Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

হিসাব-নিকাশের নতুন বছর, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি

প্রকাশিত: ১ জানুয়ারী ২০২১, ১৭:৪৮

শান্তনা চৌধুরী: নতুন বছরে। নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছে বাংলাদেশ। নতুন স্বপ্ন দেখে শান্তি, স্বস্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধির। বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে, জঙ্গী, চাপিয়ে দেয়া সন্ত্রাস। সন্ত্রাসবাদ ও মাদক সর্বোপরি ভায়াবহ হন্তারক ব্যাধি করোনা মুক্ত সমাজ। বিনাশ হবে অগণতান্ত্রিক অপশক্তি। জঙ্গীবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও অপরাজনীতি। দেশবাসী প্রত্যাশা করে, সম্প্রীতি ও সমঝোতার সংস্কৃতি রচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অগ্রসর হবে।

নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে সবাই কাজ করবে সম্মিলিতভাবে। ধ্বংসাত্মক রাজনীতি যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে, সে বিষয়ে সকলেই সজাগ থাকবে। জীবনের নিরাপত্তা, সহনীয় দ্রব্যমূল্য এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরও এগিয়ে নিতে সবাই মিলে কাজ শুরু হোক- এটাই নববর্ষের প্রত্যয়।

৩১ ডিসেম্বর সূর্যাস্তের মধ্য দিয়েই অনন্তকালের পথে যাত্রা শুরু করেছে বিদায়ী বছর ২০২০। সব দুঃখ-বেদনা ভুলে সারাবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও বরণ করেছে নতুন বছরকে। স্বাগতম ২০২১। নতুন বছরের প্রারম্ভে প্রত্যাশ্য মহামারি করোনা থেকে মুক্তি। পশ্চাৎমুখিতার দীপ নিভে যাবে। জাতীয় জীবনে আসবে সাম্য ও সমৃদ্ধি।

২০২০ ছিল মহামারি, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বছর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ২০২০ সালে এসে একসঙ্গে অনেকগুলো মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। প্রাণঘাতী করোনা কেড়ে নিয়েছে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ দেশের হাজারো মানুষের প্রাণ। ঘটনাবহুল বছরটি মানুষের জীবনাচারে এনেছে আমূল পরিবর্তন। শুধু বাংলাদেশ নয়, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যস্ত ছিল পুরো বিশ্ব।

২০২১-কে স্বাগত জানানোর পালা। সব মহলের মানুষ বলেছে নতুন শতব্দীর দু-দশক পূর্ণ হয়ে তৃতীয় দশকে পা দেব আমরা। ‘অভিশপ্ত’ ২০২০-র শেষ হওয়ার প্রহর যেভাবে গুনছে গোটা বিশ্ব, তেমনটা সচারাচর চোখে পড়ে না। বছরভর করোনা প্রকোপ ঝাঁকিয়ে ধরে থেকেছে সকলকে, একের পর এক মৃত্যু, হতাশা, প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা-- তবে সব গ্লানি ভুলে এবার নতুনকে বরণ করে নেওয়ার পালা।

হাতে লেখা কার্ড কিংবা পাড়ার মোড়ের দোকানে দাঁড়িয়ে গ্রিটিংস কার্ড কেনবার প্রতিযোগিতাও ছিল। কার ঝুলিতে কটা কার্ড এল, কে কার গোপন বন্ধু নতুন বছরের শুভেচ্ছা কার্ড পাঠালো সেই সব দিন শেষ। এখন নতুন বছরের শুভেচ্ছা ভার্চুয়াল মাধ্যমে জানানোটাই ট্রেন্ড। ঘড়ির কাঁটা আজ রাত বারোটা ছুঁয়ার পর ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার কিংবা হোয়্যাটসঅ্যাপে উপচে পড়বে 'Happy New Year' লেখা বার্তা। কপি-পেস্ট মেসেজ যেন কমতি নেই।

করোনা মোকাবিলায় জনসচেতনতা সৃষ্টি, দীর্ঘ সময়ের জন্য সরকারি ছুটি, ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা প্রশংসা পায়। অন্যদিকে টেস্টে অনিয়ম, করোনা সামগ্রী ক্রয়ে অনিয়ম ও সরকারি সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা হয় দেশজুড়ে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, শেষ স্প্যান বসানোর মাধ্যমে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে দৃশ্যমান করা, ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রায়, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো, যুবা ক্রিকেট দলের আইসিসির অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় বিদায়ী বছরের বড় প্রাপ্তি।

চীনের উহান থেকে ছড়ানো মহামারি, লেবাননের ভয়াবহ বিস্ফোরণ, কৃষাঙ্গ হত্যাকাণ্ডের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ, জলঘোলা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়, ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলেইমানি হত্যা, বিভিন্ন আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনসহ নানা ঘটনার সাক্ষী ২০২০।

মহামারিতে পুরো বিশ্ব যখন টালমাটাল তখন করোনা টিকার উদ্ভাবনের খবর দেয় রাশিয়া। এরপর ৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক যৌথভাবে করোনা টিকা উদ্ভাবনের কথা জানায়। আমেরিকা, ইউরোপসহ অনেক দেশেই নাগরিকরা নিতে শুরু করেছেন করোনার ভ্যাকসিন।

করোনা ভ্যাকসিনে নজর আছে বাংলাদেশেরও। যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত অক্সফোর্ডের টিকা জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের আগেই বাংলাদেশে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বিষে ভরা ২০২০, রেখে গেছে আতংক:

সারা বছর করোনার আতংক ছড়িয়ে কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে বিষে ভরা ২০২০ সাল। অনেক মৃত্যু, হতাশা, ক্লান্তি ও নানা ঘটনার মাঝে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা খুনের অঘটনকে করোনার সঙ্গী হিসেবে গণ্য করে শেষ হলো আরও একটি বছর।

করোনা দূর্যোগের কারণে থার্টিফার্স্ট নাইটের আয়োজন এবার বন্ধ ছিল। তবে উল্লেখ করার মতো পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে কক্সবাজারে। বছরের শেষ সূর্য ডোবা দেখতে সৈকতে হাজির হয়েছেন প্রকৃতি সচেতন পর্যটক ও স্থানীয় আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা।

শীতল আবহাওয়া থাকলেও বর্ষ বিদায়ের শেষ দিনে সূর্য লাল আভা ছাড়িয়ে বিদায় নিয়েছে। শুক্রবারের সূর্যোদয়ের মধ্যদিয়ে পথচলা শুরু হয়েছে ২০২১ খিষ্টাব্দের। ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে পরিচ্ছন্ন আগামীর প্রত্যাশায় ২০২১ সালকে স্বাগত জানিয়েছে সবাই। উন্মুক্ত কোনো আয়োজন না থাকলেও নিজেদের মতো করে নতুন বছরকে বরণ করেছেন সব শ্রেণির মানুষ।

চলতি বছরেই শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। নানা আয়োজন-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হবে মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০তম বছরটি দেশে ও বিশ্বব্যাপী। সে হিসেবে বছরটির তাৎপর্য গভীর ও সুদূরপ্রসারী। এবার কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। জয় হোক বাঙালী জাতির, জয় হোক বাংলাদেশের।

কোভিড-১৯ এর টিকা খুব শীঘ্রই দেশে আসার কথা রয়েছে। সরকার চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কয়েক কোটি মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। এর জন্য অর্থও বরাদ্দ রাখা হয়েছে আলাদাভাবে। জনবান্ধব সরকারের এই প্রতিশ্রুতি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে বলেই প্রত্যাশা।

আমাদের সবার প্রত্যাশা, করোনায় কবলিত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের জনগোষ্ঠীর জন্য টিকার ন্যায্য বন্টন নিশ্চত করতে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে উন্নত দেশগুলোর এগিয়ে আসার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে বাসযোগ্য মানবিক পৃথিবী। নতুন বছরটি কল্যাণময় হোক।

ঢাকা, ০১ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআইটি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ