অভি মহাজন : একজন ইকরাম ভাইকে চিনি যিনি টানা ৩ বছর একটি মেয়ের পেছনে ঘোরাঘুরি করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। মেয়ে সুন্দরী ছিল এবং প্রচুর টাকার পাগল ছিল। ভাইয়ার অবস্থা অতো ভালো ছিল না। কোনো ক্যারিয়ার ছিল না। সে সময় প্রচুর হতাশ ছিলেন তিনি। এক অবস্থায় তার মুখে আত্মহত্যা করতে যাওয়ার কথা পর্যন্ত শুনেছিলাম।
কিন্তু কি বুঝে আবার সেই মেয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন তিনি। এর বছর দুয়েক পর তিনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিনিয়র পোষ্টে থাকাকালীন অবস্থায় বিয়ে করেছেন সেই মেয়েরই এক ক্লোজ বান্ধবীকে।
যার পিছনে ঘুরেছিলেন সে তখন কোনো এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিল। বিয়ের পাত্রী ছিল লন্ডনের বিজনেস স্কুল থেকে MBA পাশ করা। উনার বিয়েতে সেই মেয়েটিও তার হাজব্যান্ড নিয়ে এসেছিল।
গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভাইয়া ঐশী আপুর কথা মনে আছে? ভাইয়া হালকা হেসে বলেছিলেন, ওর হাজব্যান্ড আমার অফিসের জুনিয়র কলিগ। পারলে খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করে এসো। আমি যেন অন্য মানুষ দেখেছিলাম সেদিন। যে মানুষটা কয়েকবছর আগে যার জন্য মরতে চেয়েছিলেন সেই মানুষের মুখে এমন আত্মপ্রত্যয় দেখে সত্যিই খুব ভালো লেগেছিল সেদিন।
অন্তু ভাই। পরিচয় অনেকদিন ধরে। একটি মফস্বলের কলেজে পড়তেন বলে আত্মীয়স্বজনরা কেউ সহজে কথা বলতে চাইতো না তার সাথে। আত্মীয়স্বজনরা উনাকে সবসময় অন্যকাঠিতে মাপতো। প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স, ডিগ্রি কোথাও চান্স পাননি। উনার এক সমবয়সী কাজিন একটি নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো বলে উনাকে এড়িয়ে চলতো। সহজে কথাবার্তা বলতে চাইতো না। এমনকি উনার সেই কাজিন উনার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পর্যন্ত এক্সসেপ্ট করেনি।
টানা দুমাস ঝুলে থাকার পর নিজ থেকেই সেই রিকুয়েস্ট তিনি ডিলেট করে দিয়েছিলেন।
নিজের জীবনের উপর প্রচুর হতাশ ছিলেন। হাজারো হতাশার মধ্যেও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিলেন বলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টার্গেট করে পড়ালেখা করেছিলেন। কোনোমতে পরেরবার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সও পেয়েছিলেন। এরপর পার্ট টাইম একটি জব করতেন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এক্সটারনাল এক্টিভিটিজে এক্টিভ থাকতেন বেশি। ভালো স্টুডেন্ট, ভালো বিতার্কিক, ভালো সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন।
ফলে সবার কাছে ভালো পরিচিত ছিলেন। এরপর একদিন উনি উনার সেই কাজিনের বিশ্ববিদ্যালয়ে যান বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে। আর উনার সেই কাজিন ছিল সেখানের প্রতিযোগী। উনার কাজিন অনেক চেষ্টা করেছিলেন উনার সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার জন্য। কিন্তু অন্তু ভাই তখন বুঝে গিয়েছিলেন আসলেই জীবন কি। দেখা করেননি উনি। চলে এসেছিলেন উনার ক্যাম্পাসে।
সব শোনার পর উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এখন আপনার সেই কাজিন কই? উনার সহজ উত্তর ছিল, আমার ৬ হাজার ৭'শ ২৫ জন ফলোয়ারের মাঝে একজন।
মিতু আমার দুই বছরের জুনিয়র। পরিচয় হয়েছিল আমার এক ছোট খালাতো বোনের মাধ্যমে। খুবই স্ট্রেট ফরোয়ার্ড একজন মেয়ে। একদিন কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বলেছিল, ভাইয়া আগামীকাল দেখা করেন আমার সাথে। কেন?
-কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আপনার সাথে।
হুট করে ছোট বোনের বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাবো। সত্যি বলতে কেমন জানি আন ইজি লাগছিল। তারপরও গিয়েছিলাম।
তার বক্তব্যে যা ছিল মোটামুটি সংক্ষিপ্ত করলে ঠিক এরকম হয়, একটা ছেলের সাথে তার রিলেশন ছিল। রিলেশনের দেড় বছরের মাথায় তাদের মধ্যে ফিজিক্যাল রিলেশন হয়। একমাসের মধ্যে তিনবার। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে তাদের মধ্যে ব্রেকআপ হয়ে যায়। এখন মিতু চাচ্ছে রিলেশন কন্টিনিউ করতে। কিন্তু ছেলেটি চাইছে না।
এসব বলতে বলতে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। জীবনের প্রতি সে প্রচুর হতাশ। বিশ্বাসের মর্যাদা পায়নি। দুঃখ ভোলার জন্য স্লিপিং পিল খায় সে। শুনে খানিকটা অবাক হয়েছিলাম।
সবকিছু শুনে তাকে বলেছিলাম, আগামীকাল আমার সাথে দেখা করো। আজ কাজ আছে আমার। কফি খেয়ে তাকে বিল দিতে দিয়ে চলে এসেছিলাম। পরদিন যাইনি। কল রিসিভ করিনি। আমাকে মেসেজ করেছিল, আমার এমন সময়ে আপনার কাছ থেকে এটা আশা করিনি।
রিপ্লাই দিইনি। এর ১৫ দিন পর তাকে কল দিয়ে বলি আমি আমার খালাতো বোনের বাসায় আছি। আসো। যদিও ছিলাম না। সে আমাকে না পেয়ে বলেছিল আপনার ছোট বোন হলেও তাহলে আপনি এটাই করতেন? লজ্জা লাগে আপনাকে বড়ভাই ভাবতে। স্ট্যাটাসও দিয়েছিল আমাকে লক্ষ্য করে।
কিছুই বলিনি। ঠিক তার একমাস পর তাকে এসএমএস দিয়ে বলেছিলাম, তোমার চিন্তার মোড়টা ঘুরিয়েছি আমি শুধু। হতাশার জায়গায় ঘৃণা এনে দিয়েছি আমি। ভালোমতো পড়ালেখা করো। জীবনে অনেক বড় হবে তুমি।
সত্যিই হয়েছে। মেডিকেলে চান্স পেয়েছে সে। বছর দুয়েকপর ডাক্তার হয়ে বের হবে। আরেকজন ডাক্তারের সহধর্মিনীও হতে চলেছে সে। এবং উড বি হাজব্যান্ডকে অতীত সম্পর্কেও জানিয়েছে। বাহ্ সত্যিই শুনে ভালো লেগেছে সেটা।
জীবনের উপর হতাশ হয়ে অনেকেই মরতে চান আবার অনেকে স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে দাঁড়ান। যারা এসব করেন তাদের বলছি, জীবনকে আরেকটু সময় দিন। জীবন আপনাকে এমন সময় এনে দেবে যা আপনি ভাবতেও পারবেন না। নিজেকে ঠিক মুভির হিরোর মতো মনে হবে আপনার। জীবনে প্রশান্তি পাবেন। নিজে উদাহরণ হবেন। হতাশাকে ভয় পাবেন না বরং হতাশাকে ভয় লাগাতে শিখুন।
এরপরও যদি কেউ বলেন আপনি হতাশ। আপনি স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে যেতে চান তবে আমি বলবো, প্লিজ, আপনি এখুনি মরে যান।
অভি মহাজন, শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ১৭ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: