Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

"দেখবেন সমাধান আপনার হাতেই"

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০১৮, ০৪:৩২

কাজী সায়েমুজ্জামান: ফুটপাতের যে ছবিটা দেখছেন, এটা ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলের পশ্চিম পাশের ফুটপাতের ছবি। অাজকে দুপুরে তুলেছি। অনেকে দেখেছেন ঢাকার ফুটপাতে টাইলস বসানো হয়েছে। এর একপাশে হলুদ টাইলস। কখনো কি ভেবেছেন এই হলুদ টাইলস কেন? হয়ত ভাবছেন সৌন্দর্যের জন্য৷ অাসলে তা নয়।

এই ফুটপাত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বান্ধব। একটু খেয়াল করলে দেখবেন এই হলুদ টাইলসে সোজা স্ট্রাইপ অাছে। একটু উচ্চ একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সহজেই পা ফেলে সোজা বরাবর হেটে যেতে পারবে। অাবার ফুটপাত যেখানে ঢালু হয়েছে, সেখানে একটা টাইলসে ছয়টি গোলাকার বৃত্ত। পা ফেললে সহজেই বুঝা যায় এখানে ফুটপাত নেমে গেছে।

চলার পথ করতে গিয়ে অামরা প্রতিবন্ধীদের কথা ভেবেছি৷ জানেন, প্রতিদিন যখন এই ফুটপাত দেখি গর্বে বুকটা ফুলে উঠে৷ ঢাকা সিটির অনেক বদনাম। তবে অামাদের ফুটপাত এখন প্রতিবন্ধীবান্ধব। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ। বলার প্রয়োজন নেই কার মাথা থেকে এমন অাইডিয়া অাসতে পারে৷ প্রয়াত মেয়র অানিসুল হকের মাথা থেকেই হয়ত এসেছে।

দেখেছেন, একজন শিক্ষিত মার্জিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তি দায়িত্ব পেলে কি করতে পারে! এখন দেশের অন্য শহরের ফুটপাতগুলো হোক এমন প্রতিবন্ধীবান্ধব। জনপ্রতিনিধিদের কাছে এই প্রত্যাশা করবো। কারণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সারাদেশেই অাছেন।

অবাক হয়ে যাবেন, দেশের মোট প্রতিবন্ধী মানুষের অন্তত ২০ শতাংশই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সেই হিসেবে দেশে কমপক্ষে ত্রিশ লাখ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে এ সংখ্যা দেড় কোটির কম নয়। প্রতি বছর পাঁচ লাখের মতো মানুষ নিজের অজান্তেই অন্ধত্বের অসহায় শিকার হন। উন্নয়ন চান৷ কিন্তু এত সংখ্যক মানুষকে ভুলে গেলে উন্নয়ন হয়না। সবাইকে ভাবতে হবে। সবার সুবিধার কথা ভাবনাটাই উন্নয়ন।

ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলের পশ্চিম পাশের ফুটপাতের ছবি

অামি অাইডিয়া নিয়ে কাজ করি। নতুন কোন অাইডিয়া দেখলে ছবি তুলি। সরকারি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের দেখাই। সিঙ্গাপুরের উদ্ভাবন দেখেছি৷ দেখেছি ভারতের উদ্ভাবন গুলো। অামি গ্রামে গঞ্জে যাই। মানুষের উদ্ভাবন দেখি৷ ছবি তুলি। কাজকে সহজ করতে এখন সবাই বুদ্ধি খাটায়। প্রযুক্তি লাগলে তারা সেটাও ব্যবহার করে৷ তবে সব ধরণের উদ্ভাবনে প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার হয়না। অামি বিদেশের না দেশের সাধারণ মানুষের অারো কয়েকটা অাইডিয়া শেয়ার করবো।

গত ২ ও ৩ মার্চ ঝিনাইদহে গিয়েছিলাম৷ দেখলাম অনেক জায়গায় মাটির কলসে পানি রাখা হচ্ছে৷ কিন্তু কলসগুলো একটু ভিন্ন। যেটা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন৷ প্রতিটি মাটির কলসে লাগানো হয়েছে ট্যাপ। অার কলসটা একটু উপরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যস। অনেক সমস্যার সমাধান। মাটির কলস থেকে ঠান্ডা পানি ট্যাপ থেকে সহজেই গ্লাসে ঢেলে খেতে পারবেন। মাটির কলস থেকে পানি ঢেলে খেতে যে কত সমস্যা তা ভুক্তভোগী ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নেবেন।

অামি নিজেও পানি খেতে গিয়ে মাটির কলস ভেঙ্গেছি অনেকবার। বিশেষ করে যখন পানি কলসের নিচের দিকে থাকে তখন কলস হাতে নিয়ে পানি ঢালতে হয়। কলস থেকে গ্লাসে পানি নেয়া কষ্টসাধ্য। প্রথমে জগে পানি ঢালতে হবে। তারপর জগ থেকে গ্লাসে। একগ্লাস পানি এত কষ্ট করে খুব পিপাসা না লাগলে কেউই খেতে চাইবেন না।

এবার দেখলেন সহজ সমাধান। এই রকম কয়েকটা কলস একটা স্কুলের সামনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। প্লাস্টিকের ফিল্টারের চেয়ে এটা অনেক ভালো। কারণ মাটির কলসে পানি ঠান্ডা থাকে। এবার অাপনারা যারা স্কুলের শিক্ষক রয়েছেন অামার ফেসবুকের ফ্রেন্ড লিস্টে, অাইডিয়াটা অাপনার স্কুলে প্রয়োগ করতে পারেন।

অামি অাগেই বলেছি, এ লেখায় দেশীয় অাইডিয়া বলবো। এবার একটু ভিন্ন ধরণের অাইডিয়া শুনুন। হাসবেন না কিন্তু৷ অামরা গ্রামে যারা বড় হয়েছি, তারা কারো বাড়ি থেকে কিছু চুরি করে খাইনি এমন ফেরেশতা হাতে গোনা। যারা এমনটা করেন নি, জীবনে কিছু করতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ৷ তাহলে কি কি চুরির তালিকায় ছিল। রস, ডাব, মুরগি। তালিকায় প্রথমে যার নাম থাকবে তাহলো- খেজুর রস৷ অামরা গ্রামের খবর রাখিনা।

কয়েকদিন অাগে অামার বাবা ফোন করে বললেন, অামাদের বাড়ির সামনে স্কুলের ভবনে কিছু তরুন সারা রাত গান বাজিয়েছে। অার রাতে অামাদের গাছের ডাব সব সাবাড় করে দিয়েছে। অামি যেন থানার ওসিকে বলে দেই৷ অামার ছোট বেলার কথা মনে পড়লো। চুরিতো অামিও করেছি৷ দলবেধেঁ। বললাম, চুরি করে খেলে গাছের ফলন বাড়ে। কি অার বলবো। এজন্য তো থানা পুলিশ করা যায়না।

যাই হোক, এক বাড়ির উঠানে কয়েকটা খেজুর গাছ। গাছ কাটা হলো৷ অনেক রস হয়। উঠোনের গাছের রস পুরোটাই চান মালিক। এটা দিয়ে পিঠা মিঠা খাবেন। কিন্তু সমস্যা ওই একটাই। সকালে কষ্ট করে গাছে উঠে রসের হাড়ি নামান। দেখেন রস নেই। অাগের দিন বিকালে একবার উঠে গাছ কেটেছেন।

তারপর নেমেছেন। অাবার সকালে একবার উঠেছেন একবার নেমেছেন। মোট চারবার উঠানামা। অথচ সবই জলে৷ রাতের বেলা কে যেন নিয়ে গেছে রস। অনেক দিন রসসহ হাড়ি গায়েব। এবার এ সমস্যা সমাধানে নেমে গেলেন বাড়ির লোকজন। সারারাত রস পাহারা দেবেন! তা কি করে হয়৷ কস্ট ইফেক্টিভ হবেনা। রসের জন্য রাতজাগা সম্ভব নয়। তারা একটা চমৎকার অাইডিয়া বের করেছেন।

সমাধানের ছবিটা এখানে দিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু তখন অামি ছবিটা তুলি নি। বাজার থেকে কিনে অানা হলো স্যালাইনের পাইপের মতো চিকন লম্বা পাইপ৷ একটা বিশেষ কায়দায় চুঙ্গি বানানো হলো। চুঙ্গির সাথে যুক্ত করা হলো পাইপের এক মাথা৷ অারেক মাথা ঘরের ভেতরে একটা পাত্রে৷ রস গাছ থেকে চুঙ্গি হয়ে পাইপ বেয়ে ঘরের ভেতরে রাখা পাত্রে গিয়ে জমা হচ্ছে। বুদ্ধি কি বাঙালির কম নাকি! ফলাফলটা দেখুন৷ চুরি বন্ধ।

হাতের মুঠোয় রস। রাতে কেউ কাচা রস চেখে দেখতে চাইলেতো কথাই নেই। রসের হাড়ি কিনতে হলো না। হাড়ি ধুইতে হয়৷ তিন দিন পর পর। শুকাতে হয়। এ কষ্ট থেকে মুক্তি মিললো। মুক্তি মিলেছে সকালে রস নামানোর জন্য একবার গাছে উঠতে নামতে হতো- তা থেকে৷ সমস্যায় পড়লেই কেবল তা থেকে উত্তোরণের উপায় তৈরী হয়। একটু পরে বলছি সমস্যা কেন অাশির্বাদ৷ তার অাগে অারেকটা দেশীয় অাইডিয়া শুনিয়ে যাই।

এক কৃষকের ধানক্ষেত শুকিয়ে গেছে। পানি দিতে হবে৷ তার ক্ষেতের পাশেই ছোট খাল। খালে দাড়িয়ে পানি সেচ করা সম্ভব নয়। তার কোন মটরও নেই। উপায় হচ্ছে ডোঙ্গা। তেলের টিনের মুখে ও নিচে বেত বা বাশ দিয়ে ঘুরিয়ে বাধাঁ হয়৷ তারপর চারপাশে অনেক গুলো শক্ত কাঠি দিয়ে উপরের বেতের সাথে নিচের বেতের সংযোগ করা হয়৷ ভেতরেও কাঠি দেয়া হয়৷ শক্ত করার জন্য৷ তৈরী হয়ে গেলো ডোঙ্গা।

এবার দুই পাশে মোট অাটটা বা চারটা রশি বাধাঁ হয়৷ দুপাশে দুজন রশি ধরে একবার ডোঙ্গা পানিতে ফেলে ভরে অাবার তুলে উপরে উঠিয়ে পানি ফেলতে হয়৷ ডোঙ্গা রেডি। তার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানি তুললেই চলবে।

কিন্তু পরিবারে অার কোন জনবল নেই। একটা মজুরের মূল্য সাড়ে চারশ টাকা। খরচ পোষাবেনা। কৃষক একটা উপায় বের করে ফেলেন। অপর পাশে একটা বাঁশ পুতে দিলেন। তার সাথে দড়ি বেঁধে দিলেন। ব্যস। এবার অপর পাশে দাড়িয়ে তিনি পানি তুলতে লাগলেন।
এতে ফল কি হয়েছে জানেন। পুরো একজন লোকের শ্রম সাশ্রয় হয়েছে। অাজকে অাইডিয়ার ব্যাপারে অার না।

বলেছিলাম সমস্যার কথা। অামাদের দেশে এখনো মুখস্থ বিদ্যা অাছে। পরীক্ষা অাছে। বিএ পাস, এমএ পাস সবাইকে মুখস্থ করতে হয়। তা পরীক্ষার খাতায় বমি করতে হয়। তারপর? পরের উচ্চ শিক্ষা কি জানেন? সমস্যা খোঁজা। তার সমাধান বের করা৷ এটাই গবেষণা। অামাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো মুখস্থ বিদ্যায় পরীক্ষা হয়। অথচ বিদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ভিত্তিতেই উচ্চ শিক্ষা।

এ কারণেই অামরা পিছিয়ে অাছি। উচ্চ শিক্ষা মানে সমস্যা খুঁজো। নির্ধারণ করো। তা নিয়ে রিসার্চের কাজ করো। সমাধান বের করো। বিদেশীরা নিজেদের দেশের সব সমস্যার সমাধান করে বিশাল বিশাল গবেষণা প্রকাশ করেছে। তাদের এখন সমস্যা খুজতেই গলদঘর্ম হতে হয়৷ সমস্যাই খুজে পান না। তাই গবেষণাগুলোও অাউট অব বক্স হয়। যেমন ধরুন, প্রত্যেক পুরুষ জীবনে কত টন লিপিস্টিক খায় তা এখন তাদের গবেষণার উপপাদ্য৷ এখন এদেশেও অাসেন তারা।

এত সমস্যা দেখে তাদের চোখ চিকচিক করে অানন্দে। অার অামরা সমস্যা জানি। যদি বলা হয়, অাপনার অফিস থেকে এই সেবাটা দিতে পারছেন না কেন? গড়গড় করে সমস্যা গুলো বলে যাই। কখনোই দেখি না এগুলো সমাধান কিভাবে করতে হবে। অাইডিয়া দরকার ভাই। অামরা অাসলেই সৌভাগ্যবান যে অামাদের দেশে অনেক সমস্যা অাছে। সমস্যা না থাকলে গবেষণা হয়না। উদ্ভাবন হয়না৷ অাইডিয়া তৈরী হয়না।

এবার অাপনার অাশপাশের সমস্যাকে একটু অন্যভাবে দেখুন। দেখবেন সমাধান অাপনার হাতেই।

লেখক:

কাজী সায়েমুজ্জামান

ন্যাশনাল কনসালটেন্ট
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় 

 

ঢাকা, ১০ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ