শেরপুর লাইভ: পাহাড়ে মিত্যুর মিছিল। ৪০ দিনে হাতির আক্রমনে নিহত-৪। নির্ঘুম সীমান্তবসী। অসহায় প্রশাসন। হাতির আক্রমনে মিত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে শেরপুর সীমান্তের গারো পাহাড় এলাকায়। সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি জন বসতিতে প্রতি রাতেই আক্রমন চালাচ্ছে বন্য হাতির দল।
এতে মরা পড়ছে সীমান্ত এলকার মানুষ। সেইসাথে ঘর-বাড়ি ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাতির হামলায়। ফলে অভাবী এলাকা হিসেবে পরিচিত পাহাড়িরা দিন দিন ফসল আর ঘর-বাড়ি হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছে দিন দিন।
সর্বশেষ ১০ অক্টোবর সোমবার রাতে বন্য হাতি’র হামলায় ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বকাকূড়া গ্রামের হিরা মারাকের ছেলে বাঁশি রাম সাংমা (৬০) নামে এক আদিবাসী কৃষক মারা গেছে । এসময় আহত হয় দুই জন।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবরুনা ইউনিয়নের ঝোলগাঁও গ্রামে, ২২ ও ২৬ সেপ্টেম্বর ঝিনাইগাতি উপজেলার ছোট গজনী এবং পশ্চিম বাকাকুড়া এলাকায় এসব বন্য হাতি তান্ডব চালিয়ে ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও ধানক্ষেত বিনষ্ট করার পাশপাশি দুদু মিয়া, ললেন কুবী ও কিবিরন বেওয়া নামে তিন জনকে হত্যা করে।
এনিয়ে গত ৪০ দিনে সীমান্তের শ্রীবরর্দী ও ঝিনাইগাতি উপজেলায় হাতির আক্রমনে মারা গেছে ৪ জন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। প্রতিদিন হাতির আক্রমনের ভয়ে পাহাড়ি আদিবাসী-বাঙ্গালিরা রাত কাটাচ্ছে নির্ঘুম। এদিকে প্রশাসনও নিরুপায় হয়ে পড়েছে।
স্থানিয় প্রশাসন হাতি’র হাত থেকে জানমালের ক্ষতি ঠেকাতে সরকারী নানা উদ্দোগ আর পদক্ষেপ গ্রহন করলেও সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার হাতির উপদ্রোপের কারণে ৩ উপজেলার সীমান্ত এলকায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে। পাশপাশি সীমান্তের ঘর-বাড়ি ছেড়েছে শতাধিক পরিবার।
কিন্তু এইসব পরিবারের সরকারী ভাবে আজো কোন পূর্নবাসনের ব্যবস্থা হয়নি। তারা এখন পাহাড় ছেড়ে লোকালয়ে, কেউ খাস জমিতে, কেউ বা আবার আত্মিয়ের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
হাতির আক্রমনে হতা-হত ও ঘর-বাড়ি ক্ষয়-ক্ষতি’র জন্য সরকারী নানা সাহায্য সহযোগীতা প্রদান করা হলেও ভুক্তভোগি এসব পাহাড়িরা এখন আর সাহায্য বা ক্ষতিপুরণ চায় না। তারা চায় হাতি ঠেকানোর স্থায়ী পদক্ষেপ।
ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনি বীটের বন সংরক্ষন কমিটি’র সভাপতি মো. দুলাল মিয়া জানান, দিন দিন হাতির আক্রমন যে ভাবে বাড়ছে তাতে আমাদের পাহাড়ে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী আদিবাসী ও বাঙ্গালিদের ভিটেমাটি এবং ঘর-বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র গিয়ে আবাস গড়তে হবে।
তবে আশার আলোর কথা জানালেন ঝিনাইগাতি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা। তিনি জানান, হাতির আক্রমন থেকে পাহাড়িদের রক্ষা করতে ইতিমধ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। এসব পদক্ষেপের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প আকারে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে হাতি-মানুষের সহাবস্থান এবং তাদের সাথে দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনতে সীমান্তের হাতির উপদ্রোপ এলাকায় সোলার ফেন্সিং, বায়ো ফেন্সিং, হাতি তাড়ানোর কার্যকর ট্রেনিং, হাতি’র মোকাবেলায় সীমান্ত এলাকার মানুষের মাঝে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টর্চলাইট প্রদানসহ নানা পদক্ষেপ। আশাকরি প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে হাতি’র সমস্যা অনেকটা কমে আসবে।
কিন্তু ভুক্তিভোগিরা বলছে, সরকারের সকল পদক্ষেপই বৃথা যাচ্ছে। তাই নতুন করে ভাবতে হবে শেরপুর জেলার ৩ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৩০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে কিভাবে হাতি’র হাত থেকে বাঁচানো যায়।
ঢাকা, ১১ অক্টোবর, (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: