Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

আধিপত্য বিস্তার: বাকৃবির হল ছাত্রলীগের দুই নেত্রীর দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২২, ০৭:১৮

বেগম রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের দুই নেত্রী- তানজিনা শিকদার প্রিয়া ও ইসরাত জাহান রিজা

বাকৃবি লাইভ: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বেগম রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের দুই নেত্রী আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হলের কক্ষ দখল করা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বাক-বিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর ফলে হলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যহত হচ্ছে। এছাড়াও ওই দুই নেত্রী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় সংগঠিত আন্দোলন ও অবরোধে হলের ১ম বর্ষের ছাত্রীদের জোর করে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বেগম রোকেয়া হল সূত্রে জানা যায়, ভিযোগযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ইসরাত জাহান রিজা ও তানজিনা শিকদার প্রিয়া। রিজা বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদের সমর্থক। অন্যদিকে প্রিয়া বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের সমর্থক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাকৃবির বেগম রোকেয়া হলে একটি মূল ভবন ও একটি বর্ধিতাংশ ভবন রয়েছে। মূল ভবনটি ছাত্রলীগ নেত্রী প্রিয়ার দখলে। অপরদিকে বর্ধিতাংশ ভবনটি ছাত্রলীগ নেত্রী রিজার দখলে। দু’জন ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সমর্থক হওয়ায় দুজনই চায় পুরো হলে নিজের একক আধিপত্য বিস্তার করতে। যার ফলে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ওই দু’জন নেত্রী বিভিন্ন সময় হলে আধিপত্য বিস্তার ও হল নিজের দখলে আনার চেষ্টা করে।

গত বুধবার (০১ জুন) রিজা ওই হলের বর্ধিতাংশ ভবন থেকে মূল ভবনের একটি কক্ষে দুইজন ছাত্রীকে প্রভোস্টের অনুমতিক্রমে তুলে দিতে চাইলে আরেক গ্রুপের নেত্রী তানজিনা শিকদার প্রিয়া এতে বাধা প্রদান করে। এর প্রতিবাদে রিজা ও তার কয়েকজন সমর্থক বর্ধিতাংশ ভবনে থাকা ১ম বর্ষের ছাত্রীদের ডেকে এনে হলের সামনে রাত দশটা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে বসে থাকে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসে তাদের রাস্তা থেকে তুলে দিয়ে হলে পাঠিয়ে দেয়।

এর আগে গত ১০ মে ছাত্রলীগ নেত্রী রিজার বিরুদ্ধের তালা ভেঙ্গে মূল ভবনের ৩০৩ নং কক্ষ জোরপূর্বক দখল এবং ওই কক্ষে থাকা সুরাইয়া আকতার আঁখি নামের এক শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিবাদে ওইদিন মধ্যরাত পর্যন্ত ওই কক্ষের আবাসিক ছাত্রীসহ প্রায় ২০ জন সাধারণ ছাত্রী হলের বাইরে অবস্থান নেয় এবং রাতভর আন্দোলন করে বলে জানা যায়। যার নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপের নেত্রী তানজিনা শিকদার প্রিয়া।

এদিকে দুই নেত্রীর বিভিন্ন সময়ে রাতে-মধ্যরাতে হলের বাইরে অবস্থান এবং রাস্তা আটকিয়ে অবরোধ এসব বিষয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হলের প্রভোস্টের নির্দেশ দুই নেত্রীর কেউই মানতে রাজি নন। হলের কক্ষে ছাত্রীদের সিট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টা প্রভোস্টের অনুমতি অনুযায়ী চলার কথা থাকলেও তা মানছেন না ওই দুই নেত্রী। প্রভোস্টকে উপেক্ষা করে ওই নেত্রী নিজের মর্জি অনুযায়ী হল পরিচালনার চেষ্টা করছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী ইসরাত জাহান রিজা ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। হলের বর্ধিতাংশ ভবন থেকে মূল ভবনে কোনো সাধারণ ছাত্রীকে উঠতে দিচ্ছে না তানজিনা শিকদার প্রিয়া ও তার সমর্থক। সে সবসময় মূল ভবন নিজের দখলে রাখতে চায়। প্রভোস্ট স্যার মূল ভবনে বর্ধিতাংশ ভবনের ছাত্রী উঠানোর অনুমতি দিলেও সে তা অস্বীকার করেছে এবং নিজের ইচ্ছামতো ছাত্রী সেখানে তুলবে বলে জানিয়েছে। আর গত বুধবার কোনো সাধারণ ছাত্রীকে জোর করে আন্দোলনে আনা হয়নি। নিজ ইচ্ছায় এবং মূল ভবনে যেতে না দেওয়ার প্রতিবাদেই বর্ধিতাংশ ভবনের ছাত্রীরা আন্দোলনে নেমেছে। আমি তাদের সমর্থন দিয়েছি।

ছাত্রলীগের আরেক অভিযুক্ত নেত্রী তানজিনা শিকদার প্রিয়া ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমি কখনই অরাজনৈতিক বা প্রথম বর্ষের মেয়েদের জোর করে আন্দোলনে বসাইনি। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’টি পক্ষ আছে এবং দুই পক্ষের রাজনীতি একই হলে আছে সেজন্য একসাথে থাকলে বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি হতেই পারে। এজন্য আমি হলের বর্ধিতাংশ ভবন থেকে রাজনীতি করে এরকম কোনো ছাত্রীকে মূল ভবনে তুলতে বাধা দিয়েছি। তবে সাধারণ যেকোনো ছাত্রী মূল ভবনে উঠলে আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই। গতকাল রিজার দুইজন ছাত্রলীগ কর্মী মূল ভবনে উঠতে চেয়েছে বলেই আমি বাধা দিয়েছি।

এ বিষয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ১০ মে ওই ঘটনার কারণেই দুই নেত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ তৈরী হয়েছে। তবে আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিষয়টি হল প্রভোস্টকে সমাধানের জন্য বলেছি। পরবর্তীতে এরকম ঝামেলা হলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, হলে সিট বন্টনের বিষয়টি সম্পূর্ণ ওই হলের প্রভোস্ট স্যারের অধীনে। ছাত্রলীগের কেউ হলে সিট বন্টন নিয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। বেগম রোকেয়া হলে দুই নেত্রীর যে ঝামেলা হচ্ছে, এখানে গ্রুপিংয়ের কোনো বিষয় নেই। এটি একান্তই তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সমস্যা থাকার কারণে হচ্ছে। বার বার এরকম ঝামেলা হলে ছাত্রলীগ এর দায়ভার নেবে না।

এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, সিট নিয়ে হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশৃঙ্খলার কারণে সিট বন্টন আপাতত বন্ধ রয়েছে। ১০ মে এর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে যার প্রতিবেদন জমা হলেই মেধাক্রম অনুযায়ী আমরা সিট বন্টন করবো। হলে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়, পরবর্তীতে সে বিষয়টি দেখা হবে।

ঢাকা, ০৫ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআর//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ