Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ১১ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ক্যাম্পাসের বান্ধবী আধুনিক, বিয়ে হিজাবটানা ঘরোয়া মেয়ে!

প্রকাশিত: ৯ মার্চ ২০১৭, ০৫:৪৯

ফাহমিদা খান ঊর্মি : কিছুদিন আগে ডিপার্টমেন্টের ফিল্ডওয়ার্ক শেষ করে আমরা পাঁচজন সিএনজি অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের সংগৃহীত ডাটাগুলো নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরতে হবে। অনেক্ষণ অপেক্ষার পর একটি অটোরকিশা পাওয়া গেল। টুপ করেই হয়ত উঠে পড়া যেত। কিন্তু বাঁধ সাধল আমাদের লিঙ্গ।

উহু! খারাপভাবে নেবেন না মোটেই। আমরা পাঁচজনই মেয়ে ছিলাম কিনা!!! অটোরিকশার পেছনে তিনটি সিটে তিনজন, না হয় কষ্ট করে চারজন বসা গেল, কিন্তু বাকি একজন? সে চাইলেইতো আর সামনে ড্রাইভারের পাশে বসতে পারবে না। মেয়ে কিনা!

সময় স্বল্পতা আর অটোরিকশা সংকটকে মাথায় রেখে আমি ভুলে গেলাম আমার লিঙ্গ। যখনই আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসতে যাব তখনই লোকটা এমন একটা ভংগিমায় আমার দিকে তাকালো যেন আমি বেহেশত থেকে বিতাড়িত কোনো পাপী এক নারী। পাত্তা দিলাম না। যাই হোক আস্তে আস্তে আমার ৩২০ একর ক্যাম্পাসে ঢুকলাম। কিন্তু আমি ড্রাইভারের তাকানোটা যতটা না সহজভাবে নিয়েছি তারচেয়েও বেশি অবাক হয়েছি দেশের সবচেয়ে নামকরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত এবং সুশীলদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে। সবাই ভূত দেখার মতো তাকিয়ে রইল। আর পরিচিত যারা ছিল তারা যে কত টিটকিরি দিল সেসব আর নাই বলি।

একটা মেয়ে অটোরিকশার সামনে বসে যাচ্ছে! কী লজ্জা। এ যেন ঘোর কলিযুগ। এক পরিচিততো ফেসবুকে স্ট্যাটাসই দিয়ে দিল।

আরেকদিনের ঘটনা বলি। সিএনজি অটোরিকশা করে যাচ্ছি। পাশে মাঝবয়সি দাঁড়িওয়ালা এক লোক। বাবার বয়সি একজন লোক ঠিক কী কীভাবে তার পাশে বসা মেয়েটির শরীরের সাথে শরীর ঘেঁষে তার কাম চাহিদা মেটাতে আসে তাই শুধু দেখছিলাম। আবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো মেয়েকে কোনো না কোনোভাবে আপনাদের মতো সুশীলদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়, আবার আপনারাই কিনা একটা মেয়ের অটোরিকশার সামনের সিটে বসা নিয়ে আঙ্গুল তোলেন। আপনার কাছে জানতে মন চায়, পাশে বসা মেয়েটির গায়ে গা লাগিয়ে, আবেদনময়ী স্পর্শ কিংবা কাম প্রকাশ করে, খুঁচিয়ে আপনি ঠিক কতটুকো সুখ পান!

সেই আপনিই কিনা বড় বড় বুলি আওড়ান নারী দিবসে।
আপনি সুশীল সমাজের একজন। হুম আপনি এতোটাই সুশীল যে পাশ দিয়ে কোনো মেয়ে হেঁটে গেলেই আপনার (?) দিতে ইচ্ছে হয়। পাশের বন্ধুকে বলে ওঠেন -‘(?) দেখছস? এক্কেরে (?)।’

ফেসবুকে কোনো ললনার ছবি দেখাকেই আপনার চেতনা(?) দাঁড়িয়ে যায়। কমেন্ট করে বসেন -‘(?)’ ‘একরাতের...?’ ব্লা ব্লা ব্লা….

পারলে আপনি ফিতা নিয়ে আসেন আমার কোমর মাপতে, আমার শরীর মাপতে। শরীরের প্রতিটা ভাজ আপনি (?) দৃষ্টিতে অবলোকন করেন।

আমার বুকের ওড়নাটা সরে গেলে আমি বেপর্দা আপনার চোখে। কিন্তু আমাকে (?) করার বাসনায় যখন আপনি মত্ত থাকেন তখন এটা কোন অপরাধ না। কখনো যদি রাস্তায় হাঁটা অবস্থায় (?) কোনভাবে বোঝা যায়, তখনতো আর কোন কথাই নেই। তার রঙ, ব্র্যান্ড কোনো কিছুই আর বাদ যায় না।

আপনি প্রেম করেন। প্রেমিকাকে (?) পর্যন্ত নিয়ে যেতে না পারলে নাকি আপনি প্রেমিকই না। তার উপর যদি অন্তরঙ্গ মূহূর্তের ছবি আর ভিডিওগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ না করেন তাহলে কি ষোলো কলা পূর্ণ হবে? আবার আপনার আবেদনময়ী ডাকে সাড়া দিলে আপনিই ডাকেন ‘সস্তা নষ্টা (?)’।

আপনার সারাদিন কাটে সুন্দরী আধুনিক বান্ধবীদের সাথে। যাদের গায়ে অবাধেই আপনি হাত চালনা করতে পারেন। বিয়ে করার সময় কিন্তু ঠিকই খুঁজে নেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুয়া হিজাবটানা ঘরোয়া কোনো মেয়ে। তখন আপনার স্মার্ট বান্ধবীটি যার কাছ থেকে জাস্ট ফ্রেন্ডশিপের দোহাই দিয়ে আপনি তাকে চিপায় নিয়ে গেছিলেন, সেই বান্ধবীটিই তখন দুশ্চরিত্রা।

জিন্স কিংবা পশ্চিমা পোশাক পরা মেয়েটি আপনার কাছে (?)। কিন্তু রাতেরবেলা সানী লিওনের ভিডিও না দেখে আপনার ঘুমই আসেনা। স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখেও আপনি লালায়িত। হায় পুরুষ!

আমি দু:খিত। জানি ভাষাগুলো পড়তে আপনার হয়ত লজ্জা লাগছে যে একটা মেয়ে এইরকম লাজলজ্জাহীনের মত লিখে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব সত্য কথা হল, আপনিই যখন মুখ দিয়ে এসব শব্দ উচ্চারণ করেন তখন এসব দোয়া কালামের মত পবিত্র হয়ে যায়। আমার লজ্জা করে, এই আপনি/আপনাদের মুখে নারী দিবসের শুভেচ্ছা শুনতে। আমি আবারো দু:খিত। আপনাদের মত নরপশুদের সাথে নারীদিবস পালন করতে পারলাম না। আমি পশু না, আমি নারী। আমি শুধু নারীই না, আমি একজন মানুষ।

 

ফাহমিদা খান ঊর্মি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


ঢাকা, ০৮ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ