যারিন জাসিয়া ঐশী: রুটিনমাফিক জীবনটা বড্ড এক ঘেয়েমি। তাই সেটিকে কয়েকঘন্টার জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে একটু প্রশান্তির আশায় আমরা ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের একদল শিক্ষার্থী ছুটেছিলাম মুক্ত বাতাসের খোঁজে।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। শহরের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে বেরিয়ে খোলা বাতাসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার এর থেকে ভাল জায়গা কি আর হতে পারে! প্রকৃতির সান্নিধ্যে সৃষ্টিকর্তাকে অনুভব করার সে এক চরম মুহূর্ত। শিল্পের জাদুকারী হাতের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠে সুন্দর সব শিল্পকর্ম। জীবনকে সেই শিল্পের পরশ দিতে একটু উঁকি দেই জাদুরবাড়ি নুহাশ পল্লীতে।
সিএসই বিভাগের ডে-৬৪ এবং ডে-৭০ (১ম শিফট) ব্যাচের শিক্ষর্থীদের জন্য সেদিনের সকালটি ছিল একটু অন্যরকম। সুর্যমামা উঁকি দেওয়ার সাথে সাথে ইউনিভার্সিটির গ্রিন রোড ক্যাম্পাস র্থেকে আমাদের যাত্রা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের উদ্দেশে।
কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছে প্রথমেই ছুটলাম কোর সাফারি ভ্রমণে। বাসে করে বিভিন্ন পশু-প্রাণীকে খুব কাছ থেকে দেখার আনন্দটাই ছিলো অন্যরকম। জেব্রা, জিরাফ, হরিণ, বানর, ভাল্লুকসহ চোখে পড়ছিল চেনা- অচেনা অসংখ্য প্রাণির। তবে বাঘ ও সাদা সিংহ খুঁজে বের করার একরকম প্রতিযোগিতায় যেন চলছিল শিক্ষার্থীদের মাঝে।
কোর সাফারি ভ্রমণ শেষে সময়টা ছিল একান্ত নিজের। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে পার্কের ভিতরে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। নানা প্রজাতির পাখি, মিউজিয়াম, মাছ, কুমির, কচ্ছপ, হনুমান, সাপসহ নানান প্রজাতির প্রাণি একসাথে দেখার অনন্য সুযোগ এই পার্কে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো ঝুলন্ত ব্রিজ। ঠিক তার উল্টো পাশে থাকা হাতির পাল যেন ভ্রমনের আনন্দটা বাড়িয়ে দিছিলো বভহুগুণ। অনেকে আবার হাতির পিঠে চড়ে সময়টা উপভোগ করেছেন।
মাঝে কিছু ইভেন্টের মাধ্যমে শিক্ষাসফরটা হয়ে ওঠে আনন্দমুখর। মেয়েদের জন্য পিলো পাসিং, বেলুন ফুলানো আর ছেলেদের জন্য ছিলো সঠিক লক্ষ্যে বল ছোড়া ও বেলুন রক্ষা করার মজার ইভেন্ট। বিজয়ীদেরকে পুরস্কৃত করে স্মৃতি রাখার উপলক্ষ করে দেওয়া হয়।
দিনের শেষ দিকে শরীর যখন ক্লান্ত, মন তখন চাচ্ছিলো একটু শান্তির পরশ। কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নুহাশ পল্লীতে পৌঁছে যেন সেই পরশটি অনুভব করলাম। এ যেন একটু করো শান্তির বাগান। জায়গাটা ছোট্ট হলেও শিল্পের নান্দনিকতার ছোঁয়ায় ভরপুর। হুমায়ূন আহমেদ যেনো তার উপন্যাসের মতো করেই সাজিয়েছিলেন বাড়িটি।
শতশত গাছ, দোলনা, দাবা বোর্ড, ট্রি হাউজ, কবুতরের বাসা, কাঠগোলাপ ঘেরা সুবিশাল বাঁধানো পুকুর দেখে বাড়িটিকে রূপকথার গল্পের কথা যেন মনে পড়ে যায়। এই শৈল্পিক বাড়িতেই যে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন প্রিয় লেখক।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ব্যবধান ঘুঁচে বন্ধুত্বের মতো সময়টা উপভোগ করছিলেন সকলে। একসাথে গান গাওয়া, ছবি তোলার মেতেছিল সবাই। বেলা শেষে 'র্যাফেল ড্র' যেন আনন্দের পূর্ণতা জুগিয়েছিল।
ব্যস্ত এই জীবনে শান্তির পরশ পাওয়ার সু্যোগ খুব কমই পাওয়া যায়। তাই মনকে প্রাণবন্ত ও সজীবতা এনে দিতে সুন্দর স্মৃতি ঘেরা রঙিন এই মুহূর্তগুলো উপজীব্য হবে মন খারাপের দিনগুলোর।
লেখক- যারিন জাসিয়া ঐশী
শিক্ষার্থী, সিএসই বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
ঢাকা, ১৯ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: