আবির হোসেন, ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ৭ লাখ টাকারও বেশি মূল্যের দুইটি বিশুদ্ধ পানির প্ল্যান্ট অকেজো হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এটা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। প্রকৌশল অফিস বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিষয়টি সমাধান করা হবে।
প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫ বছর আগে ক্যাম্পাসের অনুষদ ভবন ও ফলিত বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে দুইটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে প্ল্যান্ট দুইটি একেবারে অকেজো হয়ে যাওয়ায় এই সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
২০১৭ সালে ক্যাম্পাসের অনুষদ ভবন ও ফলিত বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে বিশুদ্ধ পানির প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এতে ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। পরবর্তী বছরে পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় আরো এক লক্ষাধিক টাকা। পরিচর্যা ও মেরামতের অভাবে কল দুইটি বন্ধ রয়েছে। তিন মাস অন্তর কমপক্ষে একবার প্ল্যান্টগুলোর পরিচর্যা করতে হয়। কিন্তু করোনার কারনে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় কল দুইটি নষ্ট হয়ে পড়ে। করোনা মহামারীর পরে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে আসে। এসময় পানির প্ল্যান্ট দুইটি মেরামত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে আবারো এগুলো বিকল হয়ে যায়। বিগত ছয় মাস যাবত প্ল্যান্টগুলো সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ে আছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পানির প্ল্যান্টগুলো ব্যবহার না করায় অপরিষ্কার পরিবেশে অপরিচর্যায় পড়ে আছে সাতলক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র। পানির ট্যাবগুলো ভাঙা, নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ময়লা আবর্জনায় ভরপুর, মরিচা পড়ে লোহার যন্ত্রপাতিগুলো প্রায় ব্যবহারের অননুপোযোগী হয়ে গিয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নেই নিরাপদ খাবার পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এমতাবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে আর্সেনিকযুক্ত পানিই পান করছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা দূরে হলেও ওই প্ল্যান্ট থেকে পানি সংগ্রহ করতেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে কর্পতৃক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী আল-আমিন ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পানির প্লান্টটি নষ্ট থাকায় শিক্ষার্থীরা নিরাপদ পানির উৎস থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। ভবনের নিচতলায় হওয়াতে ভবনের ছয়টি বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা এবং ক্যাম্পাসের অনেকে সহজেই নিরাপদ পানি পেত। কিন্তু প্রায় দীর্ঘ আট-নয় মাস ধরে প্লান্টটি অকার্যকর থাকায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না উপরন্তু কর্তৃপক্ষের অযত্নে প্লান্টটিতে মরিচা ধরে অচল হওয়ার উপক্রম।’
সাদ্দাম হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, ‘এমনিতেই হলে বিশুদ্ধ পানির সংকট। চারতলা থেকে নিচে আসতে হয় এক বোতল পানির জন্য। বিশুদ্ধ পানির প্লান্টগুলো ঠিক থাকলে একটু কষ্ট হলেও আমরা সেখান থেকে পানি নিয়ে আসতাম। কিন্তু এগুলো দীর্ঘদিন নষ্ট থাকার কারণে আমরা সেই সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানের বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মালেক মিয়া ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘করোনার ছুটিতে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় প্ল্যান্টগুলোতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলো মেরামত করা হয়েছিল। এগুলো দেখাশোনা করার পর্যাপ্ত লোক না থাকার কারণে পরবর্তীতে আবারো এগুলো বিকল হয়েছে। আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবগত করেছি। খুব দ্রুতই এগুলো মেরামত করা হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মুন্সী সহিদ উদ্দীন মো. তারেক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমরা এই কাজটির জন্য ফাইল প্রশাসনের নিকট পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কোন কোম্পানির সাথে কাজ করবো, সেটা উল্লেখ না থাকায় কর্তৃপক্ষ ফাইলগুলো ফেরত পাঠায়। পরে তথ্যগুলো পুনরায় লিপিবদ্ধ করে আবারো প্রসাশনের নিকট পাঠিয়েছি এবং খুব দ্রুতই কাজটি শেষ করার চেষ্টা করব।’
ঢাকা, ২৬ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: