Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

কোটা নিয়ে রাবি ভিসির বক্তব্য উস্কানিমূলক, সাংঘর্ষিক!

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০১৮, ১৮:৪৭

মঞ্জুরুল হোসেন : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন। তারা যৌক্তিক দাবি নিয়ে এই আন্দোলন করছেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান থেকে শুরু করে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সামনের সারিতে হয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি যৌক্তিক মনে করে তা মেনেও নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। শিক্ষার্থীরা প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতেই এখন আবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। সোমবার থেকে দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রথম থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে যা করা যায়, তাই করছেন।

শিক্ষার্থীদের ওই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যেই শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের স্কলারশিপ’ প্রদান অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এম আবদুস সোবহান একটি বক্তব্য দেন, যা নিয়ে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসির ওই বক্তব্য মানতে পারেননি।

এম আবদুস সোবহান ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-প্রতিবন্ধীদের জন্য যে কোটা ছিল, সেই কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কারা? আপনারা মুক্তিযুদ্ধের সন্তানেরা সেই আন্দোলন প্রতিরোধ করতে পারেন না?’ (সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১২ মে ২০১৮)।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির এমন বক্তব্য কার্যত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরও উস্কে দেবে। একটি পক্ষকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতেই হয়তো ভিসি এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা কখনোই কাম্য হতে পারে না। এ বক্তব্যের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যদি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বা অন্য কেউ হামলা চালায়, তাহলে এর দায় ভিসিকেই নিতে হবে।

প্রফেসর এম আবদুস সোবহান এখন দ্বিতীয়বারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন। এই দায়িত্ব ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, তিনি নিজেই ‘টাকার জন্য’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। ভিসির দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরেই তিনি স্বেচ্ছায় বিভাগ থেকে অবসরে গেছেন। তাও আবার নিয়ম ভঙ্গ করে, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যকে না জানিয়ে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একজন শিক্ষকের যে আত্মিক সম্পর্ক থাকার কথা ছিল, হয়তো তার সেটা নেই। এ জন্যই তিনি এমন বক্তব্য দিতে পেরেছেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রসঙ্গে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কেউ যখন চায় না, তখন আর কোনো কোটা থাকারই দরকার নেই। মেধার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে বারবার আন্দোলন হতে পারে, যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে। তাই যেন আর এ ধরনের দুর্ভোগের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কোটা পদ্ধতিই বাতিল।’

প্রধানমন্ত্রী ওই বক্তব্যের পর এখনো সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির নিয়ে নতুন কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা কয়েকবার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। তাই শিক্ষার্থীরা সারাদেশে আবার বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন।

কোটা সংস্কারের দাবিটিকে দেশের বেশিরভাগ মানুষ যৌক্তিক বলে মনে করেছেন। প্রধানমন্ত্রীও শিক্ষার্থীদের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছেন। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছেন। তিনি পুরো কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সরকারেরই কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করছেন।

কুষ্টিয়ার এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে, তবে এখন যে হারে আছে, সেটা পরিবর্তন হবে। মেধাবীরা যাতে বেশি সুযোগ পায়, তার ব্যবস্থা অদূর ভবিষ্যতে করা হবে।

তার এ বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেননা, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোনো ধরনের কোটা থাকবে না। আবশ্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই ফাইনাল। সরকারি চাকরিতে কোনও কোটা পদ্ধতি থাকবে না।’

তাই আগামীতে যাতে কোটা নিয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারেন, সেদিকে সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। একই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আবদুস সোবহান আরও দায়িত্বশীল এবং শিক্ষার্থী বান্ধব হবেন, এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : মঞ্জুরুল হোসেন​
সাবেক শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা, ১৪ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ