Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের কোলে রুমী...

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০১৮, ২২:১২

লাইভ প্রতিবেদক: স্বাধীনতা সে তো এমনিতেই আসেনি। স্বাধীনতা কোনো রুপকথার গল্প হতে পারেনা। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মতো হাজারও জননীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলা।

যুদ্ধের সময় এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ রুমী আম্মা জাহানারা ইমামকে বলেছিলেন ...

রুমী: হয়তো বড় ডিগ্রী নিয়ে এসে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবো কিন্তু বিবেকের ভ্রুকুটির সামনে কখনো মাথা উচুঁ করে দাড়াতে পারবনা। তুমি কি তাই চাও আম্মা?

জাহানারা ইমাম: না তা চাইনে। ঠিক আছে তোর কথাই মেনে নিলাম। দিলাম তোরে দেশের জন্য কোরবানি করে। যা তুই যুদ্ধেই যা। বিনম্র শ্রদ্ধা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও শহীদ রুমীর প্রতি।

এমনি করে হাজারও মায়ের আত্মত্যাগের বিনিময়ে, শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধা বনিতার সর্বস্ব হারানোর নামই বাংলাদেশ। আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। আমরা যারা স্বধীনতর পর জন্মগ্রহণ করেছি তারা হয়তো পরাধীনতার যে যন্ত্রনা, যে জ্বালা তা উপলব্ধি করতে পারব না ঠিকই কিন্তু জাতির বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগের স্বপ্ন তো
বৃথা হতে পারে না।

শাফী ইমাম রুমী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন গেরিলাযোদ্ধা ছিলেন। রুমী শহীদ জননী খ্যাত জাহানারা ইমামের জ্যেষ্ঠ পুত্র। জাহানারা ইমাম রচিত একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থে রুমী অন্যতম প্রধান চরিত্র। পুত্র রুমীর শহীদ হওয়ার জন্য জাহানারা ইমাম শহীদ জননী উপাধী পান। আজ এ মুক্তিযোদ্ধা শাফী ইমাম রুমীর শুভ জন্মদিন।

১৯৫১ সালের ২৯ মার্চ শরীফ ও জাহানারা ইমামের উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রুমীর জন্ম হয় তিনি সদ্য ভূমিষ্ঠ এ শিশু সম্পর্কে তার মাকে বলেছিলেন, ‘এটা ১৯৫১ সাল। ২০ বছর পরে ১৯৭১ সালে এই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে।’

রুমী ঠিকই তার ভবিষ্যৎবাণীর দিকে দ্রুতগতিতে এগুচ্ছিলেন। তিনি ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ১৯৬৮ সালে স্টার মার্কস নিয়ে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এছাড়া বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগেক্লাস করতেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে রুমী ছিলেন তুখোড় তার্কিক। নানান জ্ঞানে তার মস্তিষ্ক ছিল পূর্ণ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, উদ্যমী ও প্রাণবন্ত।

ইতিমধ্যে আমেরিকার ইলিনয় ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হওযার সুযোগ পান রুমী। যোগ্যতার সঙ্গেই তিনি ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেখানে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার পর আদর্শগত কারণে দেশকে যুদ্ধের মধ্যে রেখে তিনি বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পড়তে যাননি।

যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে রুমী ধারাবাহিকভাবে তার মা ও বাবাকে নিজের যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল মাকে অবশেষে রাজি করিয়ে ২ মে রুমী সীমান্ত অতিক্রমের প্রথম প্রয়াস চালান।

কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাকে ফেরত আসতে হয় এবং দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন। তিনি সেক্টর-২ এর অধীনে মেলাঘরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই সেক্টরটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন খালেদ মোশাররফ ও রশিদ হায়দার। প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি ঢাকায় ফেরত আসেন এবং ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দেন। ক্র্যাক প্লাটুন হল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনাকারী একটি সংগঠন।

রুমী ও তার দলের ঢাকায় আসার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন হামলা করা। এ সময় তাকে ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা করতে হয় যার মধ্যে ধানমণ্ডির ১৮ ও ৫ নম্বর রোডের একটি আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য। সেখানে একটি পাকিস্তানি সেনা জিপ তাদের বহনকারী গাড়ির পিছু নিলে তিনি গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেংগে ‘লুক লুক, এ জিপ ইজ ফলোয়িং আস বলে স্টেনগান ব্রাশফায়ার করেন।’

তার গুলিতে পাকিস্তানি জিপের ড্রাইভার নিহত হয় এবং গাড়ি ল্যাম্পপোস্টে যেয়ে ধাক্কা খায়। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা তার গুলিতে মারা যায়। ধানমণ্ডি রোডের অপারেশনের পর রুমী তার সহকর্মীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট তিনি তার নিজের বাড়িতে কাটান এবং এই রাতেই বেশকিছু গেরিলা যোদ্ধার সাথে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন।

পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটি অজ্ঞাত উৎস থেকে তথ্য নিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক যোদ্ধাকে গ্রেফতার করে যার মধ্যে ছিলেন আলতাফ মাহমুদ, আবুল বারাক, আজাদ ও জুয়েল। রুমীর সাথে তার বাবা শরীফ এবং ভাই জামীকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।

কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে রুমী তার পরিবারের অন্য সদস্যদের কোনো কিছু স্বীকার করতে নিষেধ করে, সব দায়ভার নিজে বহন করেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, ‘পাকবাহিনী তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন এবং এর সব দায়দায়িত্ব তিনি নিজেই নিতে চান।’

একই সময়ে ধরা পড়া রুমীর সহযোদ্ধা মাসুদ সাদেক জানান, চরম অত্যাচার সহ্য করেও রুমী কারও নাম প্রকাশ করেনি। দুই দিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালানোর পর পরিবারের অন্য সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া হলেও রুমীকে ছাড়া হয়নি।

ফিরে আসার সময় বাবা শরীফ ইমাম রুমীর কথা জিজ্ঞেস করলে পাকিস্তানি কর্নেল জানায়, রুমী একদিন পরে যাবে, ওর জবানবন্দি নেওয়া শেষ হয়নি। কিন্তু পরের সেই দিনটি আর আসেনি। ৩০ আগস্টের পর রুমী ও তার সহযোদ্ধা বদী এবং চুল্লুকেও আর দেখা যায়নি।

 


ঢাকা, ২৯ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ