লাইভ প্রতিবেদক: ‘হায়রে মানুষ, রঙ্গীন ফানুস, দম ফুরাইলেই ঠুস’ গান আর গাইবেন না সব্যচাষী লেখক। চিরতরে তিনি গান ছেড়ে চলে গেছেন ওপারে। না ফেরার দেশে। আলোচিত ও জনপ্রিয় লেখক সৈয়দ শামসুল হক আর নেই। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি.... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন।সোমবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। মঙ্গলবার সেখানেই তিনি মারা যান।
এদিকে, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সৈয়দ হককে কুড়িগ্রাম কলেজের পাশে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ শামসুল হক। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার জন্য তাঁকে 'সব্যসাচী লেখক' বলা হয়ে থাকে। সৈয়দ শামসুল হক ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান।
লন্ডনের রয়াল মার্সডনে হাসপাতালে চার মাস চিকিৎসার পর গত ২ সেপ্টেম্বর সৈয়দ শামসুল হক দেশে ফেরেন। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে তিনি লন্ডনে যান এবং সেখানে পরীক্ষায় তার ক্যানসার ধরা পড়ে। সেখানে তাকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। চিকিৎসায় উন্নতি না হওয়ায় লন্ডনের চিকিৎসকরা সৈয়দ হককে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরামর্শ দিলে লেখক দেশে ফিরে আসেন।
এদিকে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া তাঁর মৃত্যুর খবরে লেখক-বুদ্ধিজীবী ও ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বর্ণাঢ্য জীবন
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সৈয়দ হক কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, কাব্যনাট্য, চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্রের গান – যা লিখেছেন সবকিছুতেই পেয়েছেন জনপ্রিয়তা, সাফল্য। মাত্র ২৯ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান সৈয়দ হক। এখন পর্যন্ত বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ লেখক তিনি।
সৈয়দ হকের লেখালেখির শুরু তাঁর শৈশবেই। ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে লিখে ফেলেন দুই শতাধিক কবিতা। ১৯৫১ সালে ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় ‘উদয়াস্ত’ নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়। সেটাই তার প্রথম ছাপা হওয়া লেখা।
সেই বছরই বাড়ি থেকে পালিয়ে বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই) চলে গিয়েছিলেন তিনি। কাজ করেন পরিচালকের সহকারী হিসেবে। কয়েক বছর পর দেশে ফিরে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ করেননি। পুরোপুরি মনোযোগ দেন লেখালেখিতে।
১৯৫০-এর দশকেই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। এ সময় চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন তিনি। তাঁর লেখা চিত্রনাট্যে নির্মিত হয় ‘সুতরাং’, ‘কাগজের নৌকা’, ‘মাটির পাহাড়’, ‘তোমার আমার’। তাঁর উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়।
সৈয়দ শামসুল হক চিত্রনাট্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের জন্য প্রচুর গান লিখেছেন। তাঁর লেখা বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’, ‘এই যে আকাশ এই যে বাতাস’।
তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘একদা এক রাজ্যে’, ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’, ‘পরানের গহীন ভিতর’, ‘অপর পুরুষ’, ‘অগ্নি ও জলের কবিতা’।
বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’, ‘বারো দিনের জীবন’, ‘তুমি সেই তরবারী’, ‘কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন’, ‘নির্বাসিতা’।
‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নুরলদীনের সারা জীবন’ তাঁর বিখ্যাত কাব্যনাট্য। এ ছাড়া অসংখ্য অনুবাদ এবং শিশুসাহিত্যে নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন সৈয়দ হক।
ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর, (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এএম
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: