রায়হান আবিদ, বাকৃবি: একজন পুষ্পিতা। আরেকজন ফারুক আলম সিদ্দিকী। এ দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু তাদের অজেয় উদ্যাম। দুজনই বেশ সাহসি। দুরন্ত-দুর্বার। আসলেই তারা স্বপ্নবাজ। নিজেদের নিয়ে দুরের স্বপ্ন বুনেন তারা। মনে করেন তারা তাদের স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে সামনে যাবেন। নিজের সফলতা ডেকে আনবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) হুইল চেয়ারে বসে পরীক্ষা দেন টাঙ্গাইলের পুষ্পিতা চৌধুরি ও শেরপুরের ফারুক আলম সিদ্দিকী নামের দুজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী।
শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ফারুক আলম সিদ্দিকী। শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি থেকে মাধ্যমিক ও শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। তারও একই স্বপ্ন। তিনি বড় কিছু হতে চান। সামনে যেতে চান সিড়ি বেয়ে। যত কঠিন হোক পথচলা সামনে যেতেই হবে তাকে। এমনটিই জানালেন তিনি।
অন্যদিকে পুষ্পিতা টাঙ্গাইলের সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহিলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। ছাত্রী হিসেবে বেশ ভাল। শান্ত স্বাভাবের মিস্টি মেয়ে। কথা বলেন মেপে মেপে।
বাকৃবি কেন্দ্রে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ‘ঘ’ ইউনিটের ঢাবির ভর্র্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। আজ শনিবার (১১ জুন) বাকৃবির বিভিন্ন অনুষদীয় ভবনে এই ভর্র্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তার পরীক্ষা ভালই হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১১টায় বাকৃবির বিভিন্ন অনুষদীয় কক্ষে অনুষ্ঠিত মোট ৪১২১ জনের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩৮১০ জন শিক্ষার্থী। কেন্দ্রে উপস্থিতির হার ছিল ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এদিকে পরীক্ষার সময় হল পরিদর্শন করেন বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ ঢাবির প্রতিনিধি দল।
হল পরিদর্শন শেষে পরীক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজ চতুর্থ দিনের মতো ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে প্রতিনিধি দলটি এসেছেন তারা ভর্তি পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য।
এদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে চায় পুষ্পিতা । দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে এই স্বপ্ন দেখছেন পুষ্পিতার বাবা তুষার কান্তি চৌধুরী।
পরীক্ষা শেষে ভর্তিচ্ছু আরেকজন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ফারুক আলম সিদ্দিকী ক্যাম্পাসলাইভকে জানালেন আমি আশাবাদী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে খুবই। মিস করতে চাইনা। শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি থেকে মাধ্যমিক ও শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি।
ফারুক আলম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। পরীক্ষা হলে শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক ছিলেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি নিজে লিখতে পারেন না। তার কলেজ পড়ুয়া ভাই তাকে পরীক্ষায় লিখতে সাহায্য করেন। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ার সুযোগ পাবেন বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলতি মাসের ১৭ তারিখে বাকৃবিতে অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা, ১১ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: