Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

আমি গুপ্তচর! ৩২ ধারা হয়ে কাজ করছি... প্রতিবাদ, নিন্দা

প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮, ০২:৪০

লাইভ প্রতিবেদক: একি চলছে। একদিকে রাতারাতি বাড়ছে পত্রিকা, টেলিভিশন ও রেডিও এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল, অন্যদিকে তৈরী হচ্ছে নিত্য নতুন আইন। এই আইন নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ার কর্মীরা ফেসবুকে একেক ধরনের পোস্ট লিখেছেন। এসব তুলে ধরা হলো।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, "সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে সেই ব্যক্তি ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।"

এটি আইনে পরিণত হলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে বলে এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেক সাংবাদিক। সামাজিক মাধ্যমে '#আমিগুপ্তচর' বলে একটি হ্যাশট্যাগ চালু হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ, হারুন উর রশীদ ফেসবুকের একটি পোস্টে তিনি লিখেন,
নির্বাচনের ঠিক একবছর আগে যারা সরকারকে এই ধরনের এই আইন করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা না ভেবে দেননি। সেই ভাবনার কিছু হয়তো আমি অনুমান করতে পারি।

১. নির্বাচনের আগে মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি, অনাচার, অন্যায় যেন সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করতে না পারে।

২.পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্নীতি, অনাচার, অন্যায় যেন সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করতে না পারে।

৩. প্রশাসন, পুলিশ ও জন-প্রতিনিধিদের চিন্তামুক্ত রাখা–যেন তারা নতুন কোনও অন্যায় করলেও তা সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ করতে না পারে।

এনটিভি অনলাইনের ইনচার্জ ফখরুদ্দিন জুয়েল আজ বুধবার ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন যেখানে তিনি '#আমিগুপ্তচর' এই হ্যাশট্যাগ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।

আরিফ মাহবুব #আমিগুপ্তচর হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, 'জনগণের সেবায় নিয়োজিত অথচ সংবাদকর্মীরা তাদের দুর্নীতি প্রমাণে ভিডিও করতে পারছে না! সেলুকাস ডিজিটাল আইন ২০১৮।'

এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মিল্টন আনোয়ার লিখেছেন, 'মন্ত্রিসভায় পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ নম্বর ধারার এই অপরাধ আমি আমার সাংবাদিকতা জীবনে বহুবার করেছি। যেহেতু আমি আমার অনেক সহকর্মীর মতো এই পেশা এখনো ছেড়ে যাইনি, বিদেশে পাড়ি দেইনি।

যেহেতু আগামী দিনগুলোতেও সাংবাদিকতা করেই যেতে চাই। সেহেতু আমি নিজেকে আইনের ভাষায় গুপ্তচর হিসেবে ঘোষণা করলাম। আজ থেকে শুরু হোক #আমিগুপ্তচর শ্লোগানের আন্দোলন। আসুন স্বঘোষিত এই গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার করুন এবং সাংবাদিকতার গলাটিপে হত্যা করার মিশনে সফল হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান।'

মাদুস রায়হান পলাশ লিখেছেন, 'আমি গোপন ক্যামেরা দিয়ে ডিডিও ধারণ করবো। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অপরাধ মূলক গোপন তথ্য প্রকাশ করবো। আমাকে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানাসহ ১৪ বছরের জেল দিন। #আমিগুপ্তচর'

মানিক মুনতাসির লিখেছেন, ‘৫৭ আর ৩২-এর খেলা না খেলে সাংবাদিকতাকে বিলুপ্ত পেশা ঘোষণা করা হোক।’

হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, ওসব আইন-কানুন এদেশের সাহসী সাংবাদিকরা থোরাই কেয়ার করবে। হবে আন্দোলন। ফুঁসপে জনগণ। তখন বুঝবে এ আইনের নাই কোন প্রয়োজন।
মনোয়ার ভুইয়া বলেন, ভাই তা হলে যে থলের বিড়াল বেরিয়ে পরবে !!!!!!
এটিএন বাংলার ফেরদৌস হাসান লিখেন, দুর্নীতি অন্যায় অনিয়ম বিরুদ্ধে কাজ করা ত সংস্লিষ্ট দপ্তরের,,সাংবাদিকের কাজ ত উন্নয়ন আর জনগনের সমস্যা, ভোগান্তি তুলে ধরা।
কামরুল হাসান রাসেল বলে, নতুন ৩২ ধারা
গুপ্তচর থেকে গুপ্তচোর
বানানোর প্রক্রিয়া
যাহার উপহার হিসেবে
যথেষ্ট শাস্তির সুব্যবস্থা রহিয়াছে !!!

শিমুল সালাউদ্দিন লিখেছেন, 'ইশ, সেবার মাসুদরানা আর ওয়েস্টার্ন থ্রিলার পড়তে পড়তে কত গুপ্তচর হইতে চাইছিলাম... #আমিগুপ্তচর'

গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সাংবাদিক সহকর্মীদের প্রতি বলছি, ভাত-কাপড়ের আন্দোলনের চেয়ে নিজেদের পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কথা বলা বেশি জরুরি। সাংবাদিকরা অরগানিক ইন্টেলেকচুয়াল। ডিজিটাল আইনের টুঁটি চেপে ধরা ধারা পাস হলে সাংবাদিকতা পেশাই শুধু আক্রান্ত হবে না, দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অবাধ রাজত্বে দেশ ভেসে যাবে।’

আরেক সাংবাদিক বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে যে কোন সময় আমার ইচ্ছা হতেই পারে তাঁর আঙিনায় একটু হেটে যাই কিংবা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে তোলা একটি সেলফি ফেইসবুকে আপলোড করি। কিন্তু এখন কি আর এটা সম্ভব?

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮'র ৩২ ধারায় বলা আছে- সরকারি, আধা সরকারি কিংবা সায়ত্ত্বশাসিত কোন প্রতিষ্ঠানে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ এবং বিনা অনুমতিতে কোন ছবি তোলা কিংবা ভিডিও করা এবং তা গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার কিংবা প্রকাশ করা গুপ্তচরবৃত্তি। তা করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কিংবা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

অপরাজেয় বাংলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ। অনুমতি ছাড়া সেখানে ছবি তুলে যদি ফেইসবুকে দেই তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মামলা করতে পারে। যদি মামলা হয় তাহলে আমার কি হবে? ১৪ বছর আমাকে জেলে থাকতে হবে? ১ কোটি টাকা আমি কোথায় পাবো? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এত টাকা দিয়া কি করিবে? আর কি কি হবে?

এমন গণতন্ত্র লইয়া আমরা কি করিবো???

দৈনিক সমকালের আতাউর রহমান ফেসবুকে লিখেছেন,
৫৭ ধারার ২৫ কমে হয়েছে ৩২ ধারা। সংখ্যায় কমলেও এই ধারাটি ভয়ঙ্কর তেজী মনে হচ্ছে। এটি কার্যকর হলে গণমাধ্যমকর্মীরা পদে পদে বিপাকে পড়বেন।


ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ