Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

স্বপ্নছোঁয়ার গল্প : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লাল বাস’

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮, ১৯:৫১

তাবাসসুম রহমান সানফি : ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বন্ধুর গাড়িতে বাসায় ফেরার পথে প্রতিদিনই কার্জন হলের লাল বিল্ডিংয়ের সামনে দিয়ে আসি। আর স্বপ্ন দেখি, একদিন ঘুরে দেখব পুরোটা। তখনো একদমই মাথায় আসেনি যে, মাত্র ২ বছর পরে এই জায়গাই হবে আমার নিজের ঠিকানা!

২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারি। সকাল ৮ টায় ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে উপস্থিত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় তলার কামাল উদ্দিন আহমদ গ্যালারি নামের বিশাল অডিটোরিয়ামে। জীবনের নতুন এক অধ্যায়, নতুন সব মুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কল্পনাটা ছিল একটু ভিন্ন। এখানে ক্লাস করার চেয়ে ঘোরাফেরা এবং আড্ডা দেওয়া বেশি। স্কুল কলেজের মত নিয়মের বাঁধাধরাও নেই।

কিন্তু কোথায় কিসের কল্পনা, এসে দেখি এ এক নতুন জগত! প্রথম দিনের প্রথম ক্লাসেই স্যারের নিয়ম কানুন নিয়ে বিশাল এক লেকচার। ঠিক সময়ে না আসলে ক্লাস এ ঢুকতে দেওয়া হবে না, উপস্থিতির জন্য ৫ নাম্বার বরাদ্দ আছে, এ কথা শুনে তো রীতিমত চোখ কপালে!

এতটুকুতেই প্রথম দিন ক্ষান্ত হয়নি। আমকে ‘হতবাক’ করার জন্য অপেক্ষা করছিল আরও এক চমক। প্রতি সপ্তাহের রোববার ক্লাস টেস্ট (Midterm), এতো স্কুলের মতো ক্লাস টেস্ট! যাই হোক সেদিনের মত ১২ টায় ছুটি হল, ভার্সিটির বাসে বাসায় ফিরে আসলাম, ‘ঐতিহ্য লাল বাস’।

লাল বাসের কথা প্রসঙ্গে মনে পরে গেল, মোহাম্মদপুর ধানমন্ডি হয়ে যে বাসটা যায় সেটার নাম তরঙ্গ। আমার বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ড ছিল ধানমণ্ডি ৪/এ রোডে, ঠিক জিগাতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে একটু দূরেই। কিন্তু আমার জানা ছিল না। তাই রোজ সকালে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়াতাম; লাল বাস আসবে এই আশায়। কিন্তু প্রতিদিন দেখতাম বাস আমার সামনে না দারিয়ে সোজা চলে যায়। আর আমি বোকার মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে পরে রিকশা নিয়ে রওনা দিতাম। এভাবেই কিছুদিন চলল, দীর্ঘ এক মাস পর জানতে পারলাম আমি যেখানে দাঁড়াতাম বাসের অপেক্ষায় তার থেকে একটু আগেই বাস থেমে যেতো! নিজেকে তখন কোন লেভেলের বোকা মনে হচ্ছিল সেটা বলে বোঝানো যাবে না।

এরপর থেকে বাস নিয়ে আর ঝামেলা হয়নি। কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ার কারণে ৪ বছরে খুব বেশি হলে ৪ মাস হয়ত বাসে ঠিকঠাকমতো উঠতে পেরেছি!

এমন সব চিন্তা করতে করতে আর সব নিয়ম কানুনের বেড়াজালে ৪টি বছর পার হয়ে গেল। অবশেষে ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর আমাদের র‍্যাগ ডে এর দিন ধার্য হল, শুরু হল সমাপ্তির সূচনা।

সেদিন রঙ মাখামাখি করে পুরো দিনটা কেটে গেল। চার বছরের এত স্মৃতি, এত সুখ দুঃখ, হাসি কান্না; সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিন। দীর্ঘ ৪ বছর আগে যে যাত্রার শুরু হয়েছিল, নিমিষেই তা শেষ হল।

আজও লাল রঙের সেই বাসটার দিকে তাকিয়ে থাকি চোখে পড়লেই। আহা… আবারো যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই দিনগুলোতে!

লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা, ০২ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ