লাইভ প্রতিবেদক: ‘যে দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, যেদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলায় শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, সেদেশে আমি সামান্য একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমি কোন ছার। যখন যুদ্ধ করেছি, তখন শত্রু-মিত্র চিনতাম। এখন চিনি না। অর্থ, প্রতিপত্তি, দম্ভের কাছে আমরা পরাজিত। এরচেয়ে একাত্তরে যে সহযোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন, তারা ভাল আছেন। মরে গিয়ে তারা বেঁচে গেছেন।’
অভিমান আর চাপা ক্ষোভের সঙ্গে হাসপাতালের বেডে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহমেদ মৃধা। শৈলকুপার এই মুক্তিযোদ্ধা গত ১৮ অক্টোবর নিজ এলাকার ক্ষমতাশালীদের হামলার শিকার হয়ে এখন রাজধানীতে চিকিৎসাধীন। আজ (মঙ্গলবার) তার আরেক দফা অস্ত্রপোচার হবে হাতের ভাঙা অংশে।
গত রবিবার থেকে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে এই মুক্তিযোদ্ধাকে জনসম্মুখে পেটানোর সিসি টিভি ফুটেজ। কিন্তু কেন এবং কারা নৃশংসভাবে তাকে মারধর করল, তা বোঝার উপায় নেই। কেবল বাঁশ, লোহার রড, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হচ্ছে বয়োজ্যেষ্ঠ এ মুক্তিযোদ্ধাকে। কারা কেন এধরনের হামলা করল বলতে গিয়ে বারবারই চুপ হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ছেলেমেয়ে দুদিকে বসা, বাকি কথা তারা পূরণ করে দিচ্ছিলেন।
মুক্তা আহমেদ বলেন, ‘অনলাইনে সর্বনিম্ন দরপত্র দিয়ে এলজিইডির একটি কাজ পেয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ওই যুবকেরা। সিন্ডিকেট ভেঙে ই-টেন্ডারে অংশ নেওয়ায় নিজ দলের এমপি আবদুল হাইয়ের ক্যাডাররা নির্মম ভাবে মারধর করে। ভয়ে কেউ ঠেকাতে আসতে পারেনি। এলাকার সাংবাদিকরা চাইলেও লিখতে পারেননি।’
সম্প্রতি শৈলকুপা উপজেলার রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে ছয় কোটি টাকার চারটি দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহমেদ ১৭ অক্টোবর অনলাইনে দরপত্র জমা দেন। কাজটি পেয়েও যান। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এমপি আবদুল হাইয়ের ক্যাডাররা। ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার ওপর হামলা করে এমপির লোকজন।
একটা কাজ না পেলেই এভাবে হামলা করবে কেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তারা এখানকার টেন্ডার সিন্ডিকেট করে আসছে। সব কাজ তাদের মাধ্যমে পাওয়া যায়। একটা বড় অংকের কমিশন দিয়ে তাদের কাছ থেকে টেন্ডার কিনে নিতে হয়। সেটা ভেঙে আমি কেন অনলাইনে আবেদন করলাম, তা নিয়েই তাদের যত রাগ। ওরা সবাই আমার ছেলের বয়সী। এভাবে সম্মান হারাতে হবে কল্পনাও করিনি।’
মঙ্গলবার দুপুরে মোহাম্মদপুরের বিডিএম হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বেডে বসে অস্ত্রপোচারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সারা শরীর কালশিটে, এক হাত ও একপায়ে ব্যান্ডেজ। শুকিয়ে আসায় স্পষ্ট হয়ে দেখা যাচ্ছে রড আর হাতুড়ির আঘাতের ক্ষত!
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহম্মেদ মৃধা বলেন, ‘‘সেদিন সন্ধ্যায় ওষুধের দোকানে বসে ছিলাম। ইনসুলিনটা নিয়ে কেবল পকেটে ভরেছি। ওই এলাকাটি পুরো সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণাধীন। হঠাৎ ওরা আমার ওপর হামলা চালায়।
বলতে শুরু করে- ‘ওই শালা তুই টেন্ডার জমা দিছস ক্যান?’ পাশেই একটা দোকানে আমার ছেলে ছিল। অন্যরা কেউ ওদের ঠেকাতে সাহস পায়নি। আমার ছেলে দৌড়ে এসে ঠেকাতে গেলে তাকেও মারধর করে ওরা।’’
এ ঘটনায় মুক্তার আহমেদ মৃধার বড় ছেলে সুমন মৃধা বাদী হয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সভাপতি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। হামলাকারীদের প্রত্যেকে তার চেনা।
পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পুলিশ খুব ভালভাবে বিষয়টা শুরু থেকেই তদারকি করেছে। কিন্তু এখনতো এমপির কথা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। আসামিরা বর্তমানে আদালত থেকে জামিন পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুনেছি তারা এলাকা ছেড়ে এখন ঢাকায় অবস্থান করছে।’
মুক্তারের দেখাশোনা করছেন তার ছেলে মেয়েরা। তার মেয়ে বলেন, ‘আমরা অসহায়। ক্ষমতার কাছে এখন ন্যয়বিচার চাপা পড়ে গেছে। সারা জীবন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনা ধারণ করেছেন আমার বাবা। পরিবারকে সেভাবে চালিয়ে নিয়েছেন। প্রতি দানতো চান নাই।’ অভিযোগ বিষয়ে এলাকার সংসদ সদস্য আব্দুল হাই এর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত বলে তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান।
ঢাকা, ৯, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: