Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিশেষ যোগ্যতায় অযোগ্য হয়েও নিয়োগ পেয়েছিলেন নকিব!

প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০২২, ০১:০০

মোঃ নকিবুল হাসান খান

জাককানইবি লাইভ: ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকুরী প্রত্যাশীদের থেকে আবেদন আহ্বান করেছিলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শিক্ষক পদে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ স্কেলে) এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সিজিপিএ ৩.৫০ (৪.০০ স্কেলে) থাকতে হবে।

তবে বিশেষ যোগ্যতা থাকলে যেকোন একটি শর্তের ক্ষেত্রে আংশিক শিথিল রাখা যাবে। সেই সঙ্গে পুরো শিক্ষা জীবনে ৩য় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে।

তবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত প্রত্যেকটি শর্ত ভেঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পান মোঃ নকিবুল হাসান খান। ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

জিপিএ ৫.০০ স্কেলে চতুর্থ বিষয় ছাড়া ৩.২০ পেয়ে পাশ করা নকিবুল হাসান ভেঙেছেন প্রায় প্রত্যেকটি শর্ত। তিনি ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ পান ৩.৫০। যার অর্থ চতুর্থ বিষয় ছাড়া তার গড় ফলাফল দাঁড়ায় জিপিএ ৩.২০। এ ফলাফলে বিজ্ঞপ্তির নিয়মানুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করারই সুযোগ না থাকলেও প্রভাষক পদে নিয়োগ পান নকিবুল হাসান। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে তার উল্লিখিত অ্যাকাডেমিক তথ্যের সত্যতা মিলেছে।

এছাড়াও নিয়োগ আবেদনের ফরমেও করেছেন তথ্য গোপন। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, এভাবে বিজ্ঞপ্তির শর্ত না মানলে তো পরীক্ষায় অংশ নিতেই পারার কথা নয়। সেই জায়গায় এত তথ্য গোপন রাখাটি শিক্ষক হিসেবে নৈতিকতার বিপর্যয় বলেই মনে করি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেরই এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, যাকে শিক্ষক হিসেবে চিনি, শিক্ষক হওয়ার কতটুকু যোগ্য তিনি? প্রশ্ন থেকেই যায়।

সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আশরাফ আলীর বিভাগের অফিস কক্ষে তালা দিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় আলোচনায় আসে বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক মো. নকিবুল হাসান খানের নাম। তারপরই তার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের বিষয়টি জানাজানি হয়।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম এবং অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবীবের মাধ্যমেই এই নিয়োগ পেয়েছিলেন মোঃ নকিবুল হাসান খান।

বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিয়োগ প্রদানের বিষয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম বলেন, আমার এগুলো মনে নেই। যা তথ্য রয়েছে সংরক্ষিত রেজিস্ট্রার দপ্তরে সে অনুযায়ীই কাজ হয়েছে। দায়িত্ব পালনের সময় শেষের পর থেকে আমার আর কোন দায়িত্ব নেই। যা তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে সেভাবেই হয়েছে নিয়োগ। একই সঙ্গে নিয়োগ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে মন্তব্য করেছেন এহসান হাবীব। এছাড়াও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি সাবেক দায়িত্ব পালন করা রেজিস্ট্রার ফজলুল কাদের চৌধুরী।

নকিবুল হাসান খান ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র।

অভিযোগ রয়েছে, তার সরাসরি এক শিক্ষকের সম্পৃক্ততাও ছিল নিয়োগ বোর্ডে এক্সপার্ট হিসেবে। তিনি হলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম। এ নিয়োগের বিষয়ে যোগাযোগ করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি এই অধ্যাপকের।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটে থাকলে নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ নেই। আর এই নিয়োগের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই পূর্বের এই তথ্য নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।

নকিবুল হাসানের একাডেমিক ফলাফলের তথ্যের বিষয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটির প্রধান ড. আশরাফ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, গত আপগ্রেডেশন সভায় নকিবুল হাসান খানের একাডেমিক রেজাল্টের অসঙ্গতি দেখতে পেয়েছি। এর আগে তা আমার জানা ছিলো না।

নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বে তো অনেক কিছুই হয়েছে। সেটি নিয়ে আমি বলতে চাইনা। তবে আমার দায়িত্বের সময়ে এমন করে নিয়মের বাইরে গিয়ে কোন নিয়োগ তো দূরের কথা, কোন কাজই করা হবে না। এরকম নিয়োগ হয়ে থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে কাম্য নয়।

এদিকে বিশেষ যোগ্যতায় নিয়োগ পাওয়া মোঃ নকিবুল হাসান খানের মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য প্রদান করেননি তিনি। একাধিকবার ফোন করে মন্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই ফোন কেটে দেন এই শিক্ষক।

ঢাকা, ০৪ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেজে//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ