Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ভাষা আন্দোলনের সময় ৭ম শ্রেণির ছাত্রী লাইলী বেগমের শেষ ইচ্ছা

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বার ২০১৮, ২০:১২

লাইভ প্রতিবেদক: মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে পেতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে বের করা মিছিলে গুলি চালায় পাকিস্তানি পুলিশ। আর সেই খবর ঝালকাঠিতে এসে পৌঁছে ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে ঝালকাঠির স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। সেদিনের আন্দোলনে অংশ নেয়া অনেকেই আজ জীবিত নেই। যারা বেঁচে আছেন তাদেরও কেউ খোঁজ নেয় না। এমনই একজন লাইলী বেগম (৭৬)। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

সেই সময়ের সাহসী লাইলী বেগম জানান, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছি। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশও স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু ভাষা সৈনিকের কোনো স্বীকৃতি বা সম্মাননা পাইনি। বয়স অনেক হয়েছে। চলাচল করতেও কষ্ট হয়। যেকোনো সময় দেহ থেকে প্রাণটা বের হয়ে যেতে পারে। তবে মৃত্যুর আগে একটাই ইচ্ছা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার।

অতীদের স্মৃতিচারণ করে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি জানান, পাকিস্তানিদের চক্রান্তে মামলার স্বীকার হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালে ঝালকাঠিতে এসেছিলেন। তিনি ডাক বাংলোতে অবস্থানকালে আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাই। কিছুক্ষণ কথা বলার পর পানি পিপাসার কথা জানান বঙ্গবন্ধু। তখন টিউবয়েল থেকে পানি এনে তাকে পান করাই। তিনি (বঙ্গবন্ধু) যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে আমাদের ভাষা সৈনিকদের জন্য একটা সম্মাননার ব্যবস্থা করে দিতেন। আমিও তার কাছে গিয়ে ঝালকাঠির লাইলী বলে পরিচয় দিলে তিনি আমাকে ঠিকই চিনতেন।

এসময় তিনি আরো জানান, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ঝালকাঠিতে কোনো কলেজ ছিল না, স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরাই সেদিন বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দানের দাবিতে নেমেছিল। শাসক চক্রের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ১৭ ফেব্রুয়ারি স্কুলছাত্রদের নিয়ে ৯ সদস্যের সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে এখানকার স্কুলগুলোতে ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালনের চেষ্টা করা হলেও গ্রেফতারের ভয় দেখানোয় তা সফল হয়নি। কিন্তু এদিন ঢাকায় গুলি বর্ষণের খবর পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে এখানে ছড়িয়ে পড়া মাত্রই উত্তেজিত ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পড়ে।

লাইলী বেগমের ৮ মেয়ে ২ ছেলে। সন্তানদের মধ্যে কারো কোনো ভালো চাকরি না থাকায় কোনোমতে জীবন পার করছেন। তার মনের কষ্ট এখন একটাই, দীর্ঘ ৬৬ বছেরেও কেউ তাদের খোজ নেয়নি। পাননি কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে প্রথম বারের মতো মিছিল বের হয়। মিছিলটি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছলে ছাত্রদের কাছ থেকে ঢাকায় ছাত্র হত্যার খবর পাই। সেদিন আমার নেতৃত্বে ছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়। মিছিলটি উদ্বোধন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে পৌঁছালে সেখানকার শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দেয়।

ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ এবং মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দানের স্বপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে সরকারি বালিকা বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাকে বাসা থেকে পাকিস্তানি মিলিটারীরা ধরে নিয়ে যায়। ঝালকাঠি পৌরসভা সংলগ্ন ডাক বাংলোতে নিয়ে কর্মকর্তাদের সামনে হাজির করে আমাকে প্রশ্নবানে জর্জড়িত করেন। কে কে মিছিলে ছিলো? তাদের বাসা কোথায়? আমি সব জানা সত্তেও বলছিলাম কাউকেই আমি চিনি না। এভাবে তারা দিনের পর দিন আমাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে স্বীকারোক্তির জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। আমার একই কথা ছিলো ‘কাউকেই আমি চিনি না।’

এরপর আমার বিয়ে হয় পুলিশের এক হাবিলদারের সঙ্গে। যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন অতন্দ্রভাবে সরকারি ডিউটি এবং বাকিটা সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ব্যয় করতেন। এ সময় দেশের ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পুলিশের পরিকল্পনা জেনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জানাতেন।’

 

 

ঢাকা, ০৫ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ