Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ১১ই মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

নন-এমপিও শিক্ষকদের আর্তনাদ

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০১৮, ০৪:৪৩

লাইভ প্রতিবেদক: মোস্তাক আহমেদ পেশায় একজন শিক্ষক। নিজের প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তিকরণের দাবিতে দুই সহকর্মীর সঙ্গে ১০শে জুন সিলেট থেকে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। কর্মজীবন শেষ হওয়ার আগে বেতন-ভাতা পেয়ে যেন পরিবারের সবার মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারেন, এই আশা নিয়েই আন্দোলনে নেমেছেন মোস্তাক।

কিন্তু টানা অবস্থান কর্মসুচি ও প্রতীকি অনশন পালন শেষে গত দু’দিন যাবৎ আমরণ অনশন পালন করার পরও মোস্তাক আহমেদের মতো আন্দোলনরত শিক্ষকদের খোঁজ নিতে আসেনি কেউ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের উল্টোপাশে খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ওপর পলিথিন পেতে বসে আন্দোলন করা এই শিক্ষক বলেন, শিক্ষকতা অনেক মহান পেশা। কিন্তু শিক্ষকেরাও তো মানুষ।

এদেরও পেট আছে, সংসার আছে। দফায় দফায় নতুন কাপড় না দিতে পারলেও পরিবারের সদস্যদের মুখে তো কয়টা খাবার তুলে দেয়া আমার কর্তব্য। কিন্তু সেটুকু ঠিকমতো দিতে পারি না। তিনি বলেন, আজ আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া ছাত্ররা সমাজের অনেক বড়-বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

মোটা টাকার মাসোহারার সঙ্গে দামি গাড়ি হাঁকিয়েও চলাফেরা করেন অনেকে। কিন্তু বিদ্যালয়ে পাঠদান শেষে পেটের দায়ে আজও আমাকে কৃষিকাজ করতে হয়। তবুও সংসারে সুখ ফেরেনি। উৎসব-অনুষ্ঠানে সন্তান দুটোর নতুন কাপড়ও কিনে দেয়ার সামর্থ্য থাকে না আমার। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটা এমপিওভুক্ত হতো, তাহলে শেষ কর্মজীবনে একটু সুখের মুখ দেখে যেতে পারতাম।

তিনি বলেন, সরকার অনুমোদন না দিলে তো আর এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। আর যেহেতু সরকার এইসব প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাহলে কেন এগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হবে না। ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে এই দেশে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটা মহৎ কাজ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন তার কাজের জন্য বিশ্বজুড়ে মাদার অফ হিওম্যানিটি’র উপাধি পেয়েছেন তখন তার দেয়া প্রতিশ্রুতির পরও আমাদের সঙ্গে কেন প্রহসন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পড়া-লেখা শেষ করে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় ঢোকার পরও আজ আমাদের নিজেদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে। আর এটা এক বার নয়, এমপিওভুক্তির দাবি নিয়ে আমরা একাধিকবার রাস্তায় নেমেছি। কিন্তু বার-বার আমাদের আশ্বাস দিয়ে ঘরে ফেরানো হয়েছে। এইবার আমরা সরকারকে সময় দিয়ে, পূর্বনির্ধারিত কর্মসুচি দিয়ে, শপথ বাক্য পাঠ করে আমরণ অনশনে নেমেছি। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর ঘরে ফিরব না।

মোস্তাকের মতোই ‘আমরণ অনশন’ লিখে কাপড় মাথায় বেঁধে ও ‘দাবি আদায় না হলে ঘরে ফিরবো না’ লেখা গেঞ্জি গায়ে ২য় দিনের আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছে শতশত বেসরকারি ও ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারী। এর মধ্যেই বসে কর্মসূচি পালন করছিলেন, আধা-পাকা বয়সী একজন শিক্ষক মঞ্জুরুল কবীর মঞ্জু। খুলনা বাগেরহাট থেকে আন্দোলনে যোগ দিতে ১২ই জুন ঢাকা এসেছেন তিনি।

তিনি বলেন, মানুষ বলে শিক্ষকরা না কী মানুষ গড়ার কারিগর। আর এই মানুষ গড়ার কারিগররাই না কী জাতি ও দেশ গড়েন। কিন্তু আজ এই মানুষ গড়ার কারিগরদের অবস্থান হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায়। ফুটপাথেও তাদের বসতে দেয়া হয়নি। পলিথিন পেতে যানবাহন চলাচল করার জায়গায়ই অবস্থান হয়েছে তাদের।

তিনি বলেন, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তার ধুলা সয়ে টানা ১৫ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে অনশনের দু’দিন পার হওয়ার পরও সরকার পক্ষের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি আমাদের।

এদিকে এমপিও না হওয়াই বেতন ভাতার কিছুই কপালে জোটে না। তারপর নিজেদের ন্যায্য দাবি নিয়ে বার বার আন্দোলনে নেমে সহায়-সম্বল যা ছিল তাও শেষ। এ অবস্থায় ঈদে পরিবারের সদস্যদের মুখে ভালোমন্দ খাবার তুলে দেয়া তো দূরের কথা একটা নতুন জামাও দিতে পারিনি তাদের।

ঈদের নামাজটুকুও পড়েছি ঢাকার রাস্তায়। অশ্রুসিক্ত এই শিক্ষক বলেন, আন্দোলনের প্রথম দিকে হোটেলে গোসল করতাম হোটেলেই খাবার খেতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে সব টাকা-পয়সা শেষ। তাই আমরা বাধ্য হয়েই পেটের দায়ে অনশনে নেমেছি।

আর মৃত্যু তো একদিন হবেই। তাই মৃত্যুর আগে যেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারি এই আশায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি ও ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে এমপিওভুক্তির দাবি নিয়ে মঞ্জু, মোস্তাকের মতোই আমরণ অনশন পালন করছেন আরো অনেক ননএপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী। তাদের সবার একই দাবি।

২য় দিনের মতো চলা আমরণ অনশন বিষয়ে গতকাল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ১২ই জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিওর নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান অনুমতি ও স্বীকৃতির সময় আরোপিত শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

২০১৮-১৯ বাজেটেও নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। যার ফলে ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারীরা অত্যন্ত হতাশ ও আশাহত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ বছর যাবৎ পাঁচ হাজারের বেশি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পাঠদান করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। যাদের অনেকেরই আর চাকরির মেয়াদ আছে আর ৫-১০ বছর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সারা দেশে উন্নয়নবঞ্চিত অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করে বেতন-ভাতা না পেয়ে আমরা বার বার রাজপথে নেমে আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের শুধু আশ্বাস দিয়ে বাড়ি ফেরানো হয়েছে। নিজের ন্যায্য পাওনা আজও পাইনি আমরা।

বেতন-ভাতা না পেয়ে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। এমন জীবন আমরা চাই না। বাঁচলে বাঁচার মতো বাঁচবো নতুবা আন্দোলন করে রাজপথে জীবন দেব। তবুও দাবি আদায় ছাড়া রাজপথ পথ ছাড়ব না।

শিক্ষকদের এই নেতা আরো বলেন, আন্দোলনের ২য় দিনে আমাদের চার জন শিক্ষক নতুন করে অসুস্থ হয়ে আশেপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর এই অনশন পালনকালে যদি কোনো শিক্ষকের মৃত্যু ঘটে সেই অপ্রীতিকর ঘটনার দায় সরকাকেই নিতে হবে বলেও জানান তিনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এবার আর ঘরে ফিরব না বলেও জানান তিনি।

 


ঢাকা, ২৭ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ