- আপু সহজে সুইসাইড করার উপায় কি? রূপা আমার পাশের বাড়ির মেয়ে। মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। ওর ছোটবেলা কেটেছে আমার সঙ্গেই। ভীষণ মিষ্টি চুপচাপ মেয়েটির একমাত্র বন্ধু ছিলাম আমি। স্কুল থেকে ফিরেই আমাদের বাড়ি চলে আসত, সন্ধ্যা পর্যন্ত তার অদ্ভুত রকমের আড্ডা। প্রচণ্ড মিশুক মেয়েটি প্রায়ই বলত, "আপু আমার কেন একটা বড় ভাই নেই?"

কোনদিন জিজ্ঞাসা করা হয়নি ঠিক কি কারণে ও এমন বলত তবে ওর চোখে উদাসীনতা খেয়াল করতাম। হঠাৎ ওর মন খারাপ হতো কান্নাকাটি করত তখন হাজার জিজ্ঞাসার পরও ওর মুখ ফুটে কিছু বেড়তো না।

আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বাড়ি ছাড়লাম ও তখন অষ্টম শ্রেণিতের পড়ে। আমাদের বন্ধুত্বে দূরত্ব বেড়ে গেল। বাড়িতে গেলেও তেমন কথা হতো না। তবে বুঝতে পারতাম ও কেমন চুপসে গেছে। একদিন জিজ্ঞাসাও করেছিলাম, উত্তরে বলল- "আপু, মেয়ে হয়ে জন্মানো কী দোষের?" অবাক হয়ে গেলাম, বাচ্চা মেয়েটি কি বলে এসব।

আরেকটা ধাক্কা খেলাম যখন ও জিজ্ঞাসা করল- "আচ্ছা আপু, তুমি যে এতো বড় হয়েছো, এতো পড়াশোনা করেছো, তুমি কি একটা ছেলের মতো স্বাধীন?
আমি কোন উত্তর দিতে পারি না। আমার মৌনতা ওকে উত্তর দিয়ে দিয়েছিল। বলল, কি করলে আমার আর একটা ছেলের অধিকারের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না, বলতে পারো?

সেদিন আমার শিক্ষাকে ব্যর্থ মনে হচ্ছিল। দুই দুইটা সার্টিফিকেট মূল্যহীন যেটা পনের বছরের একটা মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। ওরা বাসা পাল্টানোর পর দীর্ঘ একবছর রূপার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।

সেদিন হঠাৎ ওর মেসেজটা পেয়ে মনে হল তার সঙ্গে অবশ্যই কোন অন্যায় হচ্ছে নচেৎ যে মেয়ে একদিন পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো সে মেয়ে কিনা আজ পৃথিবীকে বিদায় জানাতে চায়।

দুইদিনের বন্ধে বাড়ি গেলাম। রূপার ঠিকানা খুঁজে সোজা হাজির হলাম ওর বাড়িতে। মেয়েটার সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখলাম, আন্টি কেন জানি আমি আসাতে খুশি হননি
এমনকি রূপার সাথে একা কথা বলাতেও তার আপত্তি। আমি সেটাকে আমলে না নিয়ে চলে গেলাম রূপার রুমে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম সবকিছু। সত্যটা জানা খুব দরকার ছিল। মেয়েটাকে বাঁচানো আমার দায়িত্বের মধ্যে যেন পড়ে গেছে।

কিন্তু রূপা যা বলল তা শুনে আমি স্তব্ধ। রূপার মা-বাবা দুইজনেই চাকরিজীবী। সারাদিন বাড়িতে রূপা আর তার কলেজপড়ুয়া আপন চাচা ছাড়া কেউই থাকে না। চাচার কাছে কেটে যেত দিনের বেশীর ভাগ সময়। কিন্তু সেই চাচাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় কালসাপ হয়ে উঠল। ওর বয়স যখন দশ, তখন থেকেই জোর করিয়ে, ভয় দেখিয়ে নানা আপত্তিকর কাজ করাতো ওর চাচা। রূপার তখন এসবের মানে বোঝার বয়স হয়নি তবু একটা অস্বস্তি কাজ করতো। যখন থেকে বুঝতে শুরু করলো যে ওর চাচার আসল চেহারাটা কি তখনই মাকে খুলে বলল সে। মা সব শুনে ক্ষেপে গিয়ে দেবরের আসল রূপটা শ্বশুড়বাড়িতে মেলে ধরল, ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিল।

মা-বাবার সম্পর্কে ফাটল ধরেছে দেখে নিজেকে গুটিয়ে নিল রূপা। মাকে বলল সব ঠিক হয়ে গেছে। চাচা তাকে আর কুপ্রস্তাব দেয় না। ওর মা এসব ঘটনার জন্য রূপার খোলামেলা আচরণকেই দোষারোপ করতে লাগল।

পনের বছরের মেয়ের আচরণ কিভাবে খোলামেলা হয় আমার জানা নেই। জানা নেই ওর মানসিক+শারীরিক অত্যাচারের মলম কী। আমার মাথা কাজ করছিল না। গিয়েছিলাম রূপাকে সাহায্য করতে, কিন্তু যার মা-বাবাই এমন তাকে কিভাবে সাহায্য করা সম্ভব আমার জানা নেই। একরাশ প্রশ্ন নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে এলাম।

ব্যস্ততা আমাকে এতোটাই নিষ্ঠুর করে দিয়েছিল যে রূপা আমার চিন্তা চেতনা থেকে হারিয়ে যেতে সময় নিল না।
আজকে সকালে খবর পেলাম রূপা সুইসাইড করেছে। সুইসাইড ঠিক না, মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো কেউ জানবে না সেটা, জানবে না মেয়েটির খুনি তার নিজের মা-বাবাই।

রূপার মৃত্যু আমাকে কষ্ট দেয়নি, বরং মরে গিয়ে বড় বাঁচা বেঁচে গেছে মেয়েটি...


(বি.দ্র: এটি আমার বাস্তব জীবনের কয়েকটি অভিজ্ঞতার আদলে গড়ে উঠা একটা কাল্পনিক গল্প)


মীম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


ঢাকা, ১৮ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ