Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০
teletalk.com.bd
thecitybank.com

৪৪ বছরেও ইবি শিক্ষার্থীদের নানান আক্ষেপ

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বার ২০২২, ২৩:১৪

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ফাইল ছবি

আবির হোসেন, ইবি: স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে যথাক্রমে ২২ ও ২৪ কিলোমিটার দূরে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৭৫ একরের অনিন্দ্য সুন্দর এই ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চরাই-উৎরাই পেরিয়ে ৪৪তম বর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) ৪৪তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। গেলো চার দশকে ইবির রয়েছে অসংখ্য গৌরমমন্ডিত অর্জন। একইসাথে শত প্রাপ্তির ভীড়ে বেশকিছু সমস্যাও রয়েছে। প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ আবাসিক সুবিধা পাননি শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ক্যাম্পাস লাইভ২৪.কম। ৪৪তম বর্ষে পদার্পণে ইবি শিক্ষার্থীদের নানান আক্ষেপের কথা তুলে ধরছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস লাইভ২৪.কমের ইবি প্রতিনিধি আবির হোসেন।

বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহানা ইবাদ রিয়া বলেন, ‘স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ৪৩টি বছর পার করে ৪৪বছরে পদার্পণ করার পরও প্রশাসনিক নথিপত্রগুলো এখনও কাগজের পাতায় বন্দি। প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ণ আবাসিকতার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি এই পূর্ণ আবাসিকতার পরিচয় লাভে ব্যর্থ হয়েছে। আর যতটুকু আবাসিক ব্যবস্থা আছে তাতে খুব একটা সুব্যবস্থা আছে বলে জোর দাবি জানানো যায় না। এছাড়াও সেশন জটের ভয়াল থাবায় মুখ থুবড়ে পড়ছে শিক্ষার্থীদের নবীন সুতোয় বোনা স্বপ্নগুলো। শুধুমাত্র অগণিত আলোর ঝলকানিতে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ আলোকিত না হয়ে আলোকিত হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ ও শৃঙ্খলা এবং অবশ্যই প্রসারিত হোক আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ফাইল ছবি

লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুনতাকিম রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছর পেরিয়ে ৪৪ এ পা দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারি বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। দীর্ঘ এ পথচলায় প্রাপ্তির খাতায় যেমন যুক্ত হয়েছে নানা অর্জন, তেমনি ছোট নয় অপ্রাপ্তির পাতাও।

প্রতিষ্ঠার চার দশক পেরিয়ে এখনো নিশ্চিত হয়নি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সিকিভাগ আবাসন ব্যবস্থা। সমাবর্তনের সংখ্যা ৪-এ আটকে গেছে। সমাবর্তন নিয়ে সাবেক ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থীদের কন্ঠেই হতাশার ছাপ, সকলের বক্তব্য ৫ম সমাবর্তন এখন সময়ের দাবী। চার দশকের অধিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ, বিভাগ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও কাক্সিক্ষত শিক্ষার মান নিশ্চিত হয়নি। শিক্ষার অন্যতম অংশ গবেষণায় নেই উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান। একইসাথে বিভিন্ন বিভাগ এখনো সেশনজট নামক অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর ডিজিটাল সেন্টার বন্ধ হয়ে আছে, নেই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে ফটোকপির সুব্যবস্থাও। নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভেরিফায়েড সোসাল মিডিয়া প্লাটফর্ম, হলগুলোতে ইন্টারনেট সেবার মান অত্যন্ত হতাশাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খাবারের মান যাচ্ছেতাই। অন্যদিকে ইবির চিকিৎসা কেন্দ্র নিয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীদের বিস্তর অভিযোগ। তাই প্রতিষ্ঠার ৪৪তম বর্ষে একজন গর্বিত ইবিয়ান হিসেবে চাই অতিদ্রুতই পূর্ণতা পাক অপূর্ণ এই ক্ষতসব। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান ঘুচে যাক।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ফাইল ছবি

ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হুমায়রা আঞ্জুম বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৭৫ একরের বিশাল আয়তনের ইবির আজ ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তবে প্রতিষ্ঠার এতগুলো বছর পরেও প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির লক্ষণীয় অসামঞ্জস্যতা থেকেই গেছে। প্রতিবছর যে স্বপ্ন লালন করে ইবি নতুন নতুন বিভাগ খুলে চলেছে তা শুধু স্বপ্ন হয়েই থেকে যাচ্ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, শিক্ষক রাজনীতি, অপরিকল্পিত বিভাগ রোডম্যাপ, অনভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ, প্রশাসনের গাফিলতি, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি, ক্লাসরুম স্বল্পতা, এক ফ্যাকাল্টিতে অন্য অপ্রাসঙ্গিক বিভাগের সংযোজন, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থচিন্তা না করা, এক বিভাগের প্রতি অন্য বিভাগের ছাত্র থেকে শিক্ষকমহল পর্যন্ত হিংসাত্মক মনোভাব প্রকাশ, ছাত্র রাজনীতি, হলের খাবার থেকে শুরু করে আবাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত নিম্নমানের। পরিবহন সমস্যা, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ স্বল্পতা, মফস্বল এলাকা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা এবং নিজেদের মেধা প্রকাশের ক্ষেত্র হতে বঞ্চিত হচ্ছে। বারংবার অভিযোগ, দাবী, আন্দোলনের পরেও প্রশাসন নির্বীকার। প্রাপ্তির থেকে আক্ষেপের জায়গা অনেক বেশি প্রতিটি ইবিয়ান এবং সচেতন শিক্ষকমন্ডলীর।

এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আমাদের যে একেবারে কোনো সংকট নেই এটা আমি বলবো না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রান্তিক পর্যায়ে অবস্থিত হওয়ায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। তবুও আমরা সংকটগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

ঢাকা, ২১ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ