Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

সীমান্তে চলছে শোকের মাতম

প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবার ২০১৬, ০৩:৫৪

রফিক মজিদ, শেরপুর: ৫৩ দিনে হাতির আক্রমনে ৭ জনের মৃত্যু। শিশু ও নারীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শেরপুরের সমিান্তবর্তী গারো পাহাড় এখন মৃত্যুপুরিতে পরিনত হয়েছে। গত ৫৩ দিন বন্য হাতির আক্রমনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সাথে আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত ব্যাক্তি।

হাতির হামলায় সীমান্তবাসীর ঘর-বাড়ি ভাংচুরসহ শত শত একর জমির ধান ও বনজ গাছপালার ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন হাতির আক্রমন ঠেকাতে এবং স্থানীয়দের জান মাল রক্ষায় নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হলেও কাজে আসছে না কোন কিছুই। হাতির মতো হাতি আসছে, ধ্বংস করছে ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষেত ও বনের গাছপালা।সেইসাখে মারা পড়ছে নিরিহ মানুষ।

১৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের পানবর গ্রামের সুন্নত আলীর স্ত্রী আহেতন নেছা (৪৫) এবং পাশ্ববর্তি দুধনই গ্রামের আয়তুল্লার ছেলে আব্দুল হাই (৫০) ও কালা জহুরুল (৫০) নামের দুই কৃষক।

এসময় হাতির তান্ডবে বেশ কয়েকটি ঘর-বাড়ি ভাংচুর এবং কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছে। এঘটনায় সীমান্ত এলাকায় বইছে শোকের মাতম। এদিকে সম্প্রতি ঝিনাইগাতি সীমান্তে হাতির উপদ্রোপ বেড়ে যাওয়ায় হাতির হাত থেকে রক্ষা পওয়ার জন্য পাহাড়ি এলাকার নারী ও শিশুদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, প্রায় ১৫ থেকে ২০ ধরে জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৩০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বন্যহাতির ভয়ে আতংকিত জীবন যাপন করছে। ওইসব এলাকার সীমান্তের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মশাল আর ভোগা বাতি (বাঁশ ও পাট দিয়ে তৈরি মশাল) তৈরি করে রেখে দিয়েছে এবং পাহাড়ের টিলা এবং শাল-গজারি বাগানের ফাঁকে ফাঁকে আবাদি জমির উপর গ্রামবাসী ডেরা তৈরী করে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত শুকনো বাঁশের মশাল জ্বালিয়ে পাহাড়া দিচ্ছে বাঙ্গালী ও আদিবাসী কৃষকরা। ফসলের মওসুমে প্রতি ডেরায় ৫/৬ জন করে ছোট ছোট গ্রুপে ক্ষেতের চারপাশে অবস্থান নেয়। যে দল প্রথমে হাতির উপস্থিতি টের পায় সে দল চিৎকার করে উঠে। এসময় আশপাশের সকল দলের সদস্যরা ছুটে আসে হাতি তাড়াতে।

সরকার কর্তৃক ঘোষিত বন্য প্রানীর আক্রমনে নিহত হলে ১ লক্ষ, আহত ব্যাক্তি ৫০ হাজার টাকা এবং ফসল ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থরা ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও সে বিষয়ে তাদের তেমন কোন আগ্রহ নেই। কারণ সীমান্তবাসী ক্ষতিপূরণ চায়না, চায় হাতির উপদ্রোপ থেকে রক্ষা।

বন্য হাতির আক্রমণে জানমালের ক্ষতির পাশাপাশি জেলার ওইসব সীমান্ত এলাকায় শতাধিক পরিবার পৈত্রিক ভিটে মাটি ও আবাদি জমা জমি ফেলে রেখে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বিগত প্রায় ২০ বছরে এ সীমান্ত এলাকায় হাতির আক্রমনে প্রায় দুই শতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। পাশাপাশি পঙ্গু ও আহত হয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক ব্যক্তি।

হাতির আক্রমনের ভয়ে ভিটে মাটি ছেড়ে সীমান্তের অনেক প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষী পরিবার হয়ে গেছে বেকার ও দিন মজুর। ফলে ওই সব এলাকার প্রায় ১০ হাজার একর আবাদি জমি বছর জুড়ে অনাবাদি হয়ে পরে থাকে। বন্যহাতির আক্রমণে বিগত এক যুগে ঘরবাড়ী, ক্ষেতের ফসল, আম-কাঁঠাল সহ বিভিন্ন ফলের বাগান, গোলার ধানসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে তবে সবচেয়ে বেশী প্রাণহানির ঘটানা ঘটেছে চলতি বছরের গত প্রায় দের মাসে।

১ সেপ্টেম্বর থেকে গত ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৫৩ দিনে মারা গেছে ৭ জন। এছাড়া এর আগের ৮ মাসে মারা গেছে প্রায় ২০ জন।

ঝিনাইগাতি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, হাতির আক্রমনে গত রাতে ৩ জনের মৃত্যুটি খুবই দু:খ জনক। সরকার ইতিমধ্যে হাতির আক্রমন রোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ সম্পূর্ন রূপে বাস্তবায়ন শেষ হলে আশাকরি হাতির আক্রমন অনেকটা কমে আসবে। সীমান্তে হাতি সম্প্রতি অনেক উগ্র হয়ে উঠেছে ফলে প্রায় প্রতি রাতেই হাতির আক্রমনে মানুষ মারা পড়ছে।

তাই আজ শুক্রবার থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সীমান্ত গ্রাম গুলো থেকে শিশু ও নারীদের নিরাপদ দুরত্বের বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক ও মাদরাসা ভবনগুলো আশ্রয়ে নেয়া হবে।

ঢাকা, ১৪ অক্টোবর, (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ