Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

মেডিকেলে সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চিত যে কারণে

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৪:২৫

মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন আব্দুর রহমান

নওগাঁ লাইভ: মেধার স্বাক্ষর রাখলেন ঠিকই। কিন্তু তা বাস্তবায়ন নিয়ে বিপাকে আছেন সেই মেধাবী মুখ। তিনি এখন দিশেহারা। মা-বাবার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবেন তিনি। এখন সেই বাবা-মার মুখে আর হাসি নেই। ডাক্তারী পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে পুরো পরিবার। মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আব্দুর রহমানের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তার চিকিৎসক হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। ছেলের মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে মন খারাপ কৃষক আব্দুস সালামের। কোন হৃদয়বান এগিয়ে আসলেই কেবল আব্দুর রহমানের ডাক্তারী পড়া হবে। অন্যতায় স্বপ্ন কেবল স্বপ্ন হয়েই থাকবে।

জানা গেছে, আব্দুর রহমান চলতি বছর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আগামী ২৭ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যে তাকে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থ লাগবে তা জোগান দেওয়ার সামর্থ্য রহমানের দরিদ্র বাবার নেই।

সাপাহার উপজেলার সীমান্তঘেঁষা পাতাড়ি গ্রামের সন্তান আব্দুর রহমান। বাবা আব্দুস সালাম একজন কৃষক ও মা সামেদা বেগম গৃহিনী। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া দেড় বিঘা জমির মালিক আব্দুস সালাম। এই জমিতে চাষাবাদ করে চলে পাঁচ সদস্যের পরিবার। আব্দুর রহমানরা দুই ভাই ও এক বোন। তিনি ভাই-বোনদের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় ভাই হাফেজ আবু রায়হান। তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। আর ছোট বোন রহিমা খাতুন এবার এসএসসি দেবে।

ছোটবেলা থেকেই মেধাবী আব্দুর রহমান। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন বাবা আব্দুস সালামও। সাপাহার উপজেলার আল হেলাল ইসলামী একাডেমি অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৭ সালে জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি, একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২০ সালে মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন রহমান। এরপর রাজশাহী নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

মেডিকেলে চান্স পাওয়া আব্দুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবো। আমাকে নিয়ে বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন। পরিবারে অভাব থাকার পরও বাবা তা বুঝতে দেননি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশুনা শুরু করি। অর্থ সংকটে কোচিংয়ে ভর্তি হতে পারিনি। তবে রাজশাহীর একটি কোচিংয়ে শুধু পরীক্ষা দিতাম। আল্লাহর রহমতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছি।

তিনি বলেন, আগামী ২৭ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যে ভর্তির সময় দেওয়া হয়েছে। কত টাকা লাগবে তা এখনো জানানো হয়নি। তারপরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো লাগবে। একসঙ্গে এতগুলো টাকা দেওয়ার সামর্থ্য পরিবারের নেই। অর্থ সংকটে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি।

ছেলে আব্দুর রহমান মেডিকেলে চান্স পাওয়া নিয়ে শুকরিয়া জানিয়ে বাবা আব্দুস সালাম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অনেক কষ্ট করে তিন ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছি। ছেলেকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। আল্লাহ ছেলেকে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। আর সে সুযোগকে এখন কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি হতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা আমার সাধ্যের বাইরে। এতগুলো টাকা আমার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, সমাজে অনেক হৃদয়বান ব্যক্তি আছেন। কেউ যদি একটু সহযোগিতার হাত বাড়ান তাহলে আমার ছেলের মেডিকেল পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।

সাপাহার আল হেলাল ইসলামী একাডেমি অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর আলম বলেন, আব্দুর রহমান মেধাবী ছাত্র। এ প্রতিষ্ঠান থেকে সে কৃতিত্বে সঙ্গে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। বর্তমানে সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তার এ সাফল্যে আমরা গর্বিত। তার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো। সে একজন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে এমন প্রত্যাশা করি।

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, এরইমধ্যে আব্দুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও তাকে সহযোগিতা করা হবে। তবে কীভাবে সহযোগিতা করলে তার জন্য সুবিধা হয় তার বাবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঢাকা, ২৪ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম) //এমএফ

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ