বাকৃবি লাইভ: প্রচন্ড মানসিক অসুস্থতা থেকে একসময় শরীরে বাসা বাঁধে টাইফয়েড। আর তাতেই কেড়ে নিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক শিক্ষার্থীর প্রাণ। বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নিজস্ব বাড়িতে আকস্মিক মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবা আমিন অনন্যার।
হাবিবা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ওই হলের মূল ভবনের ৩১৩ নম্বর রুমে থাকতেন। তাঁর বাসা ঢাকার মিরপুর-১ রোডে দারুস সালাম থানার পাশে অবস্থিত। পরিবারের তিন বোনের মধ্যে বড় হাবিবা।
হাবিবার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রমজান মাসের শেষের দিকে প্রচন্ড মানসিক অসুস্থতায় ভুগতে থাকে হাবিবা। এরপর ক্যাম্পাসে থাকাকালীন সময়ে গত ১৩ মে টাইফয়েডের লক্ষণ দেখা যায়। পরের দিন হাবিবার বাবা এসে তাকে হল থেকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে ১৭ মে তাকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করানো হলে টাইফয়েড ধরা পড়ে। আজ সকালে ফজরের নামাজের পর হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে হাবিবা। পরে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মারা যান তিনি।
এদিকে তার মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর খবর শুনে তার সহপাঠী বেগম রোকেয়া হলের সুরাইয়া আঁখি নামের এক শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হাবিবার সহপাঠী রাফিউল ইসলাম বলেন, 'হাবিবার আকস্মিক মৃত্যু আমাদের সকলের মাঝে বিষন্নতা ছড়িয়ে দিয়েছে। হাবিবা আমার সহপাঠী ছিলো। আমরা বিগত তিন বছর ধরে একসাথে পড়াশোনা করেছি। হাবিবা অত্যন্ত নম্র -ভদ্র ও আন্তরিক মানসিকতার মেয়ে ছিলো। হাবিবাকে হারিয়ে আমিসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলেই শোকাহত।'
হাবিবার হলের শিক্ষার্থীরা জানান, হাবিবা প্রায় মাসখানেক ধরে মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিল। সে বেশকিছুদিন ধরে হলের ডায়নিংয়ের খাবার খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল। সে কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। ডায়নিংয়ে খাবারে বিষ মেশানো থাকতে পারে এই ভয়ে সে ডায়নিংয়ের খাবার খেতে চাইত না। এমনকি সে তার কক্ষের আশেপাশের ছাত্রীদের গিয়ে বলত, 'আমার অনেক ভয় লাগে। আমার যদি কোনো কিছু হয়ে যায় তোমরা আমার পাশে থেকো।' তবে কি কারণে এই ভয়, সবাই এটা জানতে চাইলে বিষয়টি গোপন রাখেন হাবিবা।
হাবিবার সহপাঠীরা বলেন, মানসিক সমস্যায় থাকার কারণে হাবিবা ঠিকমত ক্লাসে যেত না। কয়েকটি পরীক্ষাও দেয়নি সে। এ ধরনের সমস্যা দেখার পর তাঁর পরিবারকে বিষয়টি জানায় তার সহপাঠীরা। পরে তাঁর বাবা এসে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি নিজেই অসুস্থতার কারণে মৃত্যুর খবর শোনার পর তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে আমি ওই হলের হাউজ টিউটরদের খোঁজখবর নিতে বলেছি। আমি শিঘ্রই নিজে মেয়েটির বাবার সাথে কথা বলব।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমি মৃত্যুর খবরটি শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এক ছাত্রীর আকষ্মিক মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মর্মাহত ও গভীর শোকাহত।'
ঢাকা, ১৮ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এএন//এআর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: