Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

টিউশনির বেতন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের হাহাকার!

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বার ২০১৬, ১৭:০২


আরাফাত আবদুল্লাহ : ছাত্রের বাসায় ঢোকার আগে ঠিকঠাক মতো নিজের চুলটা ঠিক করে নিলো রফিক। আজকে টিউশনির বেতন দেবে। টিউশনির টাকাটা দিয়ে রফিক নিজের বাবাকে কেনে দেবে একটা মোটা চাদর। আর মাকে কেনে দেবে একটা দামী শাল।

তার গ্রামে অনেক শীত পড়েছে। এই মাসে ৩ টা টিউশনি থেকে ১৬ হাজার টাকা পাবে সে। টাকার একটা অংশ দিয়ে বাবা মা, আর ভাই বোনকে কিছু গিফট কেনে দেবে।
নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান রফিক ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। টিউশনি করে পেট চালায়। আবার পরিবারও চালায়। গত মাসেই বাবাকে বলে রেখেছে, এই মাসের টাকাটা পেয়েই জিনিসপত্র কিনে পাঠিয়ে দেবে গ্রামে। বেতনের সময়ে তাই আনন্দটা আর ধরে না।

ঠিক করে রেখেছে, বেতনটা পেয়েই চলে যাবে মার্কেটে। সেখান থেকে যা কেনার সেগুলো কিনে পাঠিয়ে দেবে গ্রামের বাড়ি। নিজের টাকায় বাপ মাকে উপহার দিতে পারা কম কথা নয়।

এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে লিফটে করে চার তলা উঠে এসেছে বলতে পারবে না রফিক। দরজার দিকে তাকিয়েই থমকে গেলো ছেলেটা। দরজাটা তালা মারা। এসময়তো কোথাও যাওয়ার কথা নয় !! তাহলে বাসার সবাই কোথায়?

ফোন করা হলে ছাত্র জানাল, তার বড় বোন হঠাৎ করে আমেরিকা থেকে চলে এসেছে। পরিবারের সবাই তার সাথে দেখা করতে গেছে। আগামী কয়েকদিনে আসা সম্ভব নয়। রফিক দমে গেলো। কিছু বলল না। তবে বিরক্ত লাগলো। বেতনটা দিয়ে গেলে হতো না ? মাসের হিসাবতো সব সময় করে !! বেতনের হিসাবে এতো গড় মিল কেন ?

মন খারাপ করে নিচে নেমে এলো রফিক। ছুটে চলল পরের টিউশনিতে। রাস্তার মাঝেই হিসাব করে নিয়েছে সামনের ২ টা টিউশনি থেকে ৬ হাজার টাকা পাবে। কেনাকাটা করতে হবে বুঝে শুনে। যেহেতু পুরো টাকাটা এখন পাচ্ছে না, অতএব হিসাব করে চলতে হবে।

দ্বিতীয় টিউশনিটা কাছেই।

সেখানে গিয়ে জানতে পারলো ছাত্রীর মা অসুস্থ । হাসপাতালে নেয়া হতে পারে। এই অবস্থায় বেতনের কথা বলাটা অমানবিক হয়ে যাবে। রফিক আর কিছু না বলে চলে এলো। মুখটা তেতো হয়ে গেছে। মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে ।

ঠিক এমন সময় একটা ফোন এলো।
নতুন যে টিউশনিটা ধরেছে, সেখান থেকেই ফোনটা এসেছে।

তারা জানিয়ে দিলো পরের মাস থেকে রফিককে আসতে হবে না। এই মাসের টাকাটা এখন দিতে পারবে না। পরের মাসের শেষে এসে যেন নিয়ে যায়।
মনটা একেবারেই দমে গেলো।

কি ভেবেই না রুম থেকে বের হয়েছিল। আর এখন কি হয়ে গেলো। বাস্তবতা অদ্ভুত। মানুষের সমস্যাগুলোও অদ্ভুত !! কিছু বলার নাই। নিজের অজান্তেই গলাটা ধরে এলো।

বাবা ফোন করেছে !!
নিশ্চয়ই জানতে চাইবে জিনিসগুলো কখন কিভাবে পাঠাবে। কান্না চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল। চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে পানি ঝরতে লাগলো।

একটা ছেলে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পায়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। স্যান্ডেলের খস খস শব্দ হচ্ছে। কেউ জানলো না ছেলেটার নাম রফিক !! পেটের দায়ে টিউশনি করায় !!



আরাফাত আবদুল্লাহ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়



ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ