আরাফাত আবদুল্লাহ : তখন আমি ঢাবির ডি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেয়েছি। ইতোমধ্যে চবি (৫৯ তম) এবং রাবিতে (৫৩১ তম) তে আমার চান্স কনফার্ম হয়েছে। ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আরেকটা ছেলের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। পরিচয় হয়েছিল চবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে। সেও দুই জায়গায় মেরিট পজিশনে চান্স করে এসেছে।
বলা ভালো ঢাবিতে কমার্স ইউনিটেও সে চান্স পেয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, ডি ইউনিটে এক্সাম দিয়ে কি করবা?
ওই ছেলের মনের মধ্যে একটা যন্ত্রণা ছিল। সেই যন্ত্রণা হচ্ছে তার এ প্লাস ছিল না। অল্পের জন্য মিস করেছে। এই যন্ত্রণা লাঘবে সারাদেশের সব জায়গায় সে চান্স করে বেড়াচ্ছে।
চবিতে এক্সাম দিতে এসে দেখেছিলাম, আমরা যখন সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছি, সে তখন বই খুলে পড়ছে।
কারণ একটাই, তার এ প্লাস ছিল না।
এটা মোটিভেশন না। এইটা কষ্টের গল্প।
ভার্সিটির রেজাল্ট খারাপ। ছেলে গিয়ে কারো সঙ্গে মিশতে পারে না। একটা সিভি লিখতে পারে না। মানুষকে রেজাল্টের কথা বলতে ভয় লাগে।
লুকিয়ে লুকিয়ে আইবিএর বই কিনেছে। বন্ধুরা দেখলে হাসবে। এই ছেলে কিনা আইবিএ পড়বে।
নিজের ক্লাস শেষে ঠিকই গিয়ে আইবিএর বই উল্টায়। ঢাকায় এলে আইবিএর ক্যাম্পাসটা ঘুরে যায়। ভয়ে ভয়ে উঁকি মারে।
কর্পোরেট জবে ঢুকলে কেমন স্যুট কোট পরবে সেটা দেখার জন্য রেমন্ডে গিয়ে উইন্ডো শপিং করে আসে।
রাতের পর রাত ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলার চেষ্টা করে। পারে না । কিছু ভুল চুক হয়। আবার সব ঠিক হয়ে যায়।
মার্কশিট টা বলে, তোর কোন জাত নাই। তুমি একটা শিট।
স্বপ্নটা বলে আমি হইলাম সবার সেরা।
এই লজ্জা অন্য জিনিস। দশজনের সামনে নিজেকে সেকেন্ড ক্লাস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর বোঝা যায় গলা দিয়ে ভাত নামে না। মুচকি হাসি দিয়ে লজ্জাটা আড়াল করা যায়। কিন্তু রাতের নির্জনে চোখের পানি আটকানো যায় না।
এ প্লাস পায়নি বলে পাশের বাসার আন্টিটা হাল্কা খোঁচা মারতে ছাড়েনি। সিজিপিএ কম বলে ভার্সিটির মহান শিক্ষকটি সবার সামনে লজ্জা দিতে কুন্ঠাবোধ করেননি।
কতো দিন গেছে চারটা ফাস্ট ক্লাস ছিল না বলে বন্ধুদের গেট টুগেদারে গিয়ে মিট করতে পারেনি।
টিউশনিতে গিয়ে মিথ্যা করে বলতে হয়, আমি অমুক ভার্সিটিতে পড়ি। অমুক সাবজেক্ট আমার। নইলে যে টিচার রাখতে চায় না।
আহারে... সব মিথ্যা মিথ্যা নয় । কিছু মিথ্যার মধ্যে নিষ্ঠুর কষ্ট লুকিয়ে থাকে ।
রাত হলে সেই কষ্ট প্রকট হয়। প্রতিদিন রাত জেগে পড়াশোনা করা মানুষগুলা সেই ব্যার্থতার দেয়ালে আঘাত করতেই এই কষ্টগুলো করে।
আপনার সাফল্যে সব থেকে বেশি কষ্ট পায় আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়া প্রেমিকাটি। আপনাকে কটাক্ষ করা শিক্ষকটি। এবং আপনাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া বন্ধুটি।
ঈশ্বর কিন্তু কারো অতীত দেখে তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেন না। চোখের নোনা জলে রাত কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত আপনার ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেয়। মানুষের সামনে পাওয়া প্রতিটা লজ্জা দেখে ঈশ্বর আপনার ভবিষ্যৎ লেখেন।
শুধু ভরসা রাখুন, উনার উপর। বাকিটা উনিই সামলে নেবেন।
ALLAH BLESS YOU
Arafat Abdullah (মধ্যরাতের অশ্বারোহী)
University Of Chittagong
ঢাকা, ২৬ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: