জাককানইবি লাইভ: বিজ্ঞপ্তির নিয়ম ভঙ্গ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মো. নকিবুল হাসান খানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তদন্তসহ প্রতিবেদন চেয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
এর আগে "বিশেষ যোগ্যতায় অযোগ্য হয়েও নিয়োগ পেয়েছিলেন নকিব!" শিরোনামে গত ০৪ জুলাই (সোমবার) ক্যাম্পাসলাইভ২৪ডটকমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো। যেখানে বিশেষ যোগ্যতারও নিয়ম ভঙ্গ করে শিক্ষক নিয়োগের তথ্য উঠে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে আবেদন করতে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ স্কেলে) এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থাকতে হবে সিজিপিএ ৩.৫০ (৪.০০ স্কেলে)। তবে বিশেষ যোগ্যতা থাকলে যেকোন একটি শর্তের ক্ষেত্রে আংশিক শিথিল রাখা যাবে। সেই সঙ্গে পুরো শিক্ষা জীবনে ৩য় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকরিপ্রত্যাশীদের থেকে আবেদন আহ্বান করেছিলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত প্রত্যেকটি শর্ত ভেঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পান মো. নকিবুল হাসান খান। শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তির বাইরে গিয়েও ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি নিয়োগ পেয়েছেন এই শিক্ষক।
২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ জিপিএ ৫.০০ স্কেলে ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন নকিবুল হাসান। এরপর ২০০৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ পান ৩.৫০, যার চতুর্থ বিষয় ছাড়া ফলাফল দাঁড়ায় জিপিএ ৩.২০ তে। এই ফলাফলের পরও বিজ্ঞপ্তির নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ না থাকলেও পেয়েছেন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ।
আবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এইচএসসি পাশ করলেও গণিত ব্যতীত অন্য বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কোর্সে পেয়েছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী। অন্যদিকে ইংরেজীতে পেয়েছিলেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী। রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রেও নকিবুল হাসানের উল্লেখিত একাডেমিক তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির নজরে এসেছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কাছে চিঠি লিখেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। চিঠিটি চলতি মাসের ১৭ জুলাই ইস্যু করা হয়েছে। যার স্মারক নম্বর ৩৭.০১.০০০০.১৫১.৩২.০০৭.২০.৯৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর ইউজিসির চিঠি পাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন
ইউজিসি পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগ) মোহাম্মদ জামিনুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক/প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞাপনের শর্ত ভঙ্গ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক পদে মো. নকিবুল হাসান খানকে নিয়োগ দেওয়াসহ চাকরিতে রাখার বিষয়টি দৈনিক পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের দৃষ্টিতে এসেছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক বিস্তারিত কাগজপত্র ও প্রতিবেদনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতামত দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিশনে প্রেরণের জন্যে আদিষ্ট হয়ে অনুরোধ জানানো হলো।’
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘দ্রুতই একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে সেখান থেকে পাওয়া প্রতিবেদন ইউজিসিতে পাঠানো হবে। আমি অনিয়ম দুর্নীতির প্রশ্নে আপসহীন। পক্ষপাতহীন তদন্ত রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রেরণ করবে। আমার সময়ে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি করা হবে না। আর আগের কারও অনিয়ম দুর্নীতির দায়ও নেব না।’
এদিকে ইউজিসির এমন চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে বলেও জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা। তবে মুঠোফোনে মেসেজ, কল দিয়েও মন্তব্য পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মোঃ নকিবুল হাসান খানের।
এর আগে একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে কক্ষে তালা লাগিয়ে ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আটকে রাখার ঘটনায় আলোচনায় আসেন এই শিক্ষক। তারপরই তার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের বিষয়টি জানাজানি হয়।
ঢাকা, ২৫ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেজে//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: