সানজিদা রহমান : মেয়ে এখন বিয়ে করতে চায় না, নিজের পায়ে দাড়াতে চায়। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, যে মেয়েটি এ জাতীয় কথা বলে, সে নির্ঘাৎ সমবয়সী কোন ছেলের সাথে প্রেম করে। ‘পড়ালেখা শেষ করবো’, ‘নিজের পায়ে দাড়াবো’ এ টাইপের কথা বলে, তাদের বেশিরভাগ চায় বিয়েটাকে পিছিয়ে দিতে। কারণ তার সময়বয়সী প্রেমিক ছেলেটা এখনও লেখাপড়া করছে। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি নেবে, এরপর চাকরি পেয়ে ওই মেয়েটিকে বিয়ে করবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, তার পছন্দের ছেলেটি যদি তখনই বিয়ে করতে সমর্থ হতো, তবে নিশ্চয়ই ওই মেয়েটি “নিজের পায়ে দাড়াবো”, “পড়ালেখা শেষ করবো”- এ টাইপের মুখরোচক বাক্য ঝাড়তো না।
আসলে সৃষ্টিগতভাবে একজন পুরুষ যতটা বিয়ের জন্য আগ্রহী থাকে, একজন নারী তার থেকে বেশি আগ্রহী। কিন্তু স্বভাবগত কারণে পুরুষ তার বিষয়টি যতটা সহজে প্রকাশ করতে পারে, নারী সেটা পারে না।
একটু ভালোভাবে খেয়াল করবেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকারিভাবে যেসব বিজ্ঞাপন চালু হয়েছে, তার সবগুলো হলো অভিনয়। বাস্তবিক দৃশ্যে কখনই বাল্যবিয়ে বন্ধ দেখানো হয় না। একটা বিয়ে বন্ধ করার পর ওই মেয়েটা কতটুকু কষ্ট পায় সেটা ফিল্ডে না গেলে বোঝা সম্ভব না।
বিজ্ঞাপনগুলোতে দেখায়, “একটা মেয়ে বিয়ে বন্ধ করার পর স্কুলের মাঠে গিয়ে দৌড়াচ্ছে, আহ কি আনন্দ!” বাস্তবিক অর্থে এ ধরনের বিজ্ঞাপনগুলো একদম হাস্যকর। কারণ একজন নারী বিয়ের পর যে বিশেষ আনন্দ উপভোগ করে, সেটা নিশ্চয়ই মাঠে দৌড়িয়ে পাওয়া যায় না। তাই বিয়ের আনন্দ বাদ দিয়ে কেউ মাঠে দৌড়ের আনন্দ উপভোগ করছে, এটা বিশ্বাস করা যায় না।
এটা ঠিক, একটা মেয়ে অন্যের বাসায় বউ হলে গেলে তাকে কিছু সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। এটা ৩০ বছরের মেয়েও বিয়ে করলে হবে, ১২ বছরের মেয়েও বিয়ে করলে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ভালোও হতে পারে, এটার সাথে বয়সের কোন সম্পর্ক নাই। বরং আজকাল যারা অধিক বয়সে বিয়ে করে তাদের মধ্যে ডিভোর্সের হার বাড়ছে, যা আগে কম বয়সীদের ক্ষেত্রে দেখা যেতো না।
বিয়ের বয়স বাড়তে থাকলে সমাজে যে সমস্যাটা প্রকট হচ্ছে সেটা হলো নিঃসন্তান দম্পত্তি। কয়েকদিন আগে মাদারীপুর জেলায় এক পাগলীর সন্তান হয়েছিল। এ খবরে কয়েকশ’ পরিবার সেই বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এ দ্বারা বোঝা যায়, সমাজে নিঃসন্তান পরিবারের সংখ্যা কিভাবে হু হু করে বাড়ছে, একটা পাগলির জারজ বাচ্চা হইছে, সেটাও নিতেও তারা দ্বিধা করছে না। সন্তানহীনতার পেছনে অবশ্যই দুইটি বিশেষ কারণ থাকতে পারে। বয়স বাড়লে যেমন সন্তান নেয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। অন্যদিকে কমবয়সে বিয়ে না করে মেয়েরা প্রেম করে বয়ফ্রেন্ডের দ্বারা প্রেগনেন্ট হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই গোপনে অ্যাবোরেশন করায়। একবার অ্যাবোরেশন করালে পরবর্তী গর্ভধারণের হার হ্রাস পায়। বর্তমানে বিভিন্ন অলি-গড়ি গড়ে ওঠা কথিত মাতৃসদন বা ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ নারী অ্যাবোরেশন করাচ্ছে, যাদের অধিকাংশ অবিবাহিত তরুণী।
আমার কথা হলো- বাল্যবিয়ে বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু সমাজে বাল্যবিয়ের দরকার আছে। অনেকের বাল্যবিয়ের দরকার হতে পারে।
বিদেশী ইহুদীবাদীদের প্ল্যানে সরকার ও এনজিওগুলো বাল্যবিয়েতে বাধা দিচ্ছে, এটা বাংলাদেশের মানুষকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে- ওরা ভালাকিছু বলে প্রচার করলেই সেটা বিশ্বাস করা যাবে না, ওদের মিষ্টির মধ্যেও বিষ আছে। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার সাথে বাল্যবিয়ে ওতঃপ্রতভাবে জড়িত, এটা হাজার বছরের সংস্কৃতি। এই বাল্যবিয়েতে হাত দিলে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। দেশে ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফী, যৌন হয়রানি, মানসিক অসুস্থতা, পতিতাবৃত্তি, সন্তানহীনতা, জারজ সন্তান, অ্যাবোরেশন, বহুগামিতা, পরকীয়া, ডির্ভোস, সন্তান স্ট্যাবলিশ হওয়ার আগে বাবা-মা মারা যাওয়া এরকম নানান সমস্যা দেখা দেবে, যা আমাদের সমাজকে থাকার অযোগ্য করে তুলবে। বাল্যবিবাহ সমাজ ব্যবস্থার একটা উপাদান। এই উপাদান ধ্বংস করার মানে পুরো সমাজ ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট করে, সমাজকে বিশৃঙ্খল করা। তাই অবিলম্বে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ বাতিল করা হোক।
লেখক : সানজিদা রহমান
শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ০৭ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: