Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বার ২০১৬, ২১:২৮

লাইভ প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ বহুল আলোচিত একটি বিষয়। রেডিও, টিভি এবং পত্র পত্রিকায় এই চেতনা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলা হচ্ছে। আধিকাংশ ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপব্যাবহার অথবা ভুল ব্যাবহার করা হচ্ছে।

একটি বিশেষ দলের সমথর্করা সেইদলের বিরুধিতাকে স্বাধিনতার বিরুধিতা তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুধিতা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন. আর আমাদের দেশের দালাল মিডিয়া হুক্কাহুয়া সুর তুলে সেটার সমথর্নে প্রচার চালিয়া যাচ্ছে। আরেক শ্রেনীর বাম-রামপন্থী আতেল যারা একটি বড় দলের ঘাড়ের উপর সওয়ার হয়ে দেশে ধর্মহীনতা ও নাস্তিকতার প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করতে চান।

তারা বলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে ধর্মহীনত।তথাকথিত সুশীলরা মনে করে ইসলাম ধর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরস্পর বিরোধী॥ শুধু তাই নয় এই দেশের সিনেমা গুলোতে শুধু দাড়ি টুপি পরা মানুষদের রাজাকার হিসাবে দেখানো হয়! অথচ বাস্তবে রাজাকারদের মাত্র ২ শতাংশ ছিল দাড়িওয়ালা এবং ৯৮শতাংশ রাজাকারের কোন দাড়ি ছিলনা।

১৯৭১ এ কিছু দাড়ি টুপি পরা মানুষ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ছিল তার মানে কিন্তু এই নয় যে দেশের সব মুসলিম মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ছিল। ১৯৭১ এ যদি অধিকাংশ মুসলিম মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী থাকতো তাহলে এই দেশ কোনো দিন স্বাধীন হতো না। ১৯৭১ এ মুক্তি যোদ্ধারা রণাঙ্গণে যাবার আগে আল্লাহর কাছে সালাত আদায়ান্তে মুনাজাত করে রওনা হয়েছেন। সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলি সহস্রাধিক পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন।

বহুল প্রশংসিত সেই বইটির নাম ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’। এ বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ের ইতিহাস। এ চেতনায় শত শত আলেমের অস্ত্র তুলে নেবার রোমাঞ্চকর ইতিবৃত্ত। বইটির প্রকাশনা উৎসবে আমন্ত্রিত দেশের প্রবীণ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন স্পষ্ট বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ইসলামের কোনো বিরোধ নেই।

ঢালাও ভাবে আলেমদের কিংবা টুপি-দাড়ি দেখলেই রাজাকার বলা স্বাধীনতার চেতনা নয়। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ এ ৭ মার্চ যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তাঁর শেষ উক্তি ছিল, ‘এদেশের মানুষকে মুক্ত করেই ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’

এই ‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দের মধ্যেও তাঁর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভরসার চেতনা ফুটে ওঠে। তাঁর বক্তব্য থেকেই বুঝা যায় মুক্তিযুদ্ধ কখনোই ইসলামের বিপক্ষের যুদ্ধ নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় দলটির অনেক নেতাকে বলতে শুনা যায় দাড়ি টুপি পড়া লোক মানেই রাজাকার। উল্লেখ্য" আরবী শব্দ রি'দাকার থেকে মূলত রাজাকার রেজাকার শব্দটির উৎপত্তি। এর অর্থ স্বেচ্ছাসেবক (স্বেচ্ছায় যারা কাজ করেন)। [তথ্যসূত্র: ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, ২০০২,বাংলা একাডেমী - পৃ: ১০২৯।]

একজন মুক্তিযুদ্ধার সন্তান হিসেবে বলতে দ্বিধানেই যে ১৯৭১ সনে যদি বলা হতো আমারা ধর্মহীন সমাজ প্রতিষঠার লক্ষে দেশ স্বাধীন করতে চাই তাহলে একজন লোকও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতো কিনা সন্দেহ। এর বিপরীত সেদিন সমালোচকদের জাবাব দিতে গিয়ে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ প্রধান বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বেতার ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, « ইসলামের বিধান মতে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা আমাদের লক্ষ্য »।

তিনি আরো বলেন ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য লেবেল সর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসূলে করীম (সা.) এর ইসলাম।

যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের সুবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বারবার যারা অন্যায় অত্যাচার শোষণ বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম তাদেরই বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৫ জনই মুসলমান, সে দেশে ইসলামবিরোধী আইন পাসের সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারেন কেবল তারাই যাদের ঈমানই আদতে নাজুক আর ইসলামকে যারা ব্যবহার করেন দুনিয়ার ফায়েদা লাভের জন্য।

অতএব আমরা যারা আল্লাহর মজলুম বান্দাদের জন্য সংগ্রাম করছি,আমরা ইসলামের বিরোধিতা করাতো দূরের কথা বরং ইসলামের বিধান মতে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠারই উমেদার, আর সে ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হলেন তারাই যারা ইসলাম বিপন্নের জিগির তুলে জনগণকে ধোঁকা দিতে চান।’ (মুজিবের রচনা সংগ্রহ, বাংলাদেশ কালচারাল ফোরাম ৮৪-৮৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকৃত অর্থে সেক্যুলার ছিলো কি-না সে-বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের অন্তে সংবিধানে এলেও, প্রস্তুতিতে ও চলন্তিতে ধর্মহীনতাতো দূরের কথা, ধর্মনিরপেক্ষতার কথাও উচ্চারিত হয়নি।

যে ৬-দফা দাবীকে মুক্তির সনদ বিবেচনা করা হয়, সেখানে নেই। ছাত্রদের যে ১১-দফাকে প্রগতির পরাকাষ্ঠা মানা হয়, সেখানে নেই। যে স্বাধীনতার ইশতেহারকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা মনে করা হয়, সেখানেও নেই।

ধর্মনিরপেক্ষতা তাহলে হঠাৎ করে সংবিধানে এলো কীভাবে? এটা যোগ করা হয়েছিল স্বাধিনতার পর ড:কামালের নেতৃত্বে সংবিধান প্রনয়ন কমিটির ভারত সফরের পর।সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা যোগ করার পর যখন ধর্মহীনতা প্রতিষ্ঠার অভিযোগ উঠতে শুরু করলো তখন বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়” এই তত্ত্ব দিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্থ করলেন।

বাংলাদেশে ইসলমিক ফাউণ্ডেশন (সাবেক ইসলামিক একাডেমী) প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে পাকিস্তানে ও আই সি-র সম্মেলনে গিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিমদেশ বলে আখ্যায়িত করলেন এবং বাংলাদেশকে ইসালমি সম্মেলন সংস্থার সদস্যে পরিণত করলেন। তখন থেকেই বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বসভায় অভিষিক্ত হলো।

অনেকের ধারনা বংগবন্ধু বেচে থাকলে টিভিতে দাড়ি, টুপি নিয়ে নেক্কার জনক অনুষঠান প্রচার করা সম্ভব হতনা। শাহরিয়ার কবিররা বলতে পারতনা ‘১৯৭১ সনে ধর্মের বিরুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি’। সুশীল সমাজ পরোক্ষ ভাবে বলতে চান, « ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি পাকিস্তানের জুলুমের বিরুদ্ধে নয়, ইসলামের বিরুদ্ধে »।

নবম দশম শ্রেনির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা বইয়ের ২০২ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে: "সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বলে ঘোষণা করা হয়েছে।বলার অপেক্ষা রাখে না ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।" এখানে ইসলাম এবং স্বাধিনতাকে পরষ্পর বিপরীপ অবস্থানে দাড় করানো হয়েছে এবং ছাত্র ছাত্রীদেরকে একাত্তরের চেতনা সম্পর্কে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি?

প্রতিদিন টিভি অন করলে টকশো এবং খবরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শব্দটি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যায় এবং মনের মাঝে প্রশ্ন জাগে আসলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ? ১৯৭১ সনের ১৭ ই এপ্রিল ঘোষিত হল আমাদের প্রক্লেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স। যেটা আমাদের যুদ্ধের বৈধতা দাবী করলো। সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করলো, কেন আমরা এই যুদ্ধ করছি এবং আমরা যুদ্ধে জিতে কেমন দেশ তৈরি করবো। ১৯৭১এ ব্যরিস্টার আমীরউল ইসলাম একটি স্বাধীনতার ইশতেহার রচনা করেন, যা ১৯৭০ এর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ গণপরিষদ বসিয়ে অনুমোদন করেন , যার ভিত্তিতে মুজিব নগর সরকার গঠিত হয়। সে ঘোষনার অংশ বিশেষ নিম্নরুপ:

''We the elected representives of the people of Bangladesh as honour bound by the mandate given to us by the people of Bangladesh whose will supreme, duly constituted ourselves into a Constituent Assembly, and Having held mutual consultations, and in order to ensure for the people of Bangladesh equality , human dignity and social justice '' [Source : History of Bangladesh : War of Independence ]

 

ঢাকা, ২৫, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ