গোলাম মোস্তফা: কোন এক দুপুর বেলা। তুই (নাহিদ হাসান সান) এসেছিলে বন্ধুদের নিয়ে। উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আমার কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড়া। পড়ানোর মাধ্যমে এডমিশন টাইমে তুই আমার ছোটভাইয়ের মতো হয়ে গিয়েছিলি।
এরপর থেকে তুই নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিস। তোর ধৈর্য্য দেখে অবাক হয়েছি। আজ সারাদিনের ব্যস্ততার কারণে তোর খোঁজ আমি রাখতে পারিনি। তোর ওপর তাই খুব অভিমান হচ্ছে। এত ভালোবাসা আদায় করে শেষে আমাকে এতো কষ্ট দিলি।
তুই যেদিন বললি ভাই পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করছি, জানিস-সেদিন আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। তোর প্রতিটা কাজের আপডেট আমাকে জানাতি। মাঝে মাঝে ভিডিও কলে কথা হতো। সত্যিকথা কি জানিস? তোর চরিত্র আমি কখনো খারাপ কিছু দেখিনি। সম্মান করেছিস। এভাবে একেবারে আমার ক্লোজ হয়ে গিয়েছিলি। নানা হাসি তামাশাও হয়েছে। ফেসবুকের মেসেজগুলোকে এখন খুব নিথর মনে হচ্ছে।
রাকিব তোর খবরটা আমাকে জানানোর পর থেকেই মন খারাপ। সোহানও সত্যটা জানালো। সোহানকে আমি মিথ্যুক বলেছি। তারপর আমি তোকে ফোন দিলাম। তোর ফোন অফ। আমিতো কোনোদিন তোর ফোন অফ পাইনি। এখন কেন অফ। আমি বুঝে গিয়েছি। আকাশের সব কালো মেঘ এখন আমাদের।
আমাকে এতো কষ্ট দিবি আমি ভাবতে পারিনি। দিনাজপুরে যখন বন্যা হলো তখন অসহায় মানুষগুলার জন্য তোর কি দরদ আমি দেখেছি। তাই আমি ভাবতে পারিনা, তোর মতো দরদি মানুষগুলো এভাবে চলে যাবে। তোর জন্য দুচোখে পানি জমেছে। বুকের গভীরে তোর কথাগুলা বাজছে। গভীর শূণ্যতা অনুভব করছি আমি।
একটা কথা উপলব্দি করেছি, পৃথিবীর সব মানুষকে একদিন পৃথিবী ছাড়তে হবে। কেউ আগে কেউ পরে। সত্যিই একজন শিক্ষকের জীবনে একজন প্রিয় ছাত্রের চিরদিনের মতো বিদায় দেওয়া বুকে আকাশসম পাথর জমিয়ে রাখার সমান।
আমি আমার ছাত্রদের জন্য দোয়া করি তারা যেনো অনেক বড় হয়। সম্মানী হয়। বাবা-মাকে তারা যেনো সম্মান করে। আর দোয়া করি কেউ যেন নাহিদ হাসানের মতো অকালে চিরদিনের মতো পরপারে বিদায় না নেয়। নাহিদ তোকে আমি ছোট ভাইয়ের মতে ভালোবাসি। এই ভালোবাসা আজীবন। পরপারে শান্তিতে থাক এই দোয়া রইলো।
গোলাম মোস্তফা
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[বি : দ্র : রোববার ঘুমের মধ্যেই অকালে মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আইনের ছাত্র নাহিদ হাসান সানের]
ঢাকা, ২১ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: