Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

অর্জিত স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার লড়াই কখনো হয় না শেষ

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বার ২০১৭, ২০:০৫

 

মাহমুদ-উল-ইসলাম জয়: বিজয়ের ৪৬ বছর অতিবাহিত হল। প্রতিবারের মত উৎসব মুখরিত হয়ে পালন করব, লাল সবুজের পতাকা হাতে উদযাপন করব বিজয় দিবস। কিন্তু কতটা ইতিহাস সচেতন আমরা? মুক্তিযুদ্ধের কতটুকু জেনে নিয়েছি আমরা? কিংবা কতজন পিতা তাদের সন্তানদের বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন?

আমরা শুধু মাত্র জাতীয় দিবসগুলোকে উৎসব মনে করে উদযাপন করছি মাত্র। ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ফুল হাতে নিয়ে হাসিমুখে ছবি, দেখি ১৫ আগস্টের শোক র‍্যালিতে হাসিমাখা সেলফি। শোক দিবসগুলোও যেন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে আমাদের কাছে। এতেই বোঝা যায় আমরা মোটেও ইতিহাস সচেতন নই।

এখনো আমরা বলছি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। এই যে সোনার বাংলা গড়বার আকাঙ্ক্ষা সেটি থমকে গেছে ১৯৭৫-এ। আজ কেউ বলে না চল এখন থেকেই সোনার বাংলা গড়ি, সময় এখনই।

হেনরি ডেভিড থরো বলেছিলেন, ‘বিশেষ বিশেষ দিনে শুধু অতীতের সোনালী স্মরণ করে কোন লাভ নেই, বরং দরকার ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।’

আমাদের সুশীল সমাজ কত শিক্ষিত যোগ্য ব্যক্তিবর্গ আছেন যারা কথায় কথায় সরকারের ভুল ধরেন, সমালোচনা করেন। কিন্তু কখনো তারা সরকারকে ভবিষ্যৎ এর উন্নয়ন পরিকল্পনার কোন খসড়া দিয়েছেন কি?

বিরোধী দল পেট্রোলবোমা মেরে অগ্নিদগ্ধ করলেও তারা চুপ থাকেন অথচ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিচ্ছিন্ন কোন সদস্যের বিচ্যুতির কারণে পুরো সংগঠনকে লাঞ্ছিত করার প্রয়াস দেখি। তবু প্রতি বছর বিজয় দিবস পালনে সবার এতটা উৎসাহ দেখে ভাল লাগে, কিন্তু বিজয় ধরে রাখার যে লড়াই সেখানে কেন জানি অনেকেই অনুপস্থিত। মুক্তির সেই যুদ্ধ কি শেষ?

১৯৫২ থেকে নিয়ে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ অবধি অনেক ত্যাগ, রক্ত, অশ্রু, লাশ পেড়িয়ে স্বাধীনতা আনল যে জাতি, সে জাতি ব্যাক্তিগত সুবিধা আর প্রাপ্তির জন্য এতটাই অস্থির হয়ে গেল যে ৪ বছরেই বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হলেন নিজ বাসভবনে। ১৯ বছরের বিজয় ৪ বছরেই ধূলিসাৎ, ফলাফল বীভৎস। বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে রক্তদিলেন, রক্তদিলেন জাতীয় চার নেতা, রক্ত দিলেন খালেদ মোশাররফরা।

১৯৭৫ থেকে নিয়ে ১৯৯৬ এ সময়ে অগণিত মুক্তিযোদ্ধা সেনাকে হত্যা করা হল, নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করবার সুযোগ পেল। যুদ্ধাপরাধীরা বিচারের হাত থেকে রক্ষা পেল এবং প্রতিষ্ঠিত হল আবার!

জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯ বার মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছেন। ১৯৯৬ এ ক্ষমতায় এলেও চারপাশ সাজাতেই চলে গেল। ২০০১ এ আবার বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায়। তারপর চেষ্টা অব্যাহত ছিল আওয়ামীলীগ এর। ২০০৯ এ ক্ষমতায় এসে মনে হয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীর বিচার হল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে প্রতিটি খাতে উন্নয়ন হচ্ছে।

যুদ্ধের যদি শেষই হত তাহলে কয়েকটি প্রশ্ন রাখি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণয়ন করে গেলেন সেটিতে ফিরলাম ২০১০ সালে। মাঝের ৩৮টা বছর কেন নষ্ট হয়ে গেল?

যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হল ২০১৩ সালে তাহলে ৪১টি বছর কিভাবে নষ্ট হল কিভাবে? গোলাম আযমদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়ল কিভাবে? এই স্বাধীন বাংলা অসাম্প্রদায়িক হবার কথা ছিল, তবু এত বছর পরেও মন্দিরের প্রতিমা ভেঙে দেওয়া হয় কিভাবে? কিভাবে ধর্মকে ঢাল বানিয়ে মৌলবাদ বিস্তার হচ্ছে?

ইসলামের নাম নিয়ে পাকিস্তান যে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটপাট এবং পোড়ামাটির রাজনীতি করেছে তবুও কেন বিএনপি ঐ জামায়াতের সাথে থেকে জনসমর্থন পেয়েছিল? প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি না থাকে তাহলে স্বীকার করতে হয় যুদ্ধ শেষ হয় নি। যুদ্ধ কখনো শেষ হয় না।

বরং এখনকার যুদ্ধটি ১৯৭১ এর চেয়েও কঠিন। তখন স্পষ্ট সামনাসামনি লড়াই হয়েছে। এখন লড়াইটি অনেক জটিল, এই লড়াইয়ে জিততে হবে মেধা, পরিশ্রম ও সততার প্রয়োজন। শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য লড়াইটি প্রচন্ড কঠিন হয়ে যায়। ১৯৭১ এর বিজয়ে সকলের যেমন অবদান ছিল তেমনিভাবে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।

শিক্ষিত সমাজকে সুশীল না হয়ে সত্যিকারের বুদ্ধিজীবি হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে।
আমাদের একজন জহির রায়হান খুব দরকার যিনি প্রেমের রোমাঞ্চকর সিনেমার সাথে মুক্তিযুদ্ধের একটি অনবদ্য সিনেমা বানিয়ে নতুন প্রজন্মকে অনুভূত করবে।

আমাদের একজন ড.শামসুজ্জোহা দরকার যিনি শেখাবেন সত্য দেশপ্রেম, শেখাবেন সততা।
এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রে যারা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসেছেন তাদের সুশীলতা পরিহার করে আসতে হবে জাতীয় ঐক্যে। যদি বিবেক আর সততা বিক্রি হতে থাকে, তখন মেধা এবং প্রতিভাগুলো দেশকে পিছিয়েই নিয়ে যাবে। আমরা যারা নতুন প্রজন্মের তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। অনন্তকাল এভাবে যুদ্ধ চলে, চলবে।

কোনদিন বিজয় নিশানের উপর আবারো কালো ছায়া পড়লে যেন আমরা লাখো শহীদের রক্তে লাল এ বিজয় নিশান সমুন্নত রাখতে পারি সেটা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। বিজয় দিবসের এই দিনে সবাই ইতিহাস সচেতন হোন, বিজয়টা কিসের সেটি বুঝতে শিখুন। বিজয় দিবস শুধু উদযাপন না হয়ে উপলদ্ধিতেও থাকুক এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।


লেখক,
মাহমুদ-উল-ইসলাম জয়
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

 

 

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ