আরাফাত আবদুল্লাহ : জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে একটা ছেলে কাঁদছে। ফোনের ওপাশে কোন একটা মানুষের সাথে কথা বলছে। একটু পর পর কাঁদছে। কথা বলা শেষ হওয়ার পর ধরলাম...
- কিরে কাঁদিস ক্যান ?
- ভাইয়া, আমি না ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হইসি।
- ভেরি গুড। মিষ্টি খাওয়া। কাঁদার কি হইলো?
- ভাইয়া, আমার বাবা অশিক্ষিত কৃষক। বাবা না খুব করে চাইতো আমি যেন বড় স্কুলে (ভার্সিটি) পড়ি।
- তুইতো ভার্সিটিতেই পড়ছিস। ফার্স্টও হয়েছিস। কাঁদার কি হইলো ভাই? বাবাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আয়।
- ভাইয়া, বাবা, মারা গেছেন ১ বছর আগে। উনি দেখে যেতে পারেন নি আমি ফার্স্ট হয়েছি।
আমার আলোকিত দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে গেলো মুহূর্তেই । কৃষক বাবার ছেলে ক্যাম্পাস কাঁপাচ্ছে। ছেলে তার বাবাকে পাচ্ছে না। কি মর্মান্তিক !!
একটা ছেলে গরীব পরিবার থেকে উঠে আসছে।
টিউশনি করিয়ে চলে। প্রতি মাসে টিউশনির টাকা পায় আর সেই টাকা দিয়ে নিজের মায়ের জন্য এটা সেটা কিনে কুরিয়ার করে পাঠায় দেয়। কেন এরকম করে জানেন ?
ওর অশিক্ষিত মা ইট ভেঙে রোজগার করতেন। মহিলা জানেন না বড় ডিগ্রী কাকে বলে। অনার্স কি জিনিস, মাস্টার্স কি জিনিস কিছুই জানেন না। তিনি শুধু জানেন ছেলেটাকে শিক্ষিত করতে হবে। মানুষ করতে হবে। শুধু এই কারণে নিজে খেটে খেটে ছেলেটাকে ভার্সিটিতে পড়াচ্ছেন। এমন মহিলাকে "অশিক্ষিত" বলার সাহস করে কে?
ফার্স্ট ইয়ার থেকেই একটা ছেলে সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনা করে। আপনাদের কাছে ব্যাপারটা বাহুল্য মনে হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা এমন নয়। বগুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসেছে ছেলেটা।
জীবনে কি হইতে চাও- জিজ্ঞেস করলে তোঁতার বাচ্চার মতো উত্তর দেয়। "এমন চাকরি করতে চাই যে চাকরি করলে অন্যের ছবি সত্যায়িত করা যায়"।
বোকার মতো কথা না?
ও যখন ক্যাম্পাসে ভর্তি হইতে আসে তখন ছবি সত্যায়িত করার প্রয়োজন হয়েছিল। অশিক্ষিত বাবাকে নিয়ে ছেলেটা গিয়েছিল এক ডাক্তারের কাছে। সেই ডাক্তার মুখের উপর বলে দিয়েছেন "চেনেন না এমন কারো ছবি সত্যায়িত করবেন না "।
এই ছোট্ট ঘটনাটা ছেলেটার মনে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। বাবাকে অপমানিত হতে দেখে তার ভালো লাগেনি। জীবনের লক্ষ্যটা তাই নিজেই ঠিক করে নিয়েছে।
অনেকেই বলে একটা ভালো ক্যারিয়ার হইলে অমুক মেয়েটাকে পাবো। অমুক মেয়েটাকে শো অফ করবো। কিন্তু কয়জন নিজের বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে ? আপনার মধ্যবিত্ত বাবা যে কিনা হিসাব করে প্রতিটা টাকা খরচ করে তাকে একবার নিজের প্রয়োজনের কথা বলে দেখুন। ওই মানুষটা "বে হিসেবী" হয়ে আপনার জন্য খরচ করবে।
অতএব পড়াশোনা, ক্যারিয়ার এই ব্যাপারগুলো নিজের জন্য না হলেও অন্তত বাবা-মাকে খুশি করার জন্য করা উচিত।
(গল্প : সত্য ঘটনা অবলম্বনে )
আরাফাত আবদুল্লাহ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ১৫ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: