Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জুনিয়র লাইফটা মিস করি!

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০১৮, ০৭:৫০

বিন ইয়ামিন সুফী : বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে ভালো সময়টা হচ্ছে লেভেল ১ কিংবা জুনিয়র থাকার সময়টা! জুনিয়র থাকাকালে চাইলেই যা ইচ্ছা তাই করা যায়। মুক্ত পাখির মত চঞ্চল থাকা যায়। কোন কিছু করতে গেলে সাতপাঁচ ভাবতে হয় না। যা ইচ্ছে তাই করা যায়। কারণ জুনিয়র থাকে সবার আদরের মাঝে!

যা ইচ্ছে তাই করলেও 'জুনিয়র' বলে ছাড় পাওয়া যায়। জীবনটা অনেক ভালো লাগতে শুরু করে। কারণ তখনো দায়িত্ব কাঁধে আসে না। আড্ডাবাজি - হাসি ঠাট্টা করে সময়টা ভালোই কেটে যায়। তখন মনে হতো, যাক ভালোইতো চলছে। কিন্ত এর চেয়ে ভালো সময়টা যে আর আসবে তা তখনো বুঝতে পারাটা হয়ে ওঠে না!

হঠ্যাৎ সেখানে কালের অমোঘ নিয়মে নতুন এক অতিথি আসার সময় হয়ে যায়। নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিতে হয় কিন্ত তখন নিজের মাঝে প্রথম একটু সিনিয়র হওয়ার উচ্ছ্বাসে আমরা ভুলে যাই কি ফেলে এলাম!

ধীরে ধীরে অনুভব হতে থাকে দায়িত্বশীলতার কিছুটা ছোঁয়া। সেই প্রথমের মত আর থাকা হয় না। দায়িত্ব বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে আর সেই সাথে জুনিয়র জীবনের অধিকারগুলো বিলুপ্ত হতে থাকে!

যতটা সময় বাড়তে থাকে ততই সেই মুক্ত, চঞ্চল, উল্লাসের জীবনটা সংকুচিত হতে থাকে। আরো কিছুটা সময় পর, একটা কাজ করার আগে কয়েকবার ভাবতে হয়। কারণ ততদিনে দায়িত্ববোধ আর ভারত্ব মিলে আইকন হওয়ার জায়গাটা তৈরি করে দেয়। তাই চাইলেও আর সেই জুনিয়র লাইফের মত হই-হুল্লোড় করে বেড়ানো, মুক্ত পাখির মত সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।

কারণ তখন অনেক দায়িত্ব। লেভেল ৩ কিংবা থার্ড ইয়ারে নিজের দায়িত্বশীলতা আর ব্যক্তিত্ববোধ নিয়ে ভারত্বের পরিচয় দিতে হয়। কারণ সামনেই যে আমার দায়িত্ব নেয়ার সময় হয়ে যায়!

থার্ড ইয়ারে ক্যারিয়ার ভাবনাটা ব্যাপকভাবে ভাবাতে শুরু করে। ফলে আবার নতুন একটা দায়িত্ব বেড়ে যায় যেটা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মুখ্য বিষয়। ভাবুক হওয়াটা শুরু হয়ে যায় থার্ড ইয়ারের মাঝামাঝিতে যা ক্রমশ বাড়তেই থাকে খুব দ্রুতগতিতে!

ফাইনাল ইয়ারে এসে দায়িত্ববান হওয়ার উদাহরণ হতে হয়। অনার্স শেষের পথে এই ভাবনাটা এসে যায় ফাইনাল ইয়ারের শুরুতেই। সাথে ক্যারিয়ার, স্বপ্নপূরন আর পরিবারের ভাবনাটা গুরুতরভাবে প্রভাব ফেলে। সবাই ততদিনে নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে-গুটিয়ে নিয়ে পরিপক্ব একজন মানুষ হওয়ার উদাহরণ হতে হয়।

দায়িত্ব আরো বাড়তে থাকে। কিন্তু ততদিনে যে অমূল্য, সোনালি আর প্রাণবন্ত সেই জুনিয়র থাকার আনন্দটা থাকে না। কারণ চাইলেও তখন অনেক কিছু করা, বলা, শোনা যায় না। দায়িত্বের বোঝাটা এতটাই ভারী হয়ে যায় যে, চাইলেই অকপটে মন খুলে কথা বলা হয় না। পরিবেশ - পরিস্থিতি সব বদলে যায় পুরোটাই!

একসময়ের সেই তরতাজা জুনিয়র লাইফের কথাগুলো কেবল দীর্ঘশ্বাসের জন্ম দেয়। পৃথিবীটা ততদিনে রঙিন থেকে কিছুটা মেঘলা হয়ে যায়। কিন্ত দুনিয়ার নিয়মে সেই জুনিয়র হিসেবে নতুন অতিথি আসাটা থামে না।

দূর থেকে তাদের দেখে নিজের জুনিয়র লাইফটার কথা মনে পড়ে আর অমূল্য এই সময়টা আর কখনোই আসবে না ভেবে আফসোস হয়। ইচ্ছে করে কিন্তু উপায় থাকে না।

তখন বিশ্বাস হয়, জুনিয়র লাইফের প্রকৃত মূল্য। তাই বারংবার বলা হয়, আগেই ভালো ছিলাম। আসলেই কিন্তু তাই!

সমস্যাটা জুনিয়র থাকতে না পারায় নয়। সমস্যাটা তৈরি করে দায়িত্বের জেলখানা। যেখানে অসহায় বন্দি হয়ে সব কষ্ট মানিয়ে নেয়াটা শিখতে হয়। দায়িত্বের বেড়াজালে আটকা পড়ে যায় সেই মধুর, সোনালী স্মৃতিগুলো। টং দোকানে সেই আড্ডাটা আজো চলে, কিন্তু সেই প্রথমের মত জমে না। সেখানে কেবল আফসোস জন্ম নেয়! কেন যে এত জলদি বড় হয়ে গেলাম!

আসলেই বড় হচ্ছি, সাথে হারিয়ে যাচ্ছে সেই সীমাহীন স্বাধীনতা! আর বাড়ছে ফেলে আসা দিনের কথাগুলোর চিৎকার... দূর থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছি। আর নিজেকে যান্ত্রিক করে নিচ্ছি ধীরে ধীরে।

তবুও বাগানে নতুন কুঁড়িদের দেখে নিজের কথাগুলো ভেবে শান্তনা দেয়া যায়, আগেই ভালো ছিলাম!

[ লেখাটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে লেখা, তাই সবার সাথে নাও মিলতে পারে। কারণ সবাই আমার মত হেয়ালী না। তবুও সবসময়ে আমার মত কিছু হেয়ালী পাবলিক থাকে। সেই জায়গা থেকে লেখা কথাগুলো। এর বাইরেও অনেক গল্প আছে যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ]

বিন ইয়ামিন সুফী
শিক্ষার্থী, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা, ১৬ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ