Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ক্লাস রিপ্রেজন্টেটিভের না বলা গল্প

প্রকাশিত: ১০ মে ২০১৮, ০০:২১

সোলাইমান কবির : বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পরই একটা দায়িত্ব আমার উপর বর্তায়। সেটা হল ক্লাস রিপ্রেজন্টেটিভ (সি.আর)। সেই দায়িত্ব পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের শেষ মিডটার্ম দেয়ার মাধ্যমে মোটামুটি অব্যাহতি পেয়েছি বলে ধরে নেয়া যায়। যদিও ফাইনাল পরীক্ষা আগামী ২৪ মে পর্যন্ত চলবে বলে। তাই সেদিন পর্যন্তই আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে শেষ সময়ে এসে এখানে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ইচ্ছা হল। কারণ আমি যতদূর শুনেছি, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরুটা সময় কেউ এই দায়িত্বে খুব একটা থাকেননা (সাধারণত প্রতি সেমিস্টারেই চেঞ্জ হয়)।

আসলে আমি যে ধরনের কাজ পছন্দ করি ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিল তেমনই একটা দায়িত্ব। তাই শুরুতে আমার নিজের ভাল লাগা থেকে আগ্রহ প্রকাশ। সবাই মনে করত আমি তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিক সময়ে জানাতে পারি তাই আমাকে সম্মান ও সম্মানোত্তর (পুরু সময়) কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এর লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনবিদ্যা বিভাগের ২য় ব্যাচের সি.আর হিসেবে নির্বাচিত করেছিল যা আজ আবধি চলমান।

যদিও ভাল লাগা থেকে এই দায়িত্বে আসা তথাপি কিছুদিন যাওয়ার পর ঘটল বিপত্তি। সময় অসময়ে সবাই ফোন করে ক্লাস/পরীক্ষার শিডিউল জানতে চাইত বলে একটু বিরক্ত লাগত। কাউকে কিছু বলতে পারতাম না (যেহেতু দায়িত্ব) তাই হাসিমুখে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতাম। কিন্তু মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা গ্রুপ খুললাম যেখানে আমাদের ক্লাসের সকল তথ্য-হালনাগাদ দেয়া হত। বলা বাহুল্য সেই সময়ে আমাদের ৬৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মিতহারে ফেইসবুক ব্যবহার করত মাত্র ১০-১২ জন। তাই গ্রুপের মাধ্যমে তথ্য প্রদান প্রথম দিকে চ্যালেঞ্জিং ছিল। বাধ্য হয়ে সবাইকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহারে উৎসাহিত করা শুরু করলাম এবং যাদের আইডি নেই তাদের অনেককে নিজেই আইডি খুলে দিয়েছিলাম।

এভাবেই কেটে গেল ৬ বছর। কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি বেশ কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি যা বলার প্র‍য়াস চালাচ্ছি।

প্রথমত, স্যার এবং আমার সহপাঠীদের মধ্যে আন্ত:যোগাযোগ রক্ষা করা যার একটু হেরফের হলেই বড় ধরনের সমস্যা ছিল। আমার পুরু সময়ের ১ দিন মাত্র এমন হয়েছিল যে রাত ১২ টার দিকে আমি ক্লাসের তথ্য দিয়েছিলাম। তার একটি কারণ ছিল আমি কোন কারণে সেদিন বাইরে ছিলাম এবং ফোনে চার্জ ছিল না। তাই সঠিক সময়ে তথ্য জানাতে পারিনি। যদিও আমি দেরিতে খবর জানানোর জন্য কারণ সহ দু:খ প্রকাশ করেছিলাম তবু আমাকে যথেষ্ট কথা সহ্য করতে হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, আমাকে (হাতে গুনা কয়েকজন বাদে) সবাই নিজেদের বেতনভুক্ত কর্মচারী মনে করত।

তৃতীয়ত, সবার সব ধরনের সমস্যা শুনতে হত এবং তার কার্যকর সমাধান দিতে হত যা অনেক কষ্টকর ছিল। যদি কোন কারণে আমার সাড়া দিতে দেরি হত তখনই বলা হত আমি নাকি ভাব নেই!

চতুর্থত, একেক জনের সমস্যার সমাধান দিতে গিয়ে আমার নিজের জন্য কোন সময় পেতাম না। কারণ সবাই আলাদা আলাদাভাবে তাদের কথা কিংবা প্রশ্ন করত কিন্তু আমার একার পক্ষেই সব শুনতে এবং সমাধান দিতে হত।

পঞ্চমত, সবার ক্লাস/পরীক্ষা নিশ্চিত করে আমার ক্লাস অথবা পরীক্ষার কথা চিন্তা করতে হত। কোথায় ক্লাস অথবা পরীক্ষা হবে সেটা ঠিক করা, প্রতিদিন মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এর ব্যবস্থা করা, ক্লাসের শিট ফটোকপি করে মূল কপি স্যারকে ফেরত দেয়া ইত্যাদি প্রতিদিনকার কাজ ছিল। সবচেয়ে খারাপ লাগত তখনি যখন সবাই ক্লাস করে চলে যেত আর আমাকে সেই প্রজেক্টর গুছিয়ে অফিস রুমে দিয়ে আসতে হত (একা একা)। আর সারাদিনের ক্লান্তিকর ক্লাস শেষে সবাই যেখানে আরাম করত আমাকে সেখানে শিটগুলো ফিরিয়ে দিতে আবার স্যারের কাছে যেতে হত।

ষষ্টত, প্রায় সময়ই আমাকে সহপাঠী দর বিপদে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হত। কারো কোন দাবি/সমস্যা হোক সেটা একক কিংবা দলীয় তাতে আমার উপস্থাপন করতে হত এবং শিক্ষক মহোদয় আমার উপরই তার প্রভাব ফেলতেন (আমার রেজাল্ট আরো ভাল হতে পারত এই কারণটি না থাকলে)।

সপ্তমত, সবাই আমার কাছ থেকে সংবাদ আশা করত কিন্তু সংবাদটা কিংবা আমাকে কখনো পছন্দ করত না। বিষয়টা এমন, আমরা সিনেমায় ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি খলনায়কদের বিপরীত চরিত্র যার দরুণ বাস্তব জীবনেও ভাবতাম তারা খারাপ, যদিও বাস্তব জীবনে উনারা যথেষ্ট ভাল। তেমনি আমার কাছ থেকে বারবার এমন সংবাদ পেতে পেতে আমাকেও খল নায়কদের মত খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হত। শিক্ষকদের কাছেও বারবার আমাকেই যেতে হত বলে উনারাও হয়তো মনে মনে বিরক্ত হতেন। কিন্তু সবগুলো কাজ আমাকে করতে হত সকলের স্বার্থেই।

অষ্টমত, যেকোন অবস্থাতেই আমার কাজ চালিয়ে যেতে হত। মাঝখানে ২ বার ফোন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তখন অন্যজনের ফোন দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতাম।

নবম, নিজের ব্যক্তিগত ফোন কল করতে পারি আর না পারি স্যারদের ক্লাস/পরীক্ষার ব্যাপারে কল দেয়ার জন্য ফোনে ব্যালেন্স রাখতেই হত। বিগত ৬ বছরে এর পরিমাণ কত হয়ছে তা আমার জানা নেই।

দশম যে অভিজ্ঞতাটা আমার হয়েছে তা হল: "যার সবাই বন্ধু আসলে তার কোন বন্ধুই নাই!"

এটাই ছিল একজন সি.আরের আত্মকাহিনী। তবে আমি আসলে মন থেকে চাইতাম বলেই এই কাজগুলো করতাম। আর এর মাধ্যমে সহপাঠী ও শিক্ষক মহোদয় সকলের সাথেই একটা ভাল যোগাযোগ ছিল যা আমি উপভোগ করতাম। তাই পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার পর এই দায়িত্বটাকে খুব মনে পরবে। আর মনে পরবে সেই মুখগুলো।

সোলাইমান কবির, শিক্ষার্থী
লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনবিদ্যা বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা, ০৯ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ