Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
শেষ সময়ে নানা অভিযোগ

আমি দায়িত্বে এসে কোনো আত্মীয়-স্বজন নিয়োগ দেইনি- বাকৃবি ভিসি

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৩, ০০:৪২

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান

রায়হান আবিদ ,বাকৃবি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের দায়িত্বগ্রহণের পর আগামী ২৯ মে তাঁর চার বছর পূর্ন হতে যাচ্ছে। ২৪তম উপার্চায হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ২০১৯ সালের ৩০ মে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাকরির বয়সসীমার প্রায় ২ বছর অতিরিক্ত অতিক্রান্ত করেছেন উপাচার্য।


জানা যায়, উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি দিয়ে আসছিলেন বিভিন্ন আশ্বাস। কিন্তু সেসব আশ্বাসের খুব সামান্যই তিনি পূরণ করতে পেরেছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় ঘটা মারামারি এবং অপ্রীতিকর ঘটনার তদন্ত কমিটি হলেও, হয়নি কোনো বিচার। বিচার না হওয়ায় একের পর এক মারধরের ঘটনা ঘটে। যা থেকে রেহাই পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং কর্মচারি। বিচারহীনতার কারণে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছে। প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে।

এছাড়া দায়িত্বের বেশিরভাগ সময় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা দেয় নৈরাজ্য। নিজেদের সুবিধা ও ক্ষমতা বাস্তবায়নে শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা এবং কর্মচারি সংগঠন দুইভাগে বিভক্ত হয়। তাদের মধ্যে তৈরি হয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। তবে এসব বিষয়ে সমঝোতা করতে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেননি বাকৃবি উপাচার্য বলে অভিযোগ করেন ওই সংগঠনের একাধিক নের্তৃবৃন্দ।

বিচারহীনতার কারণে গত ১০ জানুয়ারি শিক্ষককে লাঞ্ছনা এবং মা সহ এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদের বিরুদ্ধে। এসময় অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলামসহ বাকৃবির তিন নারী শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়। এই ঘটনার তদন্ত কমিটি বারবার পুর্নগঠিত হয়েছে কিন্তু বিচার হয় নি।

উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের আশ্বাস দেন তিনি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূল্যায়নে দেশের ৪৬ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাকৃবির অবস্থান ৪৬ তম। র‌্যাংকিং-এ বাকৃবির স্কোর ১০০ এর মধ্য সর্বনিন্ম ১১.৪৭ । বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত এমন অবস্থান কখনোই ছিল না।

করোনা মহামারির প্রকোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাকৃবি উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এর ফলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের এক বছর বা তার বেশি সময় পরে স্নাতক সমাপ্ত করার শঙ্কা করছে।

বাকৃবি শিক্ষার্থীদের কাছে ভোগান্তির আরেক নাম সেমিস্টার ফাইনালের ফরমপূরণ। সেমিস্টার ফাইনালের ফরমপূরণ করতে শিক্ষার্থীদের অনুষদ ভবন, কো-অর্ডিনেটর ভবন, দুইবার কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়, ব্যাংক, হল অফিস ও প্রভোস্টে স্বাক্ষর পুনরায় অনুষদ ভবনে ফরম জমাদানের মাধ্যমে শেষ হয়। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে অনলাইন ভিত্তিক ফরমপূরণ প্রক্রিয়া চালু করার কথা থাকলেও এখনো চালু হয় নি।

দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর দেওয়া বিভিন্ন আশ্বাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নকশা সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত ফটক তৈরির কাজ শুরু হয়নি। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বীমা বাস্তবায়ন হয়নি, শিক্ষার্থীদের সহজে চাকরি পাওয়ার জন্য করতে চেয়েছিলেন জব ফেয়ার কিন্তু সেটিও আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।

শিক্ষার্থীদের উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের কথা থাকলেও সকল আবাসিক হলেই চলছে কচ্ছপগতির ইন্টারনেট, বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাগিং এবং মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস হিসাবে গড়ার কথা বললেও নিয়মিতই চলছে শিক্ষার্থীদের মাদক সেবা, বেড়েছে নিরাপত্তা সংকট।

বাকৃবি গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. পূর্বা ইসলাম বলেন, অফিসার নিয়োগের বাছাইকরণে অস্বচ্ছতা, শিক্ষা সংক্রান্ত অনিয়ম, উপাচার্যের একসঙ্গে দুটি বাসভবন ব্যবহার ও ডিপিপি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন বাকৃবি উপাচার্যসহ প্রশাসনে নিয়োজিত শিক্ষকরা। উপাচার্য হিসেবে তিনি সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থান করার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে থাকেন ক্যাম্পাসের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের তার কার্যালয়ে খুব কম সময় অতিবাহিত করেছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি মাত্র ৭ থেকে ১০ শতাংশ সম্পন্ন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও কাজে না লাগানোর জন্য বাজেট ফেরত চলে যাওয়াই উপাচার্য হিসেবে তার ব্যর্থতার প্রমাণ করে। কিন্তু এখানে করোনার দোহাই দিয়ে বাকৃবিতে কাজ না হলেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঠিকই কাজ হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগকে বেশি প্রশ্রয় এবং গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।


উপাচার্য ড. লুৎফুল হাসান ৭ বছর পর সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট নিয়ে বাকৃবিতে আয়োজন করেন ৮ম সমাবর্তন। তবে রাষ্ট্রপতি না আসায় সমাবর্তন হয় প্রশ্নবিদ্ধ।

ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা দূরকরণে তিনি ২ টি হলের কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া সংস্কার এবং বর্ধিতও করেছেন কিছু হল। দীর্ঘদিন পর ৪ অনুষদের শিক্ষা কারিকুলামে উন্নয়ন করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি দূর করতে তিনি মৌসুমি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়।

এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে বাকৃবি উপাচার্য বলেন, ৪ বছরে কোনো মৌসুমি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মৌসুমি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আর্থিক ক্ষতি হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা দূর করার জন্যে রোজী জামাল হল এবং শেখ হাসিনা হলের কাজ চলমান রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্যে খুব শীঘ্রই একনেক একটি নতুন বাজেট পাস করবে। ৪ অনুষদের শিক্ষা কারিকুলামে বিশ্ব মানের পরিবর্তন এনেছি। আমি আমার কোনো আত্মীয়স্বজন নিয়োগ দেইনি।

দ্বিতীয় মেয়াদে আসার বিষয়ে তাকে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই, সংশ্লিষ্টরা যাকে ভালো মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দিবেন।


ঢাকা, ২২ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//আরএ//এমএফ

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ