
ইবি লাইভ: ‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কেন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি কতটা সফল?’ এমন প্রশ্ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ড. পরেশ চন্দ্রবর্মনের। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ২ টার দিকে তিনি তার ফেসবুক আইডিতে এমন প্রশ্ন ও তার বিশ্লেষণধর্মী একটি লেখা পোস্ট করেন।
তিনি লেখেন, ‘উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশাধিকার বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি একটি প্রতিযোগীতা। বাংলাদেশের পাবলিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা, কৃষি, সাধারণ ইত্যাদি) আসন সংখ্যা যেহেতু উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থীর (প্রায় ১২/১৩ লাখ) তুলনায় খবই কম তাই এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিমিত্তে যোগ্যতা যাচাইয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া বিকল্প নেই।
‘ভর্তি পরীক্ষা কেন? এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে কেন উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশাধিকার নয়?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি লেখেন, ‘আসন সংখ্যা সীমিত, সার্বিক বিষয়ে অধিকতর যোগ্যদেরই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে আবেগ, স্থিতিশীলতা/ধৈর্য, বিচক্ষণতা ও বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ ইত্যাদির মানদণ্ডতা যাচাইয়ের নিমিত্তে ভর্তি পরীক্ষা একটি প্রক্রিয়া। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই বিষয়গুলো অনেক সময় একত্রে ঘটে না। উদাহরণস্বরূপ বিভিন্ন যোগ্যতা দিয়েই বিশ্বের ফিফা ভুক্ত সদস্য দেশগুলো ফুটবল খেলে, সে অনুযায়ী ফিফা কর্তৃক একটি র্যাংকিং করা হয়। চারবছর পর পর র্যাংকিং এর ১ নং দলকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান ঘোষণা করে পুরস্কার দিলেই তো হয়ে যায়, বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের প্রয়োজন আছি কি? অনেক যোগ্যের মধ্যে সেরা যোগ্যদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া হিসাবে ভর্তি পরীক্ষাকে গণ্য করা হয়। সারা বিশ্বেই উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশের নিমিত্তে বিভিন্ন নামে ও রূপে ভর্তি পরীক্ষা একটি স্বীকৃত প্রক্রিয়া।’
তার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল ‘বাংলাদেশে সমন্বিত/গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আর্থিক, যাতায়াতসহ অন্যান্য ভোগান্তি নিরসনে কতটা সফল হয়েছে?’ এর উত্তরে তিনি লেখেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে বিশেষায়িত সমরূপ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে (যেগুলোতে বৈচিত্রতা নাই যেমন মেডিক্যাল, প্রকৌশল ও কৃষি) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ভোগান্তির শাখায় বেশ খানিকটা সফল বলেই প্রতিয়মান হয়েছে। যদিও এই ভোগান্তির মূলে কোন ভুমিকা নেই। আর যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৈচিত্রময় যেমন GST গুচ্ছ, এক্ষেত্রে গুচ্ছ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার কিছু দুর্বলতার কারণে কিছু বিক্ষোভ/অসন্তোষ ও জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে প্রতিয়মান হয়েছে।’
ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে পরেশ চন্দ্রবর্মন তার পোস্টে লেখেন, ‘ভোগান্তির মূল উৎস কিভাবে নিরসন বা কমানো যায় সেখানে আমাদের পরিকল্পনা করে কার্য সম্পাদন করা। বাংলাদেশে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আর্থিক ও যাতায়াত বা থাকার বিষয়ে অপচয় ও ভোগান্তির মূল উৎস হল, উচ্চ শিক্ষায় প্রায় ৫০ হাজার আসনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করা ১২/১৩ লাখ শিক্ষার্থীকে মেস/বাসা ভাড়া করে থেকে কোচিং সেন্টারে উচ্চ ফি দিয়ে ৪/৫ মাস কোচিং ভোগান্তি । আমরা যদি Higher Education Entrance Examination (HEEE) নামে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য গ্রুপের জন্য আলাদা আলাদা) উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আয়োজন করে একটি ফলাফল প্রকাশ করতে পারি। ফলাফলে শর্তারোপ করা থাকবে যে, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করলেই বা নির্দিষ্ট জিপিএ অর্জন করলেই কেবল এই ফলাফল প্রযোজ্য হবে। এই ফলাফলের ভিত্তিতে ৫০ হাজার আসনের জন্য প্রায় দেড় লাখ অধিকতর যোগ্য শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করি তাহলে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থীর কোচিং ভোগান্তির নিমিত্তে অভিভাবকের আর্থিক অপচয়সহ অন্যান্য ভোগান্তি কমিয়ে আনা সম্ভব।’
এরপর এই দেড় লাখ ভর্তিচ্ছুকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব শর্তারোপ বা নমিনাল টেস্টের মাধ্যমে ভর্তি করা হলে ভর্তি প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে। ফলে বৈচিত্রময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির দীর্ঘসূত্রতা ও অন্যান্য জটিলতা নিরসন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে, সোমবার (২৯ আগস্ট) GST গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে স্বেচ্ছাচারীতার বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান প্রফেসর ড. পরেশ চন্দ্রবর্মন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরাল চত্ত্বরের সকাল ১১ টায় তিনি একক প্রতীকী প্রতিবাদ জানান।
ঢাকা, ৩১ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এএইচ//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: