তানভীর আহমেদ: বিষফোঁড়া। পুরো গায়ে ব্যথা আর বেদনা। অনেক কষ্ট। অনেক সমস্যা যেন আগলে ধরেছে। কিছুতেই শান্তি নেই। সারাক্ষণ জ্বালা আর যন্ত্রনায় ছটপট করার মত অবস্থা। এই দৃশ্য একজন সেশন জট শিক্ষার্থীর। যেন পুরো জীবটাতেই জট লেগেছে। কিছুতেই যেন খুলছে না।
স্কুল কলেজের গণ্ডি সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করে কয়েক হাজার পরিক্ষার্থীকে ভর্তি যুদ্ধে পিছনে ফেলে গুটি কয়েক শিক্ষার্থীর ভাগ্যে জোটে 'সোনার হরিণ' তুল্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্খিত একটি সিট।
এক বুক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষা জীবন শুরু করে। নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলেটি বা মেয়েটির চোখে ঝলঝলে স্বপ্ন সবসময় তাড়া করে।
কত দ্রুত সফলতার সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করে তার তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা বাবা-মা,ছোট ভাই কিংবা ছোট বোনটির মুখে হাসি ফুটাবে, প্রশান্তির ছায়া উপহার দিবে এমনটাই দাবী রাখে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর দিন দিন তার স্বপ্নের মাঝে হতাশা ও অস্থিরতার চাপ পড়ে। যখনই সেশনজট নামক বিভীষিকাময় শব্দের সাথে পরিচিতি লাভ করে। তখনই যেন সব কিছু তছনছ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুস্থ ছাত্ররাজনীতি, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের আন্তরিকতার ঘাটতি আর প্রচলিত সিস্টেমের আধিপত্যের কারণে আমাদের স্বপ্নগুলো বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায়,প্রতিটি অক্ষরের মাঝে চাপা পড়ে থাকে মাসের পর মাস।
ছয় মাসের সেমিষ্টার শেষ হতে লেগে যায় নয় কিংবা দশ মাসও। কোন কোন সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোর্স শেষ হলেও ফলাফল যথাসময়ে প্রকাশিত হয় না। ফলে সিস্টেমের বেড়া জালে আটকে চুড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলের আগে পরীক্ষা নেওয়া যায় না বলে পিছিয়ে যেতে হয় অনেকটা সময়। যার ফলে ৪ বছরের অনার্স শেষ করতে লেগে যায় ৬ বছর কিংবা তারও বেশি সময়।
সেই সঙ্গে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের উপর ভর করা, মা-বাবা, ভাই-বোন, কিংবা প্রিয়জনের অপেক্ষা এবং অবহেলার মাত্রাও বাড়তে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন ছাত্রের কাছে সেশনজট মানে অন্তরে অনুভূত যন্ত্রণাকর এক ক্ষতের নাম। যার কবলে পড়ে জীবনের মহামূল্যবান সময়ে সোনালী অধ্যায়ে পদার্পণ করার পরিবর্তে দুর্বিষহ ও ভোগান্তির জীবন অতিবাহিত করতে হয়।
এতে করে মেধা ও প্রতিভা প্রখরতর হওয়ার বদৌলতে রুদ্ধ হয়ে যায়।
সেশনজটের মত একটি অভিশাপ ও ভয়াবহ অবস্থা কাটিয়ে তোলার জন্য আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের শতভাগ আন্তরিকতা, পরিচ্ছন্ন ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষার্থী বান্ধব সিস্টেমের পরিচর্যা একান্ত জরুরী।
তবেই শত শত সম্ভাবনার প্রাণ পাবে জটমুক্ত ক্যাম্পাস। জাতি পাবে উন্নয়নের কাণ্ডারি স্বরুপ আগামীর প্রতিভাধর প্রজন্ম। এর জন্য জটমুক্ত ক্যাম্পাসের জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখক:
তানভীর আহমেদ রাসেল
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা, ০৬ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: