লাইভ প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার সাহিত্যে ১১৩তম নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব সারা দানিউস। সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলছে, ‘আমেরিকার সংগীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক মূর্চ্ছনা সৃষ্টির’ জন্য ৭৫ বছর বয়সী এই রক, ফোক, ফোক-রক, আরবান ফোকের এই কিংবদন্তিকে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে তারা।
ডিলান তথাকথিত সাহিত্যিক নন। নোবেলের শত বছরের ইতিহাসে তিনি এ পুরস্কারজয়ী প্রথম সংগীত শিল্পী ও গীতিকার। গার্ডিয়ান লিখেছে, এর আগে বহুবার নোবেলের মনোনয়নের তালিকায় নাম এলেও সাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কারের ঘোষণায় ডিলানের নাম যে বিস্ময় হয়েই এসেছে।
পুরস্কার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে সারা দানিউস বলেন, তাদের এবারের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হবে না বলেই তিনি আশা করছেন। ডিলানকে তিনি বর্ণনা করেন ইংরেজি বাচন রীতির ‘এক মহান কবি’ হিসেবে, নোবেল পুরস্কার যার ‘প্রাপ্য’।
“৫৪ বছর ধরে চলছে তার এই অভিযাত্রা, প্রতিনিয়িত নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করে চলেছেন, সৃষ্টি করছেন নতুন পরিচয়।” ডিলানের ‘দ্য টাইমস দে আর আ-চেইঞ্জিং’ গানটিকে দানিউস তুলনা করেছেন গ্রিক কবি হোমার আর শ্যাফোর সঙ্গে।
“আমরা যদি ৫০০০ বছর পিছনে ফিরে যাই, আমরা হোমার আর শ্যাফোকে পাব। তাদের গীতিকবিতা লেখাই হত গেয়ে শোনানোর জন্য। বব ডিলান একই কাজ করেছেন।”
১৯৪১ সালের ২৪ মে মিনেসোটার ডুলুথে এক ইহুদি পরিবারে রবার্ট অ্যালেন জিমারের জন্ম। পরে ইংরেজ কবি ডিলন টমাসের নাম থেকে বব ডিলান নাম নেন। তার সংগীত ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল ১৯৫৯ সালে মিনেসোটার এক কফি হাউজে। এই শিল্পী, গীতিকার খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছান গত শতকের ষাটের দশকে।
হাতে গিটার আর গলায় ঝোলানো হারমোনিকা হয়ে ওঠে তার ট্রেডমার্ক। সে সময় তার ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’ আর ‘দ্য টাইমস দে আর আ-চেইঞ্জিং’ এর মত গানগুলো পরিণত হয়েছিল যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের গণসঙ্গীতে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের পক্ষে নিউ ইয়র্কে আয়োজিত কনসার্ট ফর বাংলাদেশে জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্যাটারসন, রবিশঙ্করের সঙ্গে ডিলানও ছিলেন; গেয়েছিলেন ‘এ হার্ড রেইন’স আ-গনা ফল’, ‘ব্লোইং ইন দ্য উইন্ড’, ‘জাস্ট লাইক আ ওমেন’সহ কয়েকটি গান।
আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে ডিলানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কারের ৮০ লাখ ক্রোনার।
গত বছর সাহিত্যে নোবেল পান বেলারুশের লেখক, অনুসন্ধানী সাংবাদিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ, যার ‘বহুস্বরের’ গদ্যকে সুইডিশ অ্যাকাডেমি অভিহিত করে ‘সমকালীন যাতনা আর সাহসিকতার সৌধ’ হিসেবে।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।
বব ডিলান একাধারে গায়ক, গীতিকার, লেখক, সুরকার, কবি এবং ডিস্ক জকি যিনি পাঁচ দশক ধরে জনপ্রিয় ধারার সঙ্গীতের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত। বব ডিলনের শ্রেষ্ঠ কাজের মধ্যে অনেকগুলো ১৯৬০ দশকে রচিত হয়েছে। এসময় তিনি আমেরিকান অস্থিরতার প্রতীক বিবেচিত হতেন। তার কিছু গান, যেমন "Blowin' in the Wind" and "The Times They Are a-Changin'",
যুদ্ধবিরোধী জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং ১৯৫৫-১৯৬৮ সালের আমেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তার সর্বশেষ অ্যালবাম, Christmas In The Heart(২০০৯), মুক্তি পেয়েছে । রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন একে পরবর্তীকালে বর্ষসেরা অ্যালবাম হিসেবে সম্মানিত করেছে।
বব ডাইল্যান ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান নামেও পরিচিত। ১৯৫৯ সালে সংগীতে কর্মজীবন শুরু করলেও যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় তার একটি কফি হাউজ রয়েছে। ১৯৬০ সালের পর থেকে সংগীতে খ্যাতি ছড়াতে শুরু করে তার। এ সময় আমেরিকার বিপর্যয় নিয়ে তিনি অনানুষ্ঠানিক ইতিহাসবিদ হয়ে উঠেন।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রকাশিত বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় তার নাম রয়েছে। ২০০৪ সালে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন প্রকাশিত সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ গায়ক তালিকায় দ্য বিটলসের পর বব ডিলান দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক প্রেসিডেন্টশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমও পেয়েছেন ডিলান।
ঢাকা, ১৩ অক্টোবর, (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: