Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
এক সপ্তাহে ২০ গরু-ছাগল বাঘের পেটে...

শেরপুর গারো পহাড়ে এবার বাঘ আতংক

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবার ২০২২, ০৪:৪৯

ভারতীয় কেরাকেল প্রজাতীয় বাঘ

শেরপুর লাইভ: শেরপুরের গারো পাহাড়ে হাতির পর এবার বাঘের আক্রমন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে সীমান্তের প্রায় ৫ গ্রামে গরুসহ প্রায় ২০টি ভেড়া ও ছাগল বাঘের পেটে গেছে। ফলে ওইসব গ্রামের মানুষ এখন বাঘ আতংকে রয়েছে। বাঘগুলো দেখতে শেয়ালি রঙের লম্বা প্রায় ৪ ফিট ও উচ্চতা প্রায় ৩ ফিট। এটি ভারতীয় কেরাকেল প্রজাতীয় বাঘ বলে বন বিভাগ সূত্র জানায়।

বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ভারতীয় কেরাকেল প্রজাতির এ বাঘ মেঘালয় রাজ্যে দেখা পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে শেরপুর সীমান্তের গ্রামগুলো সম্প্রতি এ কেরাকেল প্রজাতির বাঘের দেখা মিলেছে। বাঘটি দেখতে হুবহু বেড়ালের মতো। কানগুলো বেশ লম্বা। তবে উচ্চতা ও দৈঘ্য অনেকটা চিতা বাঘের মতোই। বনের ছোট ছোট প্রাণী যেমন ছাগল, ভেড়া, বন মোড়গ, খরগোশ, ইদুরসহ অন্যান্য পাখি শিকার করতে এরা বেশ পটু।

সম্প্রতি শেরপুরের ওইসব গ্রামের বনে প্রকাশ্যে দিনের বেলাতেই ওই বাঘ বনে বাদরে ঘোরাফেরা করছে এবং বিভিন্ন বাড়িতে হামলা দিয়ে ছাগল ও ভেড়া নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। পরবর্তিতে গভীর জঙ্গলে ওই ছাগল ও ভেড়ার নাড়ী-ভুড়ি পড়ে থাকতে দেখছে গ্রামবাসী। হঠাৎ করে এ পাহাড়ে বাঘের আগমনের বিষয়ে স্থানীয় বন বিভাগ বলছে, উজার হওয়া বন ভুমি সম্প্রতি কৃত্তিম বনায়ন ও প্রাকৃতিক ভাবে গভীর বনায়ন হওয়ায় ভারতের মেঘালয় থেকে এ গারো পাহাড়ে হয়তো বাঘের আগমন হয়েছে।

পরবর্তিতে তারা দেশের বনভুমির সাথে বাড়িগুলোর গৃহপালিত গবাদি পশুর উপর হামলা চালাচ্ছে। এ বনে শুধু এ বাঘই নয় লেপাট প্রজাতিরও বাঘের আগমন ঘটেছে বলে সূত্র জানায়। এছাড়া গত এক সপ্তাহ আগে এ বন থেকে একটি অজগর সাপ লোকালয়ে বেড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনতা সেটি ধরে বন বিভাগকে জানালে বন বিভাগ আবার সেই সাপটিকে গভীর জঙ্গলে অবমুক্ত করেন। এর আগে ২০১৬ সালে জেলার শ্রীবর্দী উপজেলায় একটি লেপাট বাঘ লোকালয়ে আসেল ওইসময় স্থানীয় মেয়রসহ ১০ জন কে আহত করে বাঘটি।
বাঘের হামলার শিকার হওয়া একটি ছাগল

বন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে স্বাধীনতা উত্তর সময়ে গভীর জঙ্গল থাকলেও এক শ্রেণির বন দস্যুর কবলে পড়ে স্বাধীনতা পরবর্তিতে ৯০ দশকের দিকে উজার হয়ে যায়। পরবর্তিতে সরকার বন ভুমি রক্ষায় বেশ কিছু উজার বন ভুমি বনায়ন করেন এবং বেশ কিছু এলাকা প্রাকৃতিক ভাবেই গভীয় জঙ্গলে পরিনত হয়। ফলে ভারত থেকে বন্য হাতি এসে আবাস স্থল গড়ে তুলে সীমান্তের গ্রামগুলোর ফসল ও বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে হতা-হত করে। বিনষ্ট করে শত শত মানুষের বাড়িঘর।

ফলে সীমান্তবাসী দীর্ঘদিন থেকেই হাতির আতংকে রয়েছে। সম্প্রতি এক সপ্তাহ ধরে জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকূড়া, পশ্চিম বাকাকূড়া, গান্ধিগাঁও, হালচাটি ও ছোট গজনি গ্রামের পর্যটন কেন্দ্র ‘অবকাশ’ এর আশাপাশে বাঘের আনাগোনা শুরু হয়েছে। ওই সব গ্রামের বনের ভিতর এবং বনের ভিতর দিয়ে বিভিন্ন গ্রামে যাওয়ার রাস্তার উপর ও গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ছাগল-ভেড়ার ঘাড়ে কাঁমড়ে ধরে চম্পট দিচ্ছে।

এদিকে এসব ঘটনা বেশীর ভাগই প্রকাশ্যে দিনের বেলা এবং ছাগল-ভেড়ার মালিকদের সামনেই ঘটছে। আবার অনেক সময় থাবা মেরে ছাগল নিয়ে যাওয়ার সময় ছাগলে মালিক এবং গ্রামবাসীরা হৈচৈ শুরু করে বাঘকে লাঠিসোটা ও দা নিয়ে ধাওয়া করলে আহত ছাগল ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয় বাঘ। হালচাটি গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানায়, তার দুইটি ছাগল বাঘের পেটে গেছে। এছাড়া পাশের গ্রামের একটি গরুর বাছুরকেও ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় লোকজনের ধাওয়ায় বাঘটি পালিয়ে যায়। গত সাত দিনে ওই ৫ গ্রামের কমপক্ষে ২০ টি ছাগল-ভেড়া বাঘের পেটে চলে গেছে।

এদিকে এই বাঘের আক্রমনের ভয়ে গ্রামের স্কুল পড়–য়া শিশুরাও স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। তার এখন দলবদ্ধ ভাবেই জঙ্গল এড়িয়ে স্কুলে যাচ্ছে। বন বিভাগের বন প্রহরি এবং অটোচালক ও স্থানীয় গ্রামবাসী যারা বনের ভিতর ও চলাচল করে তাদের বেশীর ভাগই এ বাঘের সন্মুখিন হয়েছে। তাবে তারা বাঘের আক্রমনের শিকার হয়নি। কিন্তু বেশ সাবধানতা অবলম্বন করে এখন তারা চলাচল করছে।

বন ও বনের আশপাশে বাঘের আক্রমনের বিষয়ে রাংটিয়া ও গজনি বীটের বীট কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ ক্যাম্পাসলাইভকে জানায়, সম্প্রতি গারো পাহাড়ে গভীর জঙ্গল বা বনায়ন হওয়ায় হাতির মতো বাঘেরও আগমন ঘটেছে। তবে আমরা গ্রামবাসীদের সতর্কতার সাথে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছি। প্রয়োজনে আমরা মাইকিং করে প্রচারনা চালাবো যাতে গ্রামবাসী আরো সজাগ থাকে এবং শতর্কতার সাথে চলাফেরা করে।

ঢাকা, ০৫ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআর//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ