শামসুজ্জোহা বিপ্লব : বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইভা রুমে ঢোকার আগে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই ভাবে, আজতো কিছুই পারবো না, টেনশনে সবকিছু ভুলে যাচ্ছি, গুলিয়ে যাচ্ছে।
২।
ভাইভায় আবার অনেকে আত্মবিশ্বাসের কারণে বলে, আমিতো সব পারবো কিন্তু টিচারের সামনে গিয়ে গাঁধা উপাধি পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
৩।
ভাইভার সবচেয়ে কঠিন প্যারাদায়ক মুহুর্ত হলো রুমের ভেতরে একজনের ভাইভা হচ্ছে, আর আরেকজনের রুমের বাইরে ভাইভার জন্য অপেক্ষা করা, পকেটে দুইহাত ঢুকিয়ে রুমের বাইরে পাঁয়চারি করা।
৪।
ভার্সিটির বেশিরভাগ ছাত্র ভাইভার এই একটা দিন ফরমাল ড্রেসআপ করে। আর বন্ধুদের মাঝেমাঝে বলে, দোস্ত! দেখতো আমারে কেমন লাগতাছে, ফরমাল ড্রেসআপ ঠিক আছে কি না?
৫।
ভাইভা নিয়ে ভাবতে ভাবতে যখন, রাতের ঘুম হারাম। মাথার চুল উঠে যাওয়ার অবস্থা। তখন রাগে, ক্ষোভে এক পর্যায়ে গিয়ে মনে হয় ন্যাংটার না আছে বাটপারের ভয়।
৬।
ভাইভার দিন কিছুকিছু ছেলেমেয়েকে দেখা যায় নোট-খাতা নিয়ে ভাইভার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাইভা রুম থেকে কেউ বের হলেই জিজ্ঞাসা করে, দোস্ত! কি কি প্রশ্ন করছে বলতো, লিখে নেই কিন্তু সেগুলো পড়ে তেমন কোনো লাভ হয় না।
৭।
ভাইভায় কোনো প্রশ্ন না পারলে, টিচাররা যতটা লজ্জা দেয়। তার চেয়ে আমরাই প্রশ্ন না পারার কারণে নিজেনিজে অনেক বেশি লজ্জিত হয়ে যাই, দুমড়ে মুচড়ে যাই।
৮।
ভাইভায় কোনো টিচার যখন বলে, এই ছেলেকে আমার ক্লাসে দেখেছি, এই ছেলে আমার ক্লাস করেছে। তখন যে কী যে ভাললাগে, আর কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়।
৯।
ভাইভায় স্যার, ম্যাডামদের প্রশ্ন না পারলে, তৎক্ষনাৎ নিজেনিজে নতুন নতুন থিউরি আবিষ্কার করা, উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা। শতাব্দীর সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা বলে স্যারেরা মনে করেন।
১০।
ভাইভায় এক্সটারনাল যখন বাঁশ দেওয়ার চেষ্টা করে। নিজের টিচার যখন বলেন, ছেলেরা অনেক কিছু শিখে ফেলেছে, সহজ জিনিস আর মনে থাকে না, কঠিন জিনিস মনে রাখে। তখন একটু বেশিই ভাললাগে।
১১।
ভাইভা রুমে ঢোকার পর ছাত্রছাত্রীরা নার্ভাসনেসের কারণে জানা জিনিসিটাও খুব সহজে ভুল করে আসে। এমনকি যে জিনিসটা সজ্ঞানে কখনো ভুল হবার কথাই নয়।
১২।
ভার্সিটিতে ভাইভার দিনগুলোতেও কিছুকিছু ছেলেকে দেখা যায়। উস্কোখুস্কো চুল, যেমন খুশি তেমন দাঁড়ি, পায়ের নিচে আলতো করে ছেঁড়া জিন্স, অনেকদিন ধোঁয়া হয়নি এমন একটা শার্ট পরে ভাইভা দিতে চলে গেছে।
১৩।
ভাইভা দিয়ে এসে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই ভাবে, কী দিয়ে এলাম? ইজ্জত যাওয়ার মতো আর তো কিছু বাকি নাই। সবকিছু মনেহয় একেবারে লুন্ঠিত হয়ে গেলো।
১৪।
ভার্সিটিতে ভাইভা যেমনই হোক। সেদিন মেয়েরা সুন্দর করে সেঁজেগুঁজে আর ছেলেরা ফরমাল ড্রেসআপ করে ছবি তুলে মেমোরি লোড করা পবিত্র দায়িত্ব বলে মনেকরে।
১৫।
ভাইভায় সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ভাইভা ভালো হোক আর খারাপ হোক, বন্ধুরা বাইরে বের হয়ে হাসিমুখ করে বলে, দোস্ত! ভাইভা ফাটিয়ে দিয়েছি।
শামসুজ্জোহা বিপ্লব
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: