লাইভ প্রতিবেদক: এবার শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বাজারে কাগজ সংকটের সমাধান চাইলেন পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা। তারা বলেন, কাগজ সংকটে পুস্তক প্রকাশনা শিল্প হুমকির মুখে। কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিও জানান তারা। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আগামী বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই চান প্রকাশকদের কাছে।
দীপুমণি বলেন, সারা বিশ্ব সংকটের মুখে। তাড়াতাড়ি সুসংবাদও পাব না। টিকে থাকতে হবে। ক'দিন আগে কাগজ বিক্রেতাদের সঙ্গে বসেছি। তারা কথা দিয়েছেন ১ জানুয়ারিতে বই দিতে পারব। এরপরও কথার খেলাপ হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। সন্তানদের শিক্ষার সঙ্গে আপসের সুযোগ নেই। বই আমার লাগবেই এবং ১ তারিখেই লাগবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পুস্তক প্রকাশনার কাজ ব্যবসা হলেও এ শিল্পের মানুষরা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের কাজটিও করছে। দেশে বইয়ের ছাপা, বইয়ের বিষয়, প্রচ্ছদ এখন আন্তর্জাতিক মানের। মানুষ যত বেশি ডিভাইসে আসক্ত হোক না কেন, একটা ভালো বই পড়ার আনন্দ কোনো কিছু থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা এখন ৩৩ হাজার বিদ্যালয়ে পাঠাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।
কোনো বিদ্যালয়ের পাঠাগার যেন আলমারির মধ্যে বই আটকে ধুলাবালির কক্ষে পরিণত না হয় এ বিষয়েও তিনি সবাইকে সতর্ক করেন। আজ শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ৪১তম সাধারণ সভায় সমিতির নেতাদের ও মন্ত্রীর মধ্যে এ কথোপকথন হয়।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান মালিক ও পেপারমিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন দীপু মনি এবং উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, দেশীয় পেপার মিল মালিকরা দরপত্রের স্পেসিফিকেশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মূল্যে কাগজ সরবরাহ করবেন।
দেশীয় পেপার মিল মালিকরা সঙ্গতিপূর্ণ মূল্যে এবং চাহিদা অনুযায়ী কাগজ সরবরাহ না করলে মুদ্রণ শিল্প মালিকদের বিদেশ থেকে কাগজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
আগামী বছর ১ জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পেপার মিল মালিক, মুদ্রণ শিল্প মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয় ওই সভায়।
পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে স্পেসিফিকেশন ঠিক করার সময় কাগজের ব্রাইটনেস বিষয়ে পেপার মিল মালিকদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হবে বলেও ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বাপুস আয়োজিত বইমেলাও উদ্বোধন করেন এবং মেলার দুটি স্টল ঘুরে দেখেন। সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাপুসের সহসভাপতি কায়সার-ই-আলম, শ্যামল পাল, মির্জা আলী আশরাফ কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, মাজহারুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন। প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভাবনা তুলে ধরেন শ্যামল পাল।
বাপুস সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, আমরা দুঃখের কথা বলার জন্য কারও কাছে যেতে পারি না। আমাদের কিছু পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে। যারা ডোনেশনের মাধ্যমে এই শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা আপনার সহায়তায় এসব প্রকাশনীকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চাই।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, কাগজের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখনো ৫০ ভাগ কাগজ শুল্কমুক্ত আমদানি না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চান তিনি। 'এখনো স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় চাইনিজ মেলামাইনের প্লেট উপহার দেওয়া হয়। অথচ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এসব প্রতিযোগিতায় বই উপহার দেওয়ার', বলেন সহ-সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম।
বাপুসের উপদেষ্টা ওসমান গণি বলেন, সমিতির ২৬ হাজার সদস্য শুধু পুস্তক ব্যবসায়ী নয়, তারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করেন। এনসিটিবি কখনোই মন্ত্রী মহোদয়কে সঠিক কথা বলেন না। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা কোনো প্রণোদনা পাননি। কোনো সহযোগিতা পাননি। করোনায় তারা অনেক কষ্ট করেছেন।
পুস্তক বাঁধাই কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম মল্লিক বলেন, মহামারীতে এই শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। সভায় বাপুসের পক্ষ থেকে ১৩টি দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে রয়েছে- প্রকাশনা শিল্পকে আরও গতিশীল করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মতবিনিময়, পাঠ্য মাধ্যমকে জনগণের জন্য সহজলভ্য করা।
এনসিটিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটিগুলোতে বাপুসের কমপক্ষে ২ জন সদস্য রাখা, বিদেশি লেখার বঙ্গানুবাদ এবং বাছাইকৃত দেশি লেখার ইংরেজি অনুবাদের ক্ষেত্রকে উৎসাহ দেওয়া, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার গড়ে তোলা ইত্যাদি। বার্ষিক এ সাধারণ সভায় বাপুসের সব পরিচালক, ৬৪ জেলা ও উপজেলার পুস্তক ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীদের দাবী নিয়ে মন্ত্রী ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানাগেছে।
ঢাকা, ২৯ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: