Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শিক্ষামন্ত্রী-ভিসিদের বৈঠক: আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি

প্রকাশিত: ৯ আগষ্ট ২০১৮, ০২:২১

লাইভ প্রতিবেদক: বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিমিয় সভায় আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা।

সভায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আতিকুল ইসলাম জানান, গত ৬ আগস্ট নর্থ সাউথ ক্যাম্পাসের সামনে পুলিশ ও বহিরাগতদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত অবস্থায় ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিরাপদে বের করে দেয়া হয়। পরে সংঘর্ষে নর্থ সাউথের কয়েকজন শিক্ষার্থী যোগ দেয়।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কিন্তু রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক না থাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের গুজবের কারণে উপস্থিতি কম ছিল। পরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকার কথা জানানো হলে পরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।

আলোচনা সভায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি আব্দুল মান্নান বলেন, শিক্ষার্থীরা যে কারণেই আন্দোলনে যুক্ত হোক না কেন তাদের সাধারণ ক্ষমা করা দরকার। পাশাপাশি যারা আটক রয়েছে তাদের মুক্তি দিতে শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ জানান তিনি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বেনজির আহমেদ বলেন, সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তবেই যে কোনো সমস্যা সহজেই মোকাবেলা সহজ হবে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো সমস্যায় অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

প্রাইম এশিয়ার ভিসি আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না করে ক্লাস চালু রাখতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ব্যস্ত থাকে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয় তবে আন্দোলন তীব্র হতে পারে। আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও অজ্ঞাতনামা মামলা জুড়ে না দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যুক্ত হতে চাইলেও সঠিক বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে যায়নি। পুলিশের হাতে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তির পাশাপাশি যারা প্রকৃতপক্ষে দোষী তাদের বিচার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইয়াসমিন আরা প্রভা বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী না বুঝেই আন্দোলনে যোগ দেয়। শিক্ষকরা বোঝালে তারা আন্দোলনে যুক্ত হত না। তাই শিক্ষকদের তৎপর থাকার পরার্মশ দেন তিনি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে তা অনেক জটিল বিষয় ছিল, এর মাধ্যমে আমরা শিখেছি। বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছি। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে সুবিধা পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, সব গুজব থেকে শিক্ষকদের বিরত থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা যদি আন্দোলনে যুক্ত হতে চায় তবে তাদের সঠিক বিষয়টি বোঝাতে হবে। আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে সবাই এক হয়ে কাজ করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষমন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসইন, দেশের ১০৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি, পরিচালন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনের ভয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না রাখার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কোনো উসকানিতে যাতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যুক্ত না হতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক ছিল। আমরা তাদের দাবিকে সমর্থন করি। যৌক্তিকভাবে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, দাবি জানিয়েছে, আন্দোলন করে গেছে। এতে করে আমরা অনেক অজানা কিছু জানতে পেরেছি।

অনেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলেন না, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলানো হচ্ছে, ভিআইপিরা আইন অমান্য করছেন, অনেকে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাচ্ছেন। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের যেসব সমস্যা রয়েছে তারা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

আলোচান সভায় নাহিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নতুন সড়ক আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। তাই আর ছাত্রদের রাস্তায় নামার কোনো অবকাশ নেই।

আমরা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। এরপর তারা আর রাস্তায় না নামলেও শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে। তৃতীয় পক্ষ এতে সুবিধা নিচ্ছে। তাই আন্দোলনের ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখবেন না। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। শিক্ষার্থীদের মটিভেট করে তাদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ানো হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি, আমাদের উদ্বেগও বেশি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখনো ব্যবসা করছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এখনো যারা ব্যবসা করে যাচ্ছে তাদের তো ছেড়ে দেয়া হবে না।

শিক্ষার্থীদের মুক্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ক্ষমা করার দায়িত্ব আমাদের নয়, যারা বিনাকারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের জন্য আমরা পাশে রয়েছি। আর যারা সত্যিকারের অপরাধী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিচার করবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে নতুন করে একটি সেন্টার তৈরি করা হবে। যাতে কোনো জরুরি অবস্থায় সকলে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। এটি ইউজিসি ( বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) নিয়ন্ত্রণ করবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। ক্লাস, পরীক্ষা, সংস্কৃতিসহ নানা কাজে ব্যস্ত রাখতে পারলে কোনো শিক্ষার্থী আন্দোলনে যুক্ত হবে না। শুধু বই পড়ে, সিলেবাস দিয়ে মাথা ভর্তি করলেই হবে না। জঙ্গিবাদ, অপরাধ থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে হবে। অভিভাকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

 


ঢাকা, ০৮ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ