সোহেল আহমদ: এক. ছোটবেলা বড়দের মুখে শুনতাম, 'মগের মুল্লুক পেয়েছো না কি?' বাক্যটির মর্মার্থ এই কিছু দিন আগ পর্যন্ত বুঝতাম না তবে এখন আর করো কাছ থেকে শুনতেও হয় না, বুঝতেও হয় না।
প্রযুক্তির কল্যাণে ছোটবেলার মগ'দের পরিচয় পেয়ে গেছি। এই 'মগ' তারাই যারা একসময় ঢাকা পর্যন্ত দস্যুগিরির পরিপক্ক হাত বাঁড়িয়েছিলো, ভাগ্যিস মোঘলেরা তাদের জঙ্গলে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। না হয় আজ তাদের মুল্লুকেই থাকতে হতো। একসময়ের দস্যু মগ'রা আজ কেবল ধর্মীয় কারণে উগ্র জাতীয়তাবাদের চেতনায় অন্ধ হয়ে রাখাইনে বসবাসরত মুসলিমদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
দুই. মায়ানমারের ৭ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য আরাকানে উগ্র বৌদ্ধ ধর্মীয় মৌলবাদীদের মুল্লুকে সেই ১৯৭৮ সাল থেকে নিপীড়িত হয়ে আসছে মুসলিম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। জেনারেল নে উনের সামরিক জান্তা সকারের নাগরিক আইনে বিদেশী চিহ্নিত হয়ে আসা রোহিঙ্গারা ৩৪বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে নিগৃহীত, বঞ্চিত নৃ-তাত্ত্বী গোষ্ঠীর সম্প্রদায় হয়ে আজো ঠিকে আছে।
উদ্ভাস্তু হয়ে দিন কাটাচ্ছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ কতিপয় রাষ্ট্রে। যাদের নাগরিক হবার অধিকার নেই, নেই মানবাধিকারের বালাই। যে যেমন করে লাথি মারছে মরন কামড়ে সয়ে যাচ্ছে।
তিন. মায়ানমারের রাখাইনে মুসলিমদের একটি সংগঠন দীর্ঘ দিন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্টার আন্দোলন করেছিলো, সামরিক সরকারের অভিযানের মুখে চুপসে যেতে হয়েছে তাদের। সামরিক নির্যাতন উবে গেলেও পরে তাদের উপর নেমে আসে পরিকল্পিত জাতিগত বিভেদ। 'জীব হত্যা মহাপাপ' অার 'অহিংসা'র শ্লোগান করা আরাকানের আরেক সম্প্রদায় মৌলবাদী বৌদ্ধ মগে'রা ২০১২ সালে সংখ্যালঘু মুসলিমদের শুরু করে হিংসার আগুনে জ্বালানোর অভিযান।
আর এখন পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার অভিযোগ তুলে সামরিক বাহিনীদের দিয়ে চলছে বর্বরতার ইতিহাস রচনার 'রোহিঙ্গা' নিধন অভিযান। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ(এইচআরডব্লিউ) এর ধারনা আরাকানের মুসলিমদের প্রায় বার'শো এর অধিক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার পাশাপাশি স্থল পথে সামরিক বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিনশ'র বেশী নিরীহ মানুষ মারা গেছে, তিরিশ হাজারেরও বেশি মানুষ উদ্ভাস্তু হয়েছে।
চার. পশ্চিম পাকিস্তানের নির্যাতনের স্টিম রুলার যখন পূর্ব দিকে ছুটে এসেছিলো কোটির উপরে বাঙালী তখন উদ্ভাস্তু হয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে গিয়েছিলো। ইন্ধিরা গান্ধী প্রতিবেশীদের বিপদে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেননি। আশ্রয় দিয়েছেন, মুখে অন্ন তুলে দিয়েছেন। সময়ের পরিবর্তনে মায়ের করে যাওয়া কাজকে মেয়ের হাতে 'মরনোত্তর সম্মাননা' তুলে দেয় বাংলাদেশ।
একসময় জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রাম থেকে 'রোহিং' অঞ্চলে যাওয়া 'কালা' বা 'রোহিঙ্গা'দের দীর্ঘ দিন ধরে উদ্ভাস্তুদের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। আলোচনার মাধ্যমে তাদের পুশব্যাক করারা কথাও ছিলো। সুসময়ে মায়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন।
কিন্তু তাই বলে রোহিঙ্গাদের এ দু:স্বময়ে তাদের মুখের উপর সীমান্তের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে বাংলাদেশ। অমানবিকতার এ কেমন রূপ? এ বিপদের পথযাত্রীদের প্রতি সদয় আচরণ করে সীমান্তের দরজায় যাতে আর কেউ এ নির্মমতার মায়ায় কড়া না নাড়ে সেজন্য এখনি যথেষ্ট পরিমাণে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ প্রয়োগ করা উচিৎ বাংলাদেশ সরকারের।
লেখক: শিক্ষার্থী, এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
ঢাকা, ২২, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: