Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

গুজরাট ফাইলস: গোপন বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০১৮, ০৪:৩১

রানা: ২০১০ এর গরমকাল নাগাদ আমি সাংবাদিকতাকে নতুন করে চিনছিলাম। এমনিতে আমি নিজেকে একজন খুব সাধারণ, পরিশ্রমী, মাঝারি মানের রিপোর্টার মনে করতাম, যার কাছে থাকার মধ্যে ছিল পুরনো আমলের একজন জার্নালিস্ট বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিছু মূল্যবোধের সমষ্টি। কিন্তু এই সময় নাগাদ, আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম এমন এক সন্ধিক্ষণের মধ্যে, আমি প্রার্থনা করি আর কাউকে সেই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে না হয়।

কিছুদিনের মেডিকেল লিভ নেবার পর আমি তখন সদ্য তেহেলকায় আবার কাজকর্ম শুরু করেছি। শহরের সেরা ডাক্তাররা আমার অসুখ ধরতে পারেন নি। আমি তখন সদ্য নক্সাল অধ্যুষিত গড়চিরোলি থেকে ফিরেছি। সেখানে এমন কিছু ঘটেছিল যা আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক অধ্যায়। আমার অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু, শাহিদ আজমির হত্যা।

অপরাধ আইনের একজন তুখোড় বিশেষজ্ঞ, আজমি, আমার জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে এসেছিল। যেদিন সে মারা যায়, সেদিন সন্ধ্যেবেলায় আমার ওর সাথে দেখা করবার ছিল, কিছু উপজাতি এবং বুদ্ধিজীবিকে নকশাল বলে দাগিয়ে দিয়েছিল রাষ্ট্র এবং তাদের জেলে পচতে হচ্ছিল, সেই ব্যাপারে আলোচনা করতে যাবার জন্য।

কিন্তু ভাগ্যের লিখন অন্য রকমের ছিল। আমার ভাইঝির উপরোধে আমি সেদিন ঘরেই থেকে গিয়েছিলাম, তার সপ্তম জন্মদিন ছিল সেদিন। আমার ফোনে অনেকগুলো মিসড কল আর মেসেজ এসে পড়ে ছিল, “শাহিদের কী হয়েছে” আমি জানি কিনা জানতে চেয়ে, আমি সেগুলো অনেক পরে দেখেছিলাম।

বাকি খবর আমি জানতে পারি উপর্যুপরি আসা বন্ধুদের ফোন কল আর নিউজ চ্যানেলের ব্রেকিং স্টোরির মাধ্যমে। শাহিদকে ওর অফিসে গুলি করে মারে কিছু অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ী, কারণ সে “অ্যান্টি ন্যাশনাল”দের হয়ে কেস লড়ছিল।

শাহিদের সওয়ালেই সম্প্রতি ৭/১১-তে মুম্বাই ট্রেন ব্লাস্টের ঘটনায় আটক নিরপরাধ লোকেরা ছাড়া পায়। তার মৃত্যুর পরে মুম্বাই হাইকোর্ট ২৬/১-র মামলায় আটক থাকা দুজন আরোপীকেও মুক্তি দেয়। জনতার চোখে শাহিদের মৃত্যু আজ পর্যন্ত একটা রহস্য হয়েই আছে, যার জট খোলা যায় নি।

কাউকে হারানোর বেদনা সইয়ে নেবার অনেক রকমের রাস্তা হয়। হয় খুব কাঁদো, বিলাপ করো, তারপরে জীবনের পথে এগিয়ে যাও। অথবা পালাও, পালিয়ে সান্ত্বনা খোঁজো অন্যকিছুতে, নিজের কাজকর্মে। আমি দ্বিতীয়টা বেছে নিয়েছিলাম। শাহিদের মৃত্যুর তিনদিন পরে, আমি নাগপুর যাচ্ছিলাম, তখনও জানতাম না যে জন্য যাচ্ছি তা আমার সাংবাদিকতার কেরিয়ারের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্টোরির জন্ম দেবে।

স্টোরিটা ছিল কয়েকজন অন্ত্যজ জাতের ছাত্রকে নকশাল সন্দেহে গ্রেফতার করা নিয়ে। তাদের বিরুদ্ধে যা সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করা হয়েছিল তা পড়লে হাসি পাবে। তাদের কাছে পাওয়া গেছিল ভগত সিং আর চন্দ্রশেখর আজাদের লেখা লিটারেচার। আমার মনে হচ্ছিল, বন্ধুর ঋণ শোধ করার এই হয় তো রাস্তা, কারণ শাহিদ মারা গেছিল ঠিক এই ধরণের কেস লড়তে গিয়েই, মনে হচ্ছিল, এই কেস লড়ার মধ্যে দিয়ে আমি ওর স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে পারব। কিন্তু ভাগ্যে অন্য কিছু লেখা ছিল আমার। আমাকে শিগগিরই বাড়ি ফিরে আসতে হল এক অবর্ণনীয় সমস্যা নিয়ে, যার নাম পরে জানা গেল, ডিপ্রেশন।

জানা গেল, আমার বাবা-মা পাগলের মত আমার বিভিন্ন রকমের টেস্ট করাবার পর – ব্রঙ্কোস্কোপি থেকে এমআরআই। আরেকজন ডাক্তার বললেন, যক্ষ্মার চিকিৎসা শুরু করতে কিন্তু তখনই ভাগ্যক্রমে আমি সাউথ বম্বে হসপিটালের একজন নামকরা ফিজিসিস্টের কাছে গিয়ে পৌঁছই।

ডক্টর চিটনিস আমার সমস্ত রিপোর্ট দেখে আমাকে কটা প্রশ্ন করেছিলেন। তার পরে, একটা গভীর শ্বাস নিয়ে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কী নিয়ে কষ্ট পাচ্ছো?” মনে হচ্ছিল যেন অনেকদিনের ঘুম ভেঙে আমি জেগে উঠলাম। “জানি না ডক্টর, সবসময়ে আমার নিজেকে খুব পরিশ্রান্ত আর দুর্বল লাগে, বুঝতে পারছি না আমার কী হয়েছে।”

মুখে একটা হালকা হাসি ঝুলিয়ে তিনি বলেছিলেন, “এই পুতু-পুতু ব্যাপারটা থেকে বেরিয়ে এসো, নিজের সমস্যাকে এই সব ব্লাড টেস্ট রিপোর্টের মধ্যে দিয়ে বিশাল করে দেখার চেষ্টাটা ছাড়ো, তুমি একদম ঠিক আছো। কাজে যোগ দাও, সেটাই তোমার ওষুধ। বাকি সব অসুখ তোমার মনে।”

“এটা কি হাইপোকন্ড্রিয়া?” আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। নিজেই নিজের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে এই টার্মটা আমি ইন্টারনেট ঘেঁটে সদ্য শিখেছিলাম। ডক্টর চিটনিস সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “না, তুমি স্রেফ অলস হয়ে যাচ্ছো আর নিজের দায়িত্ব থেকে পালাবার চেষ্টা করছো।”

পরের কয়েকদিন ধরে আমি ডক্টর চিটনিসের উপদেশগুলো হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করতে থাকলাম। সেই সব অলস দিনগুলোতে মা আমার প্রধান সহায় হলেন। আম্মা, আমি মা-কে এই নামেই ডাকি, আমার এক বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে উঠলেন। আম্মা কখনও আধুনিক স্কুলে যান নি, আব্বাই ছিলেন তাঁর শিক্ষক। তিনি বললেন, তিনি আমার মধ্যে দিয়ে তাঁর বাস্তব-না-হয়ে-ওঠা স্বপ্নগুলোকে রূপ দিতে চান।

আমি বিদ্রোহী হলে তিনি ঝগড়া করতেন, এবং ধীরে ধীরে বাড়ির সবাইকে এই বাদানুবাদে যুক্ত করে নিতেন। সেদিন আমায় কফি বানিয়ে দেবার সময়ে আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, “তা হলে তুই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছিস?”

 

চলবেই...

ঢাকা, ০৪ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ