আরাফাত আবদুল্লাহ : আমার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা তাসমিয়া শান্তা নামের মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে। ভালোবাসার মানুষকে পায়নি, তাই গলায় দড়ি দিয়েছে। প্রায় সময়ই মেয়েটার প্রোফাইল পিকে একটা ছেলের ছবি ঝুলে থাকতো। ওই ছেলেটাই তার ভালোবাসার মানুষ। বিভিন্ন সময় তার আবেগ নিংড়ানো কবিতাগুলো দেখতাম আর মনে মনে হাসতাম। এতো আবেগ দেখার সময় আছে ? বুঝতে পারিনি আবেগের মূল্য গলায় দড়ি নেয়ার সমান।
ফেসবুকের কবিতা মানুষের মনের কথাও বলে। যে লিখে সেই জানে। আর কেউ জানে না।
২)
আমার ফ্রেন্ড লিস্টেই একজন সিনিয়র ভাইয়া আছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মেয়ের সাথে উনার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। রিলেশন, এনগেজমেন্ট সব কিছুই হয়েছিল। বাধ সাধলো মেয়েটার অবাধ্য আচরণ। মেয়েটা বহুগামী। একপুরুষে সে সন্তুষ্ট নয়। ভাইয়ার সাথে এনগেজমেন্ট হয়ে যাওয়ার পরেও বহু ছেলের সাথে সে সম্পর্ক তৈরি করে। এরকম মেয়েকে কখনোই বিয়ে করা যায় না। যখনই বিয়ে ভাঙার কথা উঠলো তখনই শুরু হইলো ব্ল্যাক মেইল। মেয়েটা তার হবু জামাই আর হবু শ্বশুরের নামে মামলা করে দিল নারী নির্যাতনের। বিনা কারণে কয়েকমাস জেলে থাকার পর সেই ভাইয়া মুক্ত হয়েছেন।
এই ভাইটা কিন্তু আত্মহত্যা করেননি।
দিন কয়েক আগেই খবর পেলাম তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংকের প্রবেশনারী অফিসার হিসেবে জয়েন করেছেন। জীবনের এতো উত্থান পতনের মাঝেও এগিয়ে গেছেন।
অতএব যারা আত্মহত্যা করলো তারা কি খুব ভালো কিছু করলো ?
৩)
আমাদের ইউনিভার্সিটির একটা গল্প বলি।
শুধুমাত্র ছেলে মেয়ে "জাস্ট ফ্রেন্ডের" সম্পর্ক ধরে কতোবড় অঘটন যে ঘটে যাচ্ছে সেই খবর কারো নেই। রিলেশনে থাকা একটা মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে তর্কে জড়িয়েছে এই ""জাস্ট ফ্রেন্ড "" টাইপের কিছু ছেলের জন্য।
তর্কাতর্কি থেকে শেষ পর্যন্ত ব্রেকাপ। মেয়েটা এইবার ঠিকই তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে বানিয়ে নিলো বয়ফ্রেন্ড। অন্যের প্রেমিকাকে হাতে পেয়ে সেই বেস্ট ফ্রেন্ডতো বেজায় খুশি। ইচ্ছেমতো তাকে ইউজ করতে শুরু করলো। নিয়মিতভাবে মেসে যাওয়া তাদের কাছে হয়ে গেলো ডাল ভাতের মতো। চোখের সামনেই দেখতাম তারা কটেজে গিয়ে একেবারে কর্ণারের রুমটাতে টাইম পাস করতো। একদিন মেয়েটার এক্স ফিরে এলো। হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করতেই মেয়েটা গলে যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই সে এখন তার বেস্টফ্রেন্ডকে চায় না। অজুহাত দেয়, ওদের মধ্যে যা হয়েছে সেটা শুধু একটা এক্সাইটমেন্ট। ভালোবাসা নয়। সেই ছেলেটা চল্লিশটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। পারেনি। বেঁচে গেছে। এক ইয়ার ড্রপ হয়ে গেছে। নিজের জীবনের বাজে স্মৃতি নিয়ে এখনো যে বেঁচে আছে সে।
৪)
তাসমিয়া শান্তার জীবনে এতো বড় বড় দুর্যোগ এসেছিল কিনা জানি না। হয়তোবা আসেনি। হয়তো এর থেকেও বড় বিপর্যয় এসেছিল। আমরা জানি না। নিঃসঙ্গ মানুষেরা হয় ফেসবুকের কবি, লেখক, সাহিত্যিক- কথাটা একেবারে ভুল না। কেউ ছেঁকা খেয়ে সেলেব্রেটি হয়। আবার কেউ গলায় দড়ি দিয়ে সেলেব্রেটি হয়। ভালোবাসার অর্থটাকে কে বা কারা কখন বদলে দিয়েছে আমি জানি না।
সহজ সরল পথের চিন্তা করি সব সময়। ইহদিনাস সীরাতুল মুস্তাকীম। সহজ চিন্তা ভাবনা। সহজ জীবন। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করি না ছেলে আর মেয়ে ""জাস্ট ফ্রেন্ড "" হইতে পারে। বিশ্বাস করি না লম্পটের দল একটা মেয়ের ছবিতে লাইক দিয়ে সেটাকে (?) উপকরণ হিসাবে ইউজ করে না। সহজ সরল পথে আত্মহত্যার চিন্তা আসে না। জীবন জটিল হয়ে গেলেই আত্মহত্যার চিন্তা আসে।
আরাফাত আবদুল্লাহ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ১৭ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: