Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বেদনাবিধুর পিলখানা ট্র্যাজেডির হিসাব মিলেনি

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৭, ০৯:১৪


 

সুমাইয়া রাজ্জাক লাজিনা: কান্না থামেনি। কেবলই কান্নার রুল। মনকেও যায়না বুঝ মানানো। কি হয়েছিল সেদিন! দেশ প্রেমিক সেনা কর্মকর্তারা কার এতো বড় ক্ষতি করেছিলেন? কোন জবাব নেই কারো কাছে। কেন এতো গুলো তাজা প্রাণ কেড়ে নিল ঘাতকের দল। এর নেপথ্যে কাদের হাত? কার হাতইবা এতো লম্বা কি ভাবে হয়েছিল? ৮ বছরেও কেউ স্পষ্ট করে হিসাব-নিকাশ মিলাতে পারছেন না। বেদনাবিধুর পিলখানা ট্র্যাজেডির আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কান্না থামেনি শহীদ পরিবারগুলোতে।

আপনজন হারানোর কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের। সেই দিনে ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের। তাদের প্রশ্ন-কি দোষ ছিল সেনা কর্মকর্তাদের? কেন তাদের এভাবে প্রাণ দিতে হলো? স্বজনদের বুকের ক্ষত কখনও কখনও ক্ষোভে পরিণত হয়। তাদের মতে প্রতিদিন কত দিবস পালন করা হয় অথচ ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয় না।

একই সঙ্গে ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার দাবি করেছে শহীদ পরিবারের স্বজনরা। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারান কর্নেল কাজী এমদাদুল হক। স্বামী হারিয়ে দুই ছেলে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন কর্নেল কাজী এমদাদুল হকের স্ত্রী নাজনীন এমদাদ। কেমন আছেন- এমন প্রশ্নে নাজনীন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, এভাবে ভালো থাকা যায় না।

যারা দেশের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে তারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ নয় । তিনি বলেন, কেন তাদের নির্মমভাবে মারা হলো- এটা এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না। বুকের ভিতরে এ কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে। সেই দিনের স্মৃতিচারণা করে নাজনীন এমদাদ বলেন, সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও শিউরে ওঠি। আমাদের পোস্টিং ছিল রাজশাহীতে। দরবারে যোগ দিতে ছোট ছেলেকে নিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি বিজিবি সদর দপ্তরের অফিসার্স মেসে এসে ওঠি।

২৫শে ফেব্রুয়ারি সকাল বেলায় হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ পাই। এমন সময় এমদাদ ফোন করে বলে দরজা আটকিয়ে বসে থাকার জন্য। কেউ নক করলেও যেন দরজা না খুলি। এটাই ছিল এমদাদের সঙ্গে আমার শেষ কথা। ছোট ছেলেটি এ ঘটনার পর অনেকদিন মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিল। আমি আমার সন্তানদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।

নিহত কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহেরীন ফেরদৌসী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করার নয়। অনেকেই হয়তো ভাবে শহীদ পরিবারগুলো টাকা, ফ্ল্যাট অনেক কিছু পেয়েছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত স্বামীর শূন্যতা অনুভব করি। সবচেয়ে খারাপ লাগে যে, আস্তে আস্তে মানুষ ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে ভুলে যাচ্ছে। অথচ এ দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার কথা। তিনি বলেন, আমাদের আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই আমাদের শুধু একটি চাওয়া দিনটি শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালন করা হোক।

শহীদ লে. কর্লেন এমশাদ ইবনে আমিনের স্ত্রী ডা. রোয়েনা এমশাদ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, এতদিন হয়ে গেল তারপরও ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে না। এতজন মেধাবী সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুতে শুধু পরিবার গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, দেশেরও ক্ষতি হয়েছে। তাই এই দিনটিকে পুরো জাতির এক সঙ্গে স্মরণ করা উচিত। তিনি বলেন, প্রতিদিন কত দিবস পালন করা হয়। কিন্তু ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে না।

অথচ পিলখানায় নিহত শহীদ পরিবার গুলো অনেকদিন থেকেই এ দাবি জানিয়ে আসছে। সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ডা. রোয়েনা। তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে আরও বলেন, সংসারে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। ২০০৯ সালে ২৫শে ফেব্রুয়ারির সকালবেলা মেয়েকে নিয়ে গেছি এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে।

সকাল নয়টার দিকে এমশাদের ফোন। তুমি বাসায় এসো না। এটাই ছিল ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা। এরপর অনেকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু ফোনটি বন্ধ পেয়েছি। আর কোনোদিন ওর সঙ্গে কথা হবে না।

পিলখানা হত্যার বিচার আরো স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন রোয়েনা এমশাদ। তিনি বলেন প্রকৃত অপরাধীরাই যেন শাস্তি পায়। কোনো নিরপরাধীকে যেন শাস্তি দেয়া না হয়।

 

ঢাকা, ২৫ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ